গ্রুপের পর্বের প্রথম ম্যাচে লেবাননের বিপক্ষে হারার কারণে বঙ্গবন্ধু সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে
টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশের।
সেমিফাইনালের লড়াইয়ে থাকতে হলে তাই মালদ্বীপের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প ছিল না জামাল ভূঁইয়াদের সামনে।
এমন সমীকরণের ম্যাচে শুরুতেই হোঁচট খায় লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।
তবুও পূর্ণশক্তি নিয়ে মালদ্বীপের জালে একে একে রাকিব হোসেন, তারিক কাজী ও
শেখ মোরসালিন হানা দিয়ে দলকে এনে দেন দুর্দান্ত জয়।
রোববার (২৫ জুন) বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে র্যাঙ্কিংয়ের ৩৮ ধাপ উপরের দল
মালদ্বীপকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ।
তাতে ‘বি’ গ্রুপ থেকে সেমিফাইনালের দৌড়ে টিকে রইল জামালরা।
এদিকে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে মালদ্বীপকে প্রায় ২০ বছর পর হারিয়েছে বাংলাদেশ।
এর আগে সবশেষ ২০০৩ সালে তাদের হারিয়ে সাফ শিরোপা জিতেছিল লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।
এদিন ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিল জামালরা।
কারণ এই একটি ম্যাচের ওপরেই নির্ভর করছিল আসরে বাংলাদেশের টিকে থাকা।
ম্যাচপূর্ববর্তী সংবাদসম্মেলনে অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া নিজেই জানিয়েছিলেন, এ ম্যাচ তাদের জন্য ফাইনাল।
জয়ের জন্য তাদের যে তীব্র ক্ষুধা ছিল, সেটা দেখা গেছে মাঠের লড়াইয়েও।
পুরো ম্যাচে ৫১ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে গোলের উদ্দেশে ২০টি শট নেয় হ্যাভিয়ের কাবরেরার শিষ্যরা।
যার ৯টিই ছিল গোলমুখে। বিপরীতে মালদ্বীপ ৭টি শট নেয়, যার ২টি ছির গোলমুখে।
যদিও ম্যাচের প্রথম সাফল্যটা আসে মালদ্বীপ শিবিরেই।
১৭ মিনিটে রক্ষণের দুর্বলতায় গোল হজম করে কাবরেরার শিষ্যরা।
বামপ্রান্ত ধরে আক্রমণে উঠে আলি ফাসির পাস দেন হামজা মোহাম্মদকে।
ডি-বক্স থেকে তার নেয়া ডান পায়ের শট বামে ঝাপিয়ে পড়েও ঠেকাতে পারেননি আনিসুর রহমান জিকো।
এরপর সমতায় ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।
৩৪ মিনিটে গোল পরিশোধের সুযোগও পেয়েছিল তারা।
কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি জামালদের। কর্নার থেকে আসা বল ডি-