ঢাকাশনিবার , ১১ নভেম্বর ২০২৩
  1. অনান্য
  2. অপরাধ ও আইন
  3. অভিবাসীদের নির্মম জীবন
  4. অর্থনীতি
  5. আত্মসাৎ
  6. আন্তর্জাতিক
  7. ইতিহাস
  8. উদ্যোক্তা
  9. এশিয়া
  10. কৃষি
  11. ক্যাম্পাস
  12. খেলাধুলা
  13. গণমাধ্যম
  14. গল্প ক‌বিতা
  15. চট্টগ্রাম বিভাগ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ক্ষমা করে দেওয়া মুমিনের উত্তম আখলাক

নিজস্ব প্রতিবেদক
নভেম্বর ১১, ২০২৩ ৬:২৭ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

মানব জীবনের শান্তি ও সফলতার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছতে যে সকল গুণ ও বৈশিষ্ট্য অত্যাধিক প্রভাব বিস্তার করে থাকে তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ক্ষমা, মার্জনা ও সহনশীলতার গুণ। অন্যের দোষ-ত্রুটি বা অনিয়মের কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে কিংবা কষ্ট পেলে উদার মনে প্রশস্ত হৃদয় তাকে ক্ষমা করে দেওয়া। শক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও শাস্তি বা প্রতিশোধ মূলক কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া এবং উক্ত ব্যক্তির আচরণকে মূর্খচিত মনে করে এড়িয়ে যাওয়ার নাম ক্ষমাও সহনশীলতা। যাকে বলা হয়- অন্যায়ের প্রতিশোধ না নেওয়া। এবং অন্যায়কে উপেক্ষা করা । যেন দেখেও না দেখা, শুনেও না শোনা, জেনেও না জানা। আমরা জানি, জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে উপেক্ষা করা উচিত নয়। বরং ক্ষেত্র বিশেষ তা জুলুম বটে। জবাবে বলবো, প্রশ্ন আপন অবস্থায় যথার্থ। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তো উচিত তাতে তো সন্দেহ নেই। সুতরাং এখানে অনেক ক্ষেত্রকেই বোঝানো হয়েছে। সর্ব ক্ষেত্রকে নয়। এক্ষেত্রে একটি মূলনীতি হচ্ছে, কোন গুন বা বৈশিষ্ট্যতার কার্যতা নিয়ে যখন আলোচনা করা হয় তখন প্রযোজ্য ক্ষেত্রের শর্তটি সাধারণভাবে উহ্য থাকে। তা নতুন করে উল্লেখ করার প্রয়োজন হয় না।যাহোক! মানব জীবনে এমন অগণিত অনেক গুণ ও বৈশিষ্ট্য আছে যা আমাদের চর্চা ও আলোচনা- সমালোচনা অনেক জরুরী।

আল্লাহ তাআলা ক্ষমা ও সহনশীলতা বিষয়ে কুরআনুল কারীমে নানাভাবে তার বান্দাদের উৎসাহিত ও উদযাপিত করেছেন। মহাগ্রন্থ কোরআনুল কারীমে আল্লাহ তাআলা ক্ষমা প্রাপ্ত জান্নাতি মানুষের গুণ ও আমল প্রসঙ্গে বলেন- যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল উভয় আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, ক্রোধ হজম (নিয়ন্ত্রণ) করে, এবং মানুষের দোষ-ত্রুটি ক্ষমা করে (তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও জান্নাত)। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা এমন নেক্কারদের পছন্দ করেন। (সূরা ইমরান : ১৩৪)। সবর ও ক্ষমা এমন বিষয় যা অতি কাম্য। আর তার পুরস্কারও অনেক বড়। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে উচ্চাভিলাসী মুমিনের জন্য তা অতি আবশ্যক। মুমিনের বৈশিষ্ট্য হওয়া চাই এমন যে, তারা আখেরাতের বিষয়ে উচ্চাভিলাসী হবে। ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা ও দুর্বলতা কখনোই উচ্চাভিলাসীতার পথে বাধা হবে না। কারণ মুমিনের সর্বোত্ত বিশ্বাস ও আস্থা যে সুখ-দুখ, হাসি-খুশি, ভালো-মন্দ সবকিছুই সমাধান আল্লাহর পক্ষ থেকেই হয়। ব্যক্তি শুধু চেষ্টা করে। আর তার ফলাফল আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে। এক কথায় মুমিনের উচ্চাভিলাশীর উপাদান নিজস্ব ক্ষমতা নয়। বরং আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়াই ভরসা। অপর এক আয়াতে মুমিনের গুণ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন- যখনই (ব্যক্তিগত কোন বিষয়ে কারো অন্যায়ের প্রতি) ক্রোধ দেখা দেয়, তখনই তারা ক্ষমার নীতি অবলম্বন করে । (সূরা শুরা : ৩৭)।

