মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে একটি সম্ভাব্য বিশ্ব রেকর্ড কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর শৃঙ্খলা ও প্রটোকল লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কন্যা দিনা ইউনুস।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার দফতরের ফেসবুক পেজে প্রকাশিত এক পোস্টে জানানো হয়, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে ৫৪ জন প্যারাট্রুপার বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে একটি বিশ্ব রেকর্ড গড়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। ওই পোস্টে উল্লেখ করা হয়, এই ৫৪ জনের একজন হিসেবে আশিক চৌধুরী প্যারাসুট জাম্পে অংশ নেবেন এবং তিনি শহীদ ওসমান হাদীর ছবি সংবলিত হেলমেট পরবেন। পোস্টটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছবি ও প্রচারসামগ্রীও প্রকাশ করা হয়।
এরপর বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে আশিক চৌধুরী ও দিনা ইউনুসের কয়েকটি ছবি, যেখানে তাদের বিমান বাহিনীর ফ্লাইং স্যুট ও পাইলট উইং ব্যাজ পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়। ছবিগুলোতে তাদের সঙ্গে বিমান বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকেও দেখা গেছে।
পাইলট উইং ব্যাজ নিয়ে প্রশ্ন
বিমান বাহিনীর বর্তমান ও সাবেক একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, পাইলট উইং ব্যাজ একটি বিশেষ সামরিক সম্মান, যা কেবলমাত্র দীর্ঘ প্রশিক্ষণ ও নির্ধারিত ফ্লাইট কোর্স সম্পন্নকারী বৈমানিকদের প্রদান করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, ফ্লাইং ডিউটি থেকে গ্রাউন্ডেড হলে সংশ্লিষ্ট সদস্যরাও আর এই উইং ব্যাজ পরিধান করতে পারেন না।
এমন প্রেক্ষাপটে যেসব ব্যক্তি বিমান বাহিনীর বৈমানিক নন, তাদের পাইলট উইং ব্যাজ পরিধান করা নিয়ে প্রশ্ন ও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে বলে জানান তারা। বিমান বাহিনীর কয়েকজন সাবেক সদস্যও বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছেন।
একজন সাবেক কর্মকর্তা বলেন,
“পাইলট উইং ব্যাজ স্রেফ একটি পোশাকের অংশ নয়, এটি প্রশিক্ষণ, ঝুঁকি ও পেশাগত মর্যাদার প্রতীক। অনুমোদন ছাড়া এর ব্যবহার বাহিনীর শৃঙ্খলা ও সম্মানের প্রশ্ন তোলে।”
বাহিনীর ভেতরে প্রতিক্রিয়া
ঘটনার পর বিমান বাহিনীর সদস্যদের একটি অংশের মধ্যে বিব্রতবোধ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, বিষয়টি নিয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা না এলে বিভ্রান্তি আরও বাড়তে পারে।
এর আগেও রাষ্ট্রীয় উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের পাইলট উইং ব্যাজ পরিধান নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল, যা সামরিক প্রটোকল ও সম্মান রক্ষার প্রশ্ন সামনে এনেছিল।
এখনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা নেই
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে পাইলট উইং ব্যাজ ব্যবহারের বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা বা বিমান বাহিনীর লিখিত বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, বিষয়টি স্পষ্ট করতে হলে—
ব্যাজ ব্যবহারের অনুমোদন ছিল কি না
এটি স্মারক বা আনুষ্ঠানিক সৌজন্য ব্যবহার ছিল কি না
সামরিক প্রটোকল অনুসরণ করা হয়েছে কি না
এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা জরুরি।
