‘ঘোষণা দিয়েই বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে সরকার’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। মুন্সীগঞ্জে জেলা বিএনপির সমাবেশে পুলিশের হামলার প্রতিবাদে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
রিজভী বলেন, বাংলাদেশ এখন বধ্যভূমি। আওয়ামী দুঃশাসন এখন ভয়ংকর রুপ ধারণ করেছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা করা যেন তাদের খেলায় পরিণত হয়েছে। এই খেলার কথা তারা কয়েকদিন আগেই ঘোষণা দিয়েছিল। এই খেলার পরিণতি এখন দেশব্যাপী দেখা যাচ্ছে। সরকারের নির্যাতনের মাত্রা দেখে মনে হচ্ছে এরা যেন প্রতিনিয়ত বিএনপি নেতাকর্মীদের বুক চিরে রক্তপান করবে।
রিজভী বলেন, আজকেই (বুধবার) তথ্যমন্ত্রী বলেছেন ‘বিএনপি’র সব সমাবেশ প্রতিহত করা হবে।’ এর আগে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বিএনপি’র কর্মসূচি প্রতিহতের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও শাসকদলের ক্যাডারদের বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালাতে লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। সুতরাং ঘোষণা দিয়েই বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে সরকার।
রিজভী লিখিত বক্তব্যে বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নেতাকর্মীদেরকে হত্যা ও জখমের প্রতিবাদে কেন্দ্রের পূর্ব ঘোষিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের লক্ষ্যে আজ বিকেলে মুন্সিগঞ্জ শহরের মুক্তারপুরে সদর উপজেলা বিএনপি’র সমাবেশে জনগণ ও নেতাকর্মীরা জমায়েত হলে বিনা উস্কানিতে পুলিশ হামলা চালিয়ে ও নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করে শতাধিক নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করেছে। আহতদের মধ্যে বিএনপি নেতা শাওন, যুবদল নেতা জাহাঙ্গীর, ছাত্রদল নেতা তারিক, বিএনপি কর্মী শিপন, তপন, রুবেল, সোহেল, হাফিজুল, হাসান গুলিবিদ্ধ হয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। গুরুতর আহতদের মধ্যে অনেককেই বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, পুলিশের এই নির্মম হামলায় সাংবাদিকরাও রেহাই পাননি। এই কর্মসূচি ছিল অসহায় ও বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কর্মসূচি। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির ফলে জনগণ ভয়াবহ দূর্বিষহ অবস্থার মধ্যে নিপতিত হয়েছে। সুতরাং জনগণের দাবির প্রতি সংহতি জানাতেই বিএনপির কর্মসূচির ওপর সরকারের পেটোয়া বাহিনী ক্ষুধার্ত নেকড়ের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, মাফিয়া শাসনের কারণে যে দুঃশাসন বিরাজ করছে, আজকে মুন্সিগঞ্জের ঘটনা তার জঘন্য বহিঃপ্রকাশ। এরা বিএনপির নারী-পুরুষ কাউকেই রেহাই দিচ্ছে না। বিপন্ন নারীর আকুতি ও আর্তনাদে তারা উল্লাস প্রকাশ করছে। দেশের প্রবীণ রাজনীতিবিদ বেগম সেলিমা রহমান ও সাবেক মন্ত্রী বরকত উল্লাহ বুলু’র সহধর্মিনী শামীমা বরকত লাকীসহ মহিলা দলের নেত্রীদের যেভাবে লাঠি দিয়ে আঘাত করা হয়েছে তা ইতিহাসে জঘন্যতম ঘটনা হিসেবে লিপিবদ্ধ থাকবে। এই ঘটনা একুশ শতকে মানবসভ্যতার অগ্রগতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা আদিম অন্ধকারের যুগকেই ফিরিয়ে এনেছে। পুলিশ ও দলীয় সন্ত্রাসীদের দিয়ে হামলা করিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যা, খুন-জখম ও পঙ্গু করার পর প্রধানমন্ত্রীসহ ওবায়দুল কাদের ও হাছান মাহমুদ সাহেব’রা যে ভাষায় কথা বলছেন তাতে মনে হয়-এসব সহিংস ঘটনায় তারা মেতে উঠেন আনন্দে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরফত আলী সপু, বেনজীর আহমেদ টিটো, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির সেক্রেটারি কামরুজ্জামান রতন, জেলা বিএনপির শাহজাহান খান, প্রকৌশলী মাহবুব আলম সহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা।