চট্টগ্রাম নবনিযুক্ত প্রশাসক জনাব খোরশেদ আলম সুজন ১৮০ দিনের নগর অভিভাবকের দায়িত্ব পান। দায়িত্ব পাবার পর মুহুর্ত থেকে তিনি নগরের গেল দুই মেয়াদে যে অবহেলা, অছে তার বিরুদ্ধে কাজ করতে মাঠে নামেন।
চট্টলাবীর মহিউদ্দিনের সাথে রাজনীতি করা এ অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ চট্টগ্রাম নগরের দায়িত্ব নিয়ে চমৎকার ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন রাজনৈতিক দূরদর্শিতা দেখালেন ৪১ ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালনে প্রশাসককে কারা সহযোগীতা করবেন। গত ০৫/০৮/২০২০ ইং তারিখে সকল ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যাবার পর চট্টলার রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছিলো কারা হবেন ওয়ার্ড প্রশাসক। ফেইসবুক, গনমাধ্যম থেকে শুরু করে বহু নেতারা নিজেদের ওয়ার্ড প্রশাসক বানাতে শুরু করেন বিজ্ঞাপন দেয়া। বিভিন্ন রাজনৈতিক গ্রুপের শীর্ষ নেতাদের দ্বারস্থ হতে দেখা যায় নিজেদের ওয়ার্ড প্রশাসক বানাতে। এ যেনো সংসদ সদস্যের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ পদ। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে প্রতিটি চায়ের দোকানে একই আলোচনা অমুক ভাই নাকি তমুক ভাই হবেন চসিকের ওয়ার্ড প্রশাসক। কিন্তু এখানে যে কি চমক অপেক্ষা করছে তা কল্পনাও করতে পারেন নাই বহু চৌকশ নেতারাও। শেষ পর্যন্ত সবার মাথায় জল ঢেলে দিয়ে চসিকের ৪১ ওয়ার্ডের দায়িত্ব পেলেন চসিকের ৩ সিনিয়র কর্মকর্তা যাদের নামের সাথে নেই রাজনৈতিক কোন বড় বড় ডেজিগনেশান।
দায়িত্বপ্রাপ্ত ৪১ ওয়ার্ডের ৩ কর্মকর্তারা হলেনঃ
১) জনাব আবু শাহেদ চৌঃ (২৯-৪১ নং ওয়ার্ড)
২) জনাব সুমন বড়ুয়া (১৫-২৮ নং ওয়ার্ড)
৩) জনাব মফিদুল আলম (০১-১৪ নং ওয়ার্ড)।
৪১ ওয়ার্ডের এ প্রসাশক নিয়োগকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একটি সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন। নতুন রাজনৈতিক মেরুকরনে নতুন প্রশাসককে বাহবা দিচ্ছেন নগরবাসীরা।
এদিকে ১৮০ দিনের দায়িত্বে নতুন নগর প্রশাসক কোন কোন কর্মকান্ডকে অগ্রাধিকার দিবেন তা নিয়ে গনমাধ্যমকে জানান তার পরিকল্পনা।
জনাব খোরশেদ আলম সুজন বলেন
“মানুষ যেনো Smoothly চলাফেরা করতে পারে তার জন্য রাস্তাঘাটগুলো তৈরী করা হবে আমার দায়িত্ব কর্মকান্ডের প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ”।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে উল্লেখ করেন, মশা নিধন।
তৃতীয় জনগুরুত্বপূর্ণ যে কাজটি করবেন তা হলো, “পরিচ্ছন্নতার যে ব্যবস্থাপনা আছে তাকে স্বাস্থ্য সম্মত করা”।
এরপর তিনি যানজট নিরসনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এ প্রসঙ্গে সিটিকর্পোরেশন, সিডিএ এবং ডিসি ট্রাফিককে নিয়ে ত্রিমুখী কাজ করবেন বলে জানান।
