সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজতে ইসলামের অসাম্প্রদায়িক কার্যকলাপ বিশ্বজুড়ে নিন্দিত হয়েছে। বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে হেফাজতে ইসলাম নামে সংগঠনটি সারা দেশে যে ধ্বংশযজ্ঞ চালিয়েছিলো তা সবাইকে হতবাগ করেছে। এমতাবস্থায় সরকারের নীতিনির্ধারক এমন কী প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং হেফাজতের অসাম্প্রদায়িক কর্মকান্ডে জিরো টলারেন্স নীতিতে অটল বলে জানা গেছে সরকারের শীর্ষ নীতিনির্ধারক মহল থেকে।
এ অবস্থায় বিভিন্ন মহল থেকে হেফাজতের সাথে সমঝোতার বিভিন্ন প্রস্তাব আসছে, দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন উদ্যোগও। কিন্তু এতো সব প্রস্তাব ও প্রচারণা সত্ত্বেও সরকার অনড় অবস্থানে রয়ে গেছেন। বিশেষ করে হেফাজত ইস্যুতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহন করেছেন বলে সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র নিশ্চিৎ করেছে।
সম্প্রতি হেফাজতের দেশব্যাপি ধ্বংশযজ্ঞের পর প্রশাসনের সাড়াঁশি অভিযানে হেফাজতে ইসলামের প্রায় ১৯ জন শীর্ষ নেতা গ্রেফতার হবার পর হেফাজতে ইসলামের আভ্যন্তরীন কর্মকান্ড স্থবির হয়ে গেছে বললেই চলে। এমনকী সংগঠনটির আমীর জুনায়েদ বাবুনগরীর গ্রেফতারও এখন সময়ের ব্যপার। ইতিমধ্যে বাবুনগরীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সব কিছু মিলে সংগঠনটির শীর্ষ মহল যেকোন পরিস্থিতিতে ও যেকোন প্রকারে সরকারের সাথে সমঝোতার জন্য বিভিন্ন মহলের স্মরণাপন্ন হচ্ছেন বলে জানা গেছে সংগঠনটির দায়িত্বশীল মহল থেকে।
দেশব্যাপি সহিংস কর্মকান্ডের ও হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতাদের একের পর এক বিতর্কিত কর্মকান্ড ও বিবৃতি নিয়ে কোনঠাসা হয়ে পড়ে সংগঠনটির মূল কার্যক্রম। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার তাগিদে হেফাজতে ইসলামের আমীর বাবুনগরী হঠাৎ করেই ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি বিলুপ্ত করে ৫ সদস্যের আহবায়ক কমিটি গঠন করেন। সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা জানান, এটা সরকারের সাথে একটি ফলপ্রসূ সমঝোতায় যাবার তাগিদে পূর্বের কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি করা সংগঠনটির একটি ইতিবাচক কৌশল। এ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন উৎস ধরে ও বিভিন্ন প্রস্তাবনার মাধ্যমে সরকারের সাথে সমঝোতার চেষ্টা চলমান আছে।
কিন্তু এতো কিছুর পরও সরকারের পক্ষ থেকে হেফাজতে ইসলামের সাথে কোন ধরনের সমঝোতার লক্ষন বা আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এটি নিয়ে গভীরে সংকটে পরেছে সংগঠনটি।
হাটহাজারী মাদ্রাসা এলাকার সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির নেতা ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল ইসলাম মাহমুদ সরকারের সাথে যোগাযোগ রাখছেন এবং ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথেও কয়েকবার যোগাযোগ করে সরাসরি কথাও বলেছেন বলে জানা যায়। তবে এসকল যোগাযোগ সরকারের আনুষ্ঠানিক যোগায়োগ নয় বলে জানা গেছে।
বর্তমানে সংগঠনটির কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সরকারের শক্ত অবস্থানের বিষয়ে একজন মন্ত্রী বলেন, “সরকারের অবস্থান খুবই সুস্পষ্ঠ। কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ক্ষোভ থেকে নয় বরং আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সন্ত্রাসী ও মানুষের জানমালের ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।”
বিভিন্ন পর্যালোচনা থেকে জানা গেছে যে, বর্তমানে সরকার যেভাবে হেফাজতে ইসলামকে নিয়ন্ত্রন করছেন তা বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে হেফাজতের সাথে কোন প্রকার সমঝোতা করা হলে তা হবে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যা কোন ভাবেই কাম্য হতে পারে না। আর একারনেই সরকার হেফাজতের বিষয়ে কোন প্রকার ছাড় দিতে রাজি নয়।
বিভিন্ন মহল খেকে জানা যাচ্ছে যে, সরকার আনাস মাদনীর নেতৃত্বে শফিপন্থিদের দিয়ে আরেকটি হেফাজতে ইসলাম গঠনের চেষ্টা করছে। কিন্তু এ সম্ভবনার কথাও নাকচ করে দিয়েছেন সরকারের দায়িত্বশীল মহল। বরং সরকার থেকে বলা হচ্ছে, হেফাজতে ইসলামকে সমর্থন বা সহযোগীতা দেবার কোন আগ্রহ সরকারের নেই। বরং, মৌলবাদীদের রাজনীতির ইতি টানাই সরকারের একমাত্র লক্ষ্য। অরাজনৈতিক সংগঠনের নাম করে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনাকারী হেফাজতের আমীর আহমেদ শফীর মৃত্যুর পর হেফাজত বলতে গেলে ভাড়াটে সন্ত্রাসীতে পরিনত হয়েছে। শুধু সংগঠনের নেতাদের গ্রেফতার নয়, সরকার অসাম্প্রদায়িক মৌলবাদ কর্মকান্ড নির্মূলে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাই, হেফাজতে ভবিষ্যতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারাটা সদূর পরাহত এটা প্রায় নিশ্চিৎ বলা যায়।
মাদ্রাসাগুলো রাজনীতি মুক্ত করা, মাদ্রাসা শিক্ষক-ছাত্রদের রাজনীতি থেকে বাধ্যতামূলক দূরে রাখা, কওমি মাদ্রাসা গুলোর নিয়ন্ত্রন হেফাজতে থেকে বাহিরে নিয়ে আসা সহ বিভিন্ন ব্যবস্থাপনার সংস্কার নিয়ে সরকার কাজ করছে।
যা বাস্তবায়িত হলে হেফাজত এমনিতেই অর্থহীন ও অপ্রয়োজনীয় সংগঠনে পরিনত হবে। মৌলবাদ জঙ্গীবাদ নির্মূলে সরকারের শক্ত অবস্থান আশা করছেন সচেতন মহল।
