ভারত সফরে গেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় দিয়ে এসেছেন, কিছুই আনতে পারেননি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় তিনি এমন্তব্য করেন। সাইফুর রহমান স্মৃতি পাঠাগার এই স্মরণসভার আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, তার (প্রধানমন্ত্রী) ভারত সফর নিয়ে কিছু বলতে চাই না। কারণ আমাদের অভিজ্ঞতা এত তিক্ত, হতাশ হওয়ার মতো। প্রত্যেকবার দেখেছি অত্যন্ত হতাশার সঙ্গে, নিরাশার সঙ্গে; প্রধানমন্ত্রী ভারতকে দিয়ে এসেছেন কিন্তু নিয়ে আসেননি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা প্রত্যেকবার আশা করেছি যে এবার হয়তো প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য কিছু নিয়ে আসবেন। দেখেছি তিনি প্রতিবার দিয়ে আসেন কিছু আনেন না। সুতরাং আগে আসুক ঘুরে, কি আনেন দেখি তারপর মন্তব্য করব।
মির্জা ফখরুল বলেন, ’৭৫ সালে যে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়েছিল তার পূর্বে আপনাদের লক্ষ্য রাখতে হবে সেটা ছিল সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি। যারা (আওয়ামী লীগ) সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে বিশ্বাস করত না তারা বললেন আমরা সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করব। তারপরে যেটা হলো সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির কোনো কাঠামোই তৈরি হলো না। যেটা তৈরি হলো সেটা হলো লুটপাটের অর্থনীতি। ৭২ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ছিল সম্পূর্ণ লুটপাটের অর্থনীতি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখনো একই অবস্থা চলছে প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে। রাস্তা নির্মাণ হচ্ছে, সেতু নির্মাণ হচ্ছে; যে সেতুটা এক বছরে নির্মাণ করা সম্ভব সেটা করছে ১০-১৫ বছরে। ঢাকা থেকে টঙ্গীর যে রাস্তা সেটা আজ ১০ বছর ধরে হচ্ছে।
সাইফুর রহমানের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, সাইফুর রহমান পড়াশোনা করেছিলেন হিসাববিজ্ঞানের ওপর। সে কারণেই কোনটা করলে লাভ হবে আর কোনটা করলে লাভ হবে না, আর কোনটা করলে ঋণগ্রস্ত হবো আর কোনটা করলে অনেক বেশি লাভবান হব সেটা তিনি খুব ভালো করে জানতেন। সেই কারণে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। যে কাজটা দেশের জন্য ভালো মনে করতেন তিনি সেটাই করতেন।
আর সেই কাজটা করার জন্য যা যা করা দরকার ছিল তিনি তাই করতেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা আজকে অত্যন্ত কঠিন একটি সময় অতিক্রম করছি। এ সময় সাইফুর রহমান থাকলে আমাদের রাজনৈতিকভাবে সহযোগিতা করতেন। এই সরকারের যে মূল চেহারা সেটাকেও উন্মোচনে তিনি সক্ষম হতেন।
আজকে সরকার কুইক রেন্টাল বিদ্যুতের নামে বসিয়ে বসিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। কেন দিল তার জবাব তারা দিতে পারছে না। তারা এদেশে পার কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণে ২১৩ কোটি টাকা বাজেট করছে। কিন্তু সাইফুর রহমান এগুলো বিশ্বাস করতেন না। তার উদ্দেশ্য ছিল সততা। তিনি দেশের ক্ষতি হোক এমন কোন খাতে অর্থ বরাদ্দ দিতেন না। তিনি বিশ্বাস করতেন ব্যবসা করবে ব্যবসায়ীরা। সরকার শুধু নিয়ন্ত্রণ করবে। সরকার পরিকল্পনা দিবে। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন যোগ্য দক্ষ অর্থমন্ত্রী হারিয়েছেন।
রিজার্ভ-জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিসহ অন্যান্য সংকটের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির এই নেতা বলেন, যে কাজটা দশ হাজার টাকায় হবে সেটা তারা পঞ্চাশ হাজার টাকা খরচ করছে। বাকি চল্লিশ হাজার টাকা তারা (সরকার) নিজেরা ভাগ করে চুরি করে খাচ্ছে। সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সাইফুর রহমান শুধু রাজনীতিবিদই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক। আজকে যারা গায়ের জোরে ক্ষমতায় রয়েছে তারা ইভিএমের মাধ্যমে আবার ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নেতাদের লুট করা আর লুট করে দেওয়ার সুযোগ তৈরি করা, ধনী হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেয়া।
সাইফুর রহমান ইচ্ছে করলে এই সুযোগ করে দিতে পারতেন কিন্তু একটি লোকেরও এই সুযোগ করে দেননি। কেন দেননি দেশের জনগণের কথা চিন্তা করে। তিনি বলেন, যারা আজকে অর্থনীতিকে লুটপাট করে দেউলিয়া করে ফেলেছে সাইফুর রহমান বেঁচে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে মাঠে নামতেন।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার নির্দেশনায় সাইফুর রহমান কঠিনশীলা কয়লা খনি প্রকল্পের কাজ শুরু করেন। তিনি গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে যা যা প্রয়োজন ছিল তা তিনি করতেন। ভোলা শাহাবাজপুরে গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করা এবং গ্যাস উত্তোলনে তিনি পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি বলেন, এই সরকার গত ১৪ বছরেও কোন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেনি। এজন্য এখন দেশে গ্যাসের অভাবে বিদ্যুত উৎপাদন করতে পারছে না। আমদানির জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ছে সরকার। এখন তারা লুটপাট করার জন্যই আমদানি নির্ভর হয়ে পড়ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আমাদের দেশ ও জাতির অধঃপতন হয়েছে; এই লুটেরা সরকার থেকে, ভোট ডাকাত সরকার থেকে দেশের জনগণকে রক্ষা করতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে, দেশের কথা চিন্তা করে বর্তমান সরকারকে হটাতে হলে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। খন্দকার মোশাররফ বলেন, জনগণের মধ্যে ইস্পাত কঠিন গণঐক্য সৃষ্টি করে এই সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করব।
এই সরকারের সিন্ডিকেট সদস্যরা ৬০ থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজ রিজার্ভ কমে গেছে আমদানী করতে পারছেনা। অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ আজ দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। জনগণের টাকা লুট করার জন্য এই সরকার এতগুলো ব্যাংক করেছে। তিনি বলেন তারা যেভাবে৷ এখন ঋণ খেলাপীদের সুযোগ দিচ্ছে এভাবে সুযোগ দিলে অন্যরাও সুযোগ নেবে।
স্মরণসভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান, বিএনপি নেতা নাজিমুদ্দিন আলম ও কামরুজ্জামান রতন বক্তব্য দেন।