সিটি কর্পোরেশনের হেল্থ ডিপার্টমেন্ট নিয়ে সমালোচনা করেন। এ প্রসঙ্গে চসিক প্রশাসক আক্ষেপ করে বলেন চট্রলা বীর এবিএম মহিউদ্দিন সিটিকর্পোরেশানের যে কার্যক্রম শুরু করেছিলেন পরবর্তি মেয়রা তার কোন কর্মকান্ড দেখাতে পারেন নি। এসময় তিনি বিগত মেয়রদের এবিষয়ে অজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন সিটি কর্পোরেশানের স্বাস্থ্য বিভাগ এতো দিন খাতার মধ্যে বন্দি ছিলো, এখন তিনি এটাকে পুনরুজ্জীবিত করতে কাজ করার অঙ্গিকার করেন।
ফুটপাত দখল করে কিভাবে সিটিকর্পোরেশন সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ করতে পারে গনমাধ্যমের এ প্রশ্নের উত্তরে চসিক প্রশাসক বলেন, “অলংকার পুলিশ বক্সের সাথে বিগত মেয়র ও এড়িয়া কাউন্সিলর তাদের ছবি লাগিয়ে রেখেছেন এবং সেখানে তিনটি দোকান থেকে প্রতিটি থেকে বিশ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়েছিলো। তিনি এর সামগ্রিক এখতিয়ারের বিষয়ে খবর নিচ্ছেন এবং অসংগতি যেকোন কিছুর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিবেন।”
বিপ্লব উদ্যানের প্রসঙ্গ আসলে তিনি গনমাধ্যমকে বলেন, তিনি লক্ষ্য করেছেন উদ্দ্যানে মানুষের হাঁটা, বসার স্থানের চেয়েও বেশী দোকানপাট। কোন চুক্তিতে তারা এতো এতো দোকান উদ্যানে চালাচ্ছেন তার খবরাখবর নিচ্ছেন। যদি চুক্তি বহির্ভূত কোন কিছু এখানে হয় তাহলে তিনি সকল চুক্তি বাতিলেরও ঘোষনা দেন। এসময় তিনি আরও বলেন যদি এসব নিয়ম বহির্ভূত কোন কাজে চসিকের কেউ সংশ্লিষ্ট থাকে তাহলে তার বা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিবেন।
উল্লেখ্য যে, ইতিমধ্যে দায়িত্ব নেবার সাথে সাথেই চসিক প্রশাসক জনাব খোরশেদ আলম সুজন ঘোষনা দিয়েছিলেন টেবিল চেয়ারে বসে দায়িত্ব পালনের দিন শেষ। তিনি নিজেও মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। তার জন্য তিনি সরকারি ছুটির দিনকেও পরোয়া করেন নাই।
এর ফলশ্রুতিতে দীর্ঘদিনের অভিশাপ নগরীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়ক পোর্ট কানেকটিং রোডের কাজ অতিদ্রুত শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন এবং ২৪ ঘন্টার নোটিশে এর আশপাশের অবৈধ সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করেন। এ সময় তিনি নগরবাসীকে আগামী সপ্তাহের মধ্যে দৃশ্যমান সড়কের প্রতিশ্রুতি দেন। শুধু তাই নয়, ২০ আগস্টের মধ্যেই চট্টগ্রামের বিমানবন্দর সড়কে কার্পেটিংসহ যান চলাচল উপযোগী করার নির্দেশ দিয়েছেন চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। তিনি গত বুধবার (১২ আগস্ট) বিকেলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) কর্তৃক বাস্তবায়িত উড়াল সেতু ও বিমানবন্দর সড়কের উন্নয়ন কাজ পরিদর্শন করতে গিয়ে এ নির্দেশ দেন।
দায়িত্ব নেওয়ার সাথে সাথে অনিয়ম ও অবহেলার বিরুদ্ধে নগর পিতার এমন কঠোর অবস্থানে নগরবাসী কিছুটা স্বস্ত্বি পাচ্ছে।