কুরআনুল কারিমে ক্ষমা বিষয়ক এক বিস্ময়কর ঘটনা : সূরা নূরের শুরুর কয়েকটি আয়াতের প্রেক্ষাপট উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা এর জীবনের এক মর্মান্তিক ও মহাসৌভাগ্যর ঘটনা। যা সিরাত গ্রন্থে ইফকের (অপবাদ) ঘটনা নামে প্রসিদ্ধ।ঘটনাটি একদিকে ছিল মর্মান্তিক। কারণ, আম্মাজানের মতো পূতপবিত্র সতী নারীর প্রতি তোহমত (অপবাদ) আরোপ। অপরদিকে ছিল মহাসৌভাগ্যের। কারণ, উক্ত অপরাধী মুনাফিকদের জবাবে ও আম্মাজানের পূতপবিত্রতার ঘোষণায় স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা আয়াত নাযিল করেছেন। আম্মাজান বলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল আল্লাহ পাক ওহীর মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লামকে সঠিকতা জানিয়ে দিবেন। তবে কোরআনের আয়াতের মাধ্যমে অবগত করবেন এটা ছিল ধারণা অতীত।

যাহোক! পরে যখন আল্লাহ তাআলা ওহীর মাধ্যমে সত্যতা সকলের সামনে উন্মোচিত করলেন। তখন অপবাদকারীদের মধ্যে একজন ছিল আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর নিকটতম আত্মীয় ‘মিফতাহ’ যাকে নিয়মিত আবুবকর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু আর্থিক সাহায্য সহযোগিতা করতেন। কিন্তু সে মোনাফেকদের অপপ্রচারে প্রভাবিত হয়ে সেও অপবাদ দেয়। পরে সত্য উম্মোচিত হওয়ার পর তিনি লজ্জিত হয়ে আল্লাহর কাছে তওবা করেন। কিন্তু তবুও ছিল আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু এর কাছে তা অসহনীয় ও বড়ই দুঃখের। তাই তিনি পরবর্তীতে তার প্রতি করা আর্থিক সাহায্য বন্ধ করে দেন এবং ওয়াদা করেন যে আর কখনো তাকে সাহায্য সহযোগিতা করবেন না। এ প্রেক্ষাপটেই আল্লাহ তায়ালা আয়াত নাযিল করেন : ‘তোমাদের মধ্যে যারা উচ্চমর্যাদা ও আর্থিক প্রাচুর্যের অধিকারী, তারা যেন কসম না খায় যে, তারা আত্নীয়-স্ব জনকে, অভাবগ্রস্তকে এবং আল্লাহর পথে হিজরতকারীদেরকে কিছুই দেবে না। তাদের ক্ষমা করা উচিত এবং দোষক্রটি উপেক্ষা করা উচিত। তোমরা কি কামনা কর না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়।’ (সুরা নুর : ২২)। আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে ক্ষমা করে দেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করার আগে মানুষের প্রতি উদার হতে, দয়া দেখাতে নসিহত পেশ করেছেন। সম্পদশালী ব্যক্তিদের প্রতি এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন যে, তারা যেন তাদের অধীনস্ত, গরিব কিংবা আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে যারা অভাবগ্রস্ত তাদের কোনো কিছু না দেয়ার ব্যাপারে কসম না করে।

এ আয়াতটি শুনে হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু অনেক বড় মনের পরিচয় দিয়েছেন। নিজের মর্যাদা নিয়ে গেছেন অনেক উচ্চতায়। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই বলে উঠেছেন-‘হ্যাঁ’, আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই চাই আমার রব আমাকে ক্ষমা করুন।’ তার তিনি মিসতাহ’র প্রতি আর্থিক সাহায্য পুনরায় বহাল করে নেন এবং বলেন- ‘এ সাহায্য কোনোদিন বন্ধ হবে না।’ (বুখারি শরীফ, তাফসিরে কুরতুবি)উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মুসলিম উম্মাহ ও বিশ্বমানবতার সবাইকে নিকটাত্মীয়, গরিব-অসহায়দের প্রতি উদারতা কিংবা ক্ষমা করা সফলতার জন্য নিজেদের গুণ বানিয়ে নেওয়া অত্যাবশ্যকীয়। আল্লাহ আমাদের সকলকে তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসার তাওফিক দান করুন। আল্লাহর ক্ষমা লাভে নিজেদের তৈরি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল অপরাজিতবাংলা ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন oporajitobangla24@yahoo.com ঠিকানায়।