আগামী ২৮ অক্টোবর, শনিবার রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বরে জামায়াত ঘোষিত মহাসমাবেশের কর্মসূচি সর্বাত্মকভাবে সফল করতে দেশবাসীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করে জরুরি সাংবাদিক সম্মেলন করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে অনলাইন সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা, আমীরে জামায়াত ডা: শফিকুর রহমানসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মী এবং সম্মানিত ওলামা-মাশায়েখের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার দাবিতে আগামী ২৮ অক্টোবর, শনিবার রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বরে এই মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জনাব নূরুল ইসলাম বুলবুল-এর সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোঃ তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমীর আবদুর রহমান মুসা, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমান পলাশ প্রমুখ।
সাংবাদিক সম্মেলনে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের সংকটময় এক কঠিন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমরা আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর মাত্র কিছু দিন পরই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। অথচ এখনও নির্বাচনের কোনো পরিবেশ তৈরি হয়নি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করা পূর্ব শর্ত। কিন্তু সরকার লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করার কোনো চিন্তাই করছে না। দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষসহ গোটা জাতি মনে করে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। কারণ এর আগে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো দেশে-বিদেশে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। কিন্তু সরকার গণতন্ত্রকামী মানুষের সে দাবি পাশ কাটিয়ে যেনতেন প্রকারে একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিনা ভোটের সরকার দলীয় বিবেচনায় প্রশাসনকে ঢেলে সাজিয়েছে।
তিনি বলেন, ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কেএম হাসানকে বিএনপির লোক আখ্যা দিয়ে তার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না বলে তিনি আন্দোলন শুরু করেছিলেন যাতে তিনি কেয়ারটেকার সরকার প্রধানের দায়িত্ব নিতে না পারেন। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে বহু মানুষকে হত্যা করে দেশে এক ভয়াবহ অরাজকতা তৈরি করা হয়েছিল। জাতির প্রশ্ন দলীয় লোক বিবেচনায় বিচারপতি কেএম হাসানের অধীনে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না হয়, তাহলে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে সম্ভব? এটি শেখ হাসিনার দ্বিমুখী আচরণ। দেশবাসী মনে করে, শেখ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কখনই সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছরে বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সাজানো ও ষড়যন্ত্রমূলক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হয়। আওয়ামীলীগ ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচনের প্রহসন করে পুনরায় ক্ষমতায় আসে। ২০১৪ সালে মূলত বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। ১৫৩টি আসনে বিনা ভোটে সংসদ সদস্যদের নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। দেশের মানুষকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দেয়া হয়নি। প্রকৃতপক্ষে এটি কোনো নির্বাচন ছিল না। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগের রাতে ভোট দিয়ে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে মধ্যরাতের পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে আবারো ক্ষমতা দখল করে আওয়ামীলীগ। ২০১৮ সালের নির্বাচন মধ্যরাতের নির্বাচন হিসেবে সারা বিশ্বে কুখ্যাতি অর্জন করে। বর্তমান জালিম সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই অবাধ, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ হতে পারে না। জামায়াতে ইসলামী বারবার বলে আসছে কেয়ারটেকার সরকার ব্যতীত জনগণ তাদের পছন্দের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে না। সংবিধানে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা না থাকার দোহাই দিয়ে সরকার মূলত নিজেদের ছকে আরেকটি সাজানো নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে। জনগণ সরকারের এ ষড়যন্ত্র বাস্তবায়িত হতে দিবে না, ইনশাআল্লাহ।