ঢাকাসোমবার , ৩ অক্টোবর ২০২২
  1. অনান্য
  2. অপরাধ ও আইন
  3. অভিবাসীদের নির্মম জীবন
  4. অর্থনীতি
  5. আত্মসাৎ
  6. আন্তর্জাতিক
  7. ইতিহাস
  8. উদ্যোক্তা
  9. এশিয়া
  10. কৃষি
  11. ক্যাম্পাস
  12. খেলাধুলা
  13. গণমাধ্যম
  14. গল্প ক‌বিতা
  15. চট্টগ্রাম বিভাগ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ঘু‌রে আসুন মুগ্ধ করা সিকিমের সে গ্রা‌মে

অপরা‌জিত বাংলা ডেস্ক
অক্টোবর ৩, ২০২২ ৬:৩৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

পাহাড়ে ঘেরা নির্জন, নিরিবিলি। মেঘমুলুক বললে খুব একটা ভুল বলা হবে। সিকিমের এই ছোট্ট গ্রামের রূপে মুগ্ধ না হয়ে পারবেন না। এ যেন মেঘপিওনের দেশ। মেঘের সঙ্গে বসবাস এই গ্রামে। পাহাড়ে আরামের আস্তানায় দু’দণ্ড জিরিয়ে নিতেন সিল্ক রুটের ব্যবসায়ী পথযাত্রীরা। শিয়ালদহ স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন। সেখান থেকে গাড়িতে রওনা।

শিলিগুড়ি শহর ছাড়িয়ে ন্যাশনাল হাইওয়ে ধরে সোজা কালিম্পংয়ের দিকে। ধূলিধূসরিত কংক্রিটের শহর ছাড়িয়ে সবুজ গাছগাছালিতে ভরা পাহাড়ি এলাকা শুরু হতেই মনটা দেখবেন বেশ খুশি খুশি হয়ে ওঠে। ঘণ্টাখানেক চলার পরে সেবক রোডে রাস্তার ধারে ছোট্ট ঝুপড়ির সামনে চোখে পড়বে স্থানীয় মহিলা ব্যস্ত হাতে দোকান সামলাচ্ছেন।

ধোঁয়া ওঠা গরম মোমো, টোম্যাটো কাঁচালঙ্কার চাটনি আর অনেকটা দুধ দেওয়া এক গ্লাস চা। ব্রেকফাস্টে সেরে পাকদণ্ডী পথ বেয়ে ক্রমশ উপরে ওঠা শুরু। পাহাড়ি পথের বেশ একটা মজা আছে। এই মনে হয় হাতের নাগালেই পাহাড়, আবার পরক্ষণেই মনে হয় পথের শেষ হতে ঢের দেরি। আর পিছনে ফেলে আসা রাস্তাও যেন ক্রমশ ছোট হতে শুরু করে। এই অপার মুগ্ধতার কোনও তুলনা হয় না।ঘু‌রে আসুন মুগ্ধ করা সিকিমের সে গ্রা‌মে

সঙ্গে চোখে পড়বে সবুজের নানা শেডে মোড়া অনন্য সব ল্যান্ডস্কেপ। পথে সঙ্গী হবে মেঘ-রোদ্দুরের কাটাকুটি খেলা। পাহাড়ি পথের শোভা উপভোগ করতে করতেই পৌঁছে যাবেন কালিম্পং। ঝটিতি লাঞ্চ সেরে পেডং হয়ে সাড়ে চার ঘণ্টায় পৌঁছে যাবেন ঋষিখোলা ইকো ট্যুরিজ়ম রিসর্ট। অফবিট জায়গা। তবে এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। চারপাশ পাহাড়ে ঘেরা, মাঝে বয়ে চলেছে ঋষি নদী।

খুব বেশি স্রোত নেই এ নদীতে। জলের তলায় নানা আকারের, নানা মাপের নুড়ি পাথর যেন সাজিয়ে রাখা হয়েছে। জিপ থেকে নেমে এই পাথরের উপর দিয়েই নদী পেরোতে হবে। ওপারে নদীর ধারে ঋষিখোলা ইকো ট্যুরিজ়মের ছোট্ট কটেজ। স্থানীয় মানুষের প্রচেষ্টায় এই ইকো ট্যুরিজ়ম গড়ে উঠেছে। মোট ৫টি কটেজ আছে। ছিমছাম, পরিচ্ছন্ন থাকার ব্যবস্থা।

পরদিন সকালে উঠে গরম গরম পরোটা আর আচার দিয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে রওনা দিন জ়ুলুকের উদ্দেশে। রাস্তা ক্রমশ খাড়াই হবে আর সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শীত। রেনক ও রোংলি পেরিয়ে প্রথম চেকপোস্ট লিংথামে থামতে হবে পারমিট নেওয়ার জন্য। জ়ুলুক যেতে পারমিট লাগে। ইন্দো-চায়না বর্ডারের কাছাকাছি এই অঞ্চল ইন্ডিয়ান আর্মি টেরিটরির আওতায়। যাওয়ার রাস্তা অসাধারণ।

এখান থেকেই শুরু হয়ে যায় ওল্ড সিল্ক রুটের ঘোরানো পথ। গাড়িপথে তিন ঘণ্টা। গ্রামে পা দিয়েই মনে হবে এখানে কেউ থাকে না। পরিত্যক্ত কোনও গ্রাম, এতটাই নির্জন এবং নির্বান্ধব। এই সেই গ্রাম যেখানে অতীতে সিল্ক রুটের ব্যবসায়ী যাত্রীরা দু দণ্ড জিরিয়ে নিতেন। এই রাস্তাই চলে গিয়েছে কুপুপের দিকে। শহরের আগ্রাসী আওতার বাইরে আছে বলেই জ়ুলুকের সৌন্দর্য এখনও অমলিন ও অটুট আছে। এখানে সবই হোম স্টের ব্যবস্থা। বিলাসিতা নেই, কিন্তু  আতিথেয়তায় আপনি আপ্লুত না হয়ে পারবেন না। স্থানীয়রাই সযত্নে রেঁধে বেড়ে খাওয়াবেন ধবধবে ভাত, মিক্সড ডাল, আলু পোস্ত। চাইনিজ় চাইলে তাও পাবেন। বেস্ট অপশন হল এঁদের ভাষায় সুপি নুডলস, খানিকটা থুকপার মতো, মোমো আর এখানকার পপুলার আইটেম ফালে। খানিকটা মোমোর মতোই, তবে আকারে বড়, গোল, ভিতরে চিকেন কিংবা ভেজ ফিলিং। খুব ভাল খেতে। চেখে দেখতে পারেন স্কোয়াশ কারি।ঘু‌রে আসুন মুগ্ধ করা সিকিমের সে গ্রা‌মে

পরদিন জিপে চড়ে রওনা দিন সানরাইজ় পয়েন্টের দিকে। জিপ যত উপরে উঠতে লাগল, তত স্পষ্ট হতে থাকল জ়ুলুকের পাকদণ্ডী পথের বাঁকের তীব্রতা, বিখ্যাত জ়ুলুক লুপস। এই পথে চারটি ভিউ পয়েন্ট আছে। থাম্বি ভিউপয়েন্টে গিয়ে সত্যিই অবাক হবেন। এটি পৃথিবীর একমাত্র জায়গা, যেখান থেকে ৯২টি টার্নিং পয়েন্ট একসঙ্গে দেখা যায়। আর অন্য দিকে কাঞ্চনজঙ্ঘার বিস্তৃত রেঞ্জ। আর সঙ্গে আছে মেঘের খেলা। আপনার চোখের সামনেই সূর্য পাড়ি দেবে ঘুমের দেশে। সুর্যাস্তর মায়া আলোয় দাঁড়িয়ে এই নিঝুম নির্জনতাকে উপভোগ করার চেয়ে মায়াবী বোধহয় আর কিছুই হতে পারে না।

পরদিন একই পথে রওনা দিন কুপুপ। চারিদিক বরফে ঢাকা। চোখ ধাঁধিয়ে যায়। আর ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচতে সুপি নুডলস আর ইয়াকের দুধের ধোঁয়াওঠা কফি খান। বৌদ্ধ ধর্মীয় মানুষই বেশি এখানে। ভাল লাগবে জ্বালামুখী ভ্যালি। নিঝুম বনপথে যতদূর চোখ যায় ততদূরই চোখে পড়বে রডোডেনড্রন। বরফ পড়ে অদ্ভুত আকার নিয়েছে। এক-এক ঋতুতে একেক রূপ। জ়ুলুক থেকে কুপুপের দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটারের মতো। লোকজন খুবই কম এখানে। থাকার কোনও ব্যবস্থা নেই। পৃথিবীর উচ্চতম গল্ফ কোর্স, লেক, ওল্ড বাবা মন্দির দেখা যেতে পারে। বরফে মোড়া রডোডেনড্রন আর সূর্যাস্তের মায়া আলো চোখে নিয়ে ফিরে আসুন জ়ুলুক। জলের ধারের এই গ্রামে, এই সুন্দরী সিকিমের বুকে বারবার আসতে ইচ্ছে করবে।

কীভাবে যাবেন: ঢাকা থে‌কে কলকাতা। কলকাতা থেকে ফ্লাইটে বাগডোগরা বা ট্রেনে এনজেপি। সেখান থেকে গাড়িতে। শেয়ার জিপে বা বাসে গ্যাংটক গিয়েও যাওয়া যায়। বাগডোগরা থেকে গাড়িতে হিলে পৌঁছতে লাগবে ৬ ঘণ্টা।

কোথায় থাকবেন: থাকতে পারেন দিলমায়া রিট্রিট-এ।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল অপরাজিতবাংলা ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন oporajitobangla24@yahoo.com ঠিকানায়।