সরকার পতনের একদফা দাবিতে ঘোষিত দ্বিতীয় দফায় ৪৮ ঘণ্টার সর্বাত্মক অবরোধের সমর্থনে প্রথম দিন বিক্ষোভ মিছিল করেছে সমমনা দল ও জোটগুলো। এদিন রাজধানীতে পৃথক পৃথকভাবে মিছিল করে তারা। অবরোধের সমর্থনে মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে থেকে এসব দল ও জোটগুলোর নেতারা বলেছেন, অবরুদ্ধ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের সংলাপ নামের তামাশা জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশে আর কোনো নির্বাচনী তামাশা হতে দেয়া হবে না। আর এ রকম অবরুদ্ধ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের তথাকথিত ‘সংলাপ’ নামের চা-আড্ডারও নিন্দা জানান তারা। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টায় অবরোধের সমর্থনে মিছিল ও সমাবেশ করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তাদের মিছিলটি পুরানা পল্টন থেকে শুরু হয়ে বিজয়নগর, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দিয়ে ঘুরে আবারো পুরানা পল্টনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যদিয়ে শেষ হয়। সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের সভাপতিত্বে এবং সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীর পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য আকবর খান ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমন। সমাবেশে নেতারা বলেন, দেশে আর কোনো নির্বাচনী তামাশা হতে দেয়া হবে না।
দেশের এ রকম অবরুদ্ধ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের তথাকথিত ‘সংলাপ’ নামের চা-আড্ডারও নিন্দা জানান তারা। নেতারা আরও বলেন, জনগণের ভোটের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে সরকার ও সরকারি দলকে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া যাবে না।
পরিকল্পিত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালিয়ে মানুষের অধিকার হরণ করে রাখা যাবে না। বিশেষ কোনো স্বার্থান্বেষী কোটারি গোষ্ঠী ও মাফিয়াদের স্বার্থে দেশ এবং জনগণকে জিম্মি হতে দেয়া যাবে না। তারা আরও বলেন, বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সরকার রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে পরিকল্পিতভাবে এখন ষড়যন্ত্র ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতা জোনায়েদ সাকির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা ভিডিও, গুজব, মিথ্যা সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানা মাধ্যমে প্রচার করে গণতন্ত্র মঞ্চের আন্দোলন কেউ দমন করার চেষ্টা করছে। এই ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানান নেতারা। সকাল সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের বিপরীতে বিএমএ ভবনের সামনে থেকে অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের করে ১২ দলীয় জোট। তাদের মিছিলটি বিজয়নগর হয়ে পল্টন মোড় ঘুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে গিয়ে শেষ হয়।
এ সময় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ১২ দলীয় জোটের নেতারা বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের ঘণ্টা বেজে উঠেছে। পায়ের নিচে মাটি সরে যাওয়া গণবিচ্ছিন্ন সরকারের শেষ অবলম্বন রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহার করে বিরোধী দলকে জেলে ভরে সারা দেশের মানুষকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে রাজপথ থেকে হটিয়ে দিয়ে আবারো ২০১৪ সালের মতো একটি ভোটারবিহীন নির্বাচন করে রাষ্ট্র ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়। কিন্তু ২০১৪ আর ২০২৪ এক নয়। নিরস্ত্র বিরোধী দলকে রাজপথে রাষ্ট্র ক্ষমতা ব্যবহার করে সাময়িকভাবে বিজয়ী হওয়ার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেও এই উচ্ছ্বাস অচিরেই ফ্যাকাশে হয়ে যাবে। এ সময় বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক এডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম মেম্বার নোয়াব আলী আব্বাস খান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বি এম এল) চেয়ারম্যান এডভোকেট শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ফারুক রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। বেলা ১২টায় অবরোধ সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল বের করে গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি।
তাদের মিছিলটি আরামবাগ থেকে শুরু করে মতিঝিল শাপলা চত্বর হয়ে নটরডেম কলেজের সামনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যদিয়ে শেষ হয়। সমাবেশে গণফোরাম নির্বাহী সভাপতি এডভোকেট এ.কে.এম. জগলুল হায়দার আফ্রিক বলেন, অনেক স্বৈরাচারের পতন আমরা দেখেছি। সব কর্তৃত্ববাদী সরকার পতনের আগে অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু জনগণের দুর্বার আন্দোলন ঠেকানোর কোনো পথ তারা খুঁজে পায় না। জনগণের গণআন্দোলনেই এই ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হবে এবং জনগণের দাবি আদায় হবে। সকাল সাড়ে ১১টায় পল্টনে আল রাজী কমপ্লেক্সের সামনে থেকে অবরোধ সমর্থনে মিছিল বের করে নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ। তাদের মিছিলটি পল্টন মোড়, নাইটিংগেল মোড় ঘুরে আল রাজী কমপ্লেক্সের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, গত ৫২ বছরে এদেশে এমন স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল ও অবরোধ পালন হয়নি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই অবরোধ পালন করছে। আপনারা দেখেছেন- আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে হরতালের নামে দোকানপাট ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, গানপাউডার দিয়ে মানুষ হত্যা করে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিলো। কিন্তু আমরা সেই সহিংস আন্দোলন করছি না।
আমরা শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল ও অবরোধ করছি। সরকার প্রধানের পদত্যাগ না করা পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে। বেলা পৌনে ১২টায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকি থেকে মিছিল করে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। মিছিলটি বিজয়নগর পানির ট্যাংকি থেকে পল্টন মোড় হয়ে আবার বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এলডিপি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. নেয়ামূল বশির বলেন, আজকে আওয়ামী লীগ বাকশালে পরিণত হয়েছে। তারা দেশ ও মানুষের ভালো চায় না। আওয়ামী লীগের অগণতান্ত্রিক আচরণ, ভোটের নামে প্রতারণা দেশের মানুষকে আজকে এই একদফার দিকে ঠেলে দিয়েছে। দুপুরে পুরানা পল্টনে মিছিল বের করে গণঅধিকার পরিষদ একাংশ (ড. রেজা কিবরিয়া)। তাদের মিছিলটি পুরানা পল্টন হয়ে জামান টাওয়ারের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এ ছাড়াও এদিন রাজধানীতে সরকারবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অবরোধ সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।