লেখক: সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার পারভেজ। -মহাপরিচালক, (বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট)।
আমাদের বঙ্গোপসাগরের উপকূলে ভাটার সময় প্রায় হর্স সু ক্র্যাব কে সৈকতে আটকে থাকতে দেখা যায়।অনেক সময় জেলেদের জালেও হর্স সু ক্র্যাব ধরা পড়ে। প্রধানত অগভীর সমুদ্র ও নরম বালি বা কাদা সমৃদ্ধ সমুদ্রতলে বাস করে। কালেভদ্রে জন্য এদের ডাঙায় আসতে দেখা যায়।
হর্স সু ক্র্যাব নিয়ে আমাদের দেশে এখনো কোন গবেষনা না হলেও ধরে নেয়া যায় আমাদের বঙ্গোপসাগরে এটির প্রাচুর্যতা রয়েছে।
আমাদের অনেকেই একে রাজ কাঁকড়া নামে ডাকে (যদিও কিং ক্র্যাব ভিন্ন প্রজাতির কাঁকড়া)। কক্সবাজারসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে এই প্রাণিটি ‘দিয় কিঁয়ারা’ (দৈত্য কাঁকড়া) নামেই বেশি পরিচিত।আর ঘোড়ার ক্ষুরের মতো দেখতে উপবৃত্তাকার বলে ইংরেজী নাম হর্স সু ক্র্যাব লিমিউলাস। বিশ্বব্যাপী হর্স সু ক্র্যাব নামে এ প্রাণীটিকে সবাই চিনে।
হর্স সু ক্র্যাব কে লিভিং ফসিল বা জীবন্ত জীবাশ্ম বলা হয়। কারণ ৪৪ কোটি ৫০ লক্ষ বছর আগেও পৃথিবীতে এদের অস্তিত্ব ছিল। ডাইনোসরের চেয়েও প্রায় ২০ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে এসেছিল এই লিমিউলাস।সমসাময়িক সকল প্রানী বিলুপ্ত হয়ে ফসিল হয়ে যাবার পরও একটুও পরিবর্তিত না হয়ে কীভাবে এই জলজ প্রাণী ‘লিমিউলাস’ আজো টিকে আছে তা বিজ্ঞানীদের কাছে এক অপার বিষ্ময়।
সবচাইতে বিষ্ময়কর ব্যাপার হলো হর্স সু ক্রাবের রক্ত নীল।
শরীরে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য আমাদের মতো মেরুদন্ডী প্রাণিদের রক্তে যেমন হিমোগ্লোবিন থাকে, তেমনি হর্স সু ক্র্যাবের রক্তে রয়েছে হিমোসায়ানিন। আর হিমোসায়ানিনে রয়েছে কপার বা তামা যার কারণেই তাদের রক্ত নীল। এই নীল রক্তের বৈশিষ্ট হিমোসায়ানিনের মাধ্যমে হলো যে কোনও ধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং বিষাক্ত পদার্থ থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে। জীবানু এ টক্সিন প্রতিরোধের অসাধারণ ক্ষমতার কারনে চিকিৎসাবিজ্ঞানে এ রক্তের গুরুত্ব অপরিসীম।
জটিল অস্ত্রাপচারের যেমন কিডনী প্রতিস্থাপনের সময় রক্ত ক্ষরণ বন্ধ করতে ও জীবানু মুক্ত করতে হর্স সু্ ক্র্যাবের রক্ত হতে উৎপাদিত ওষুধ ব্যবহার করতে হয়।দামেও বহুমূল্য। প্রতি গ্যালন নীল রক্তের দাম প্রায় ৬০ হাজার মার্কিন ডলার।ঔষধ কোম্পানি গুলোর চাহিদা মেটাতে বিশ্বব্যাপী অনিয়ন্ত্রিত আহরনের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই প্রাণীটির অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন।
আমাদের বঙ্গোপসাগরের এই মহামূল্যবান প্রাণীটি নিয়ে আমাদের এখনই গবেষনা শুরু করা দরকার।