আয়াত উল্লাহ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলে থাকতেন।
৫ আগস্ট মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের মাস্ক ও হেলমেট পরা একদল অস্ত্রধারী তাঁর ওপর হামলা চালায়।
পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে। এ সময় তাঁর বাঁ পায়ের একটি রগ কেটে দেওয়া হয়।
এর পর থেকে তিনি বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আয়াত ছাত্রলীগের অপর একটি পক্ষের হয়ে ক্যাম্পাসে রাজনীতি করতেন।
গত এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি।
একদিকে সুস্থ হয়ে ওঠা, অন্যদিকে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া; এ নিয়ে অনিশ্চয়তা তাঁকে ঘিরে ধরেছে।
আয়াতের বাঁ পায়ের একটি রগ কেটে দেওয়া হয়েছে।
তিনি হেঁটে ক্যাম্পাসে ফিরে পড়াশোনাটা চালিয়ে নিতে পারবেন কি না, সেই দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুমাতেও পারছেন না।
জানা যায়, ৫ আগস্ট রাত সাড়ে ১১টার দিকে বঙ্গবন্ধু হলে আমার সহপাঠীদের ওপর হামলা হয়েছে, খবর পেয়ে আয়াত উল্লাহ হলের দিকে যান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মন্দিরের সামনে পৌঁছানোমাত্রই হেলমেট ও মাস্ক পরা ৭-৮ জন তরুণ আয়াত উল্লাহ পথ রোধ করে এলোপাতাড়ি পেটাতে ও কোপাতে শুরু করেন।
তিনি দৌড়ে পালাতে গেলে ৩-৪ জনতাকে জাপটে ধরে। একজন আয়াত উল্লাহ পায়ের রগ কেটে দেয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, চার থেকে পাঁচ মাস তাঁকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে। এরপর অস্ত্রোপচার করতে হবে।
গত সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে
নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ার একটি ছবি দেখিয়ে আয়াত উল্লাহ বলেন,
‘বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরু থেকেই আমি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
সর্বশেষ বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে দিনরাত পরিশ্রম করেছি।
নির্বাচন পরিচালনা দলের পক্ষে নগরবাসীর দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চেয়েছি।
ছাত্রলীগ করতে এসে আজ আমি পঙ্গু হতে চলেছি। প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হয়েছি।
রাজনীতি না করলে হয়তো এমন হতো না।’
প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আয়াত বলেন, ‘রামদা, চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্র দিয়ে বহিরাগতদের সহায়তায় আমার ওপর হামলা করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
কিন্তু কেউই হামলাকারীদের নিবৃত্ত করতে এগিয়ে আসেননি।
উল্টো এখন শুনছি, হামলাকারীদের মধ্যে যাঁরা শিক্ষার্থী ছিলেন, তাঁরা হলের বিভিন্ন কক্ষ দখল করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁদের মদদ দিচ্ছে।
আমি মামলার জন্য থানায় অভিযোগ দিলেও অদৃশ্য কারণে পুলিশ মামলা এজাহারভুক্ত করেনি।’
এই অভিযোগের বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর খোরশেদ আলম বলেন, ‘আমরা হাসপাতালে গিয়ে আহত শিক্ষার্থীর খোঁজ নিয়েছি।
প্রয়োজনে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছি।
এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে এমন মন্তব্য দুঃখজনক ও অযৌক্তিক।’
আয়াত উল্লাহ বলেন, আমার পরিবার নিম্নমধ্যবিত্ত। চিকিৎসার এত ব্যয় বহন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
সামনের দিনগুলো কীভাবে কাটাব, সেটা ভেবে অসহায় লাগছে।
মামলা না নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ আর মুকুল বলেন,
ওই হামলার ঘটনায় একাধিক পক্ষ কয়েকটি অভিযোগ দিয়ে গেছে।
সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। বিচার-বিশ্লেষণ শেষে মামলা নেওয়া হবে।
ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন জানিয়ে আয়াত বলেন,
‘চিকিৎসক আমাকে বলেছেন যে উন্নত চিকিৎসা পেলে ৬ থেকে ৮ মাস পর আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরতে পারব।
কিন্তু আমার সঙ্গী হবে হুইলচেয়ার। আমার পরিবার নিম্নমধ্যবিত্ত।
চিকিৎসার এত ব্যয় বহন করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
সামনের দিনগুলো কীভাবে কাটাব, সেটা ভেবে অসহায় লাগছে।’
আয়াত উল্লাহ তাঁর ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগের আরেক পক্ষের নেতৃত্ব দেওয়া তানজিদ মঞ্জুকে দায়ী করেন।
তবে তানজিদ এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ওই রাতের ঘটনায় আমি নিজেই ভিকটিম।
আমাকে আহত করা হয়েছে। এখন উল্টো আমার ওপর অভিযোগ আনা হচ্ছে।
এগুলো সবই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে হচ্ছে আমার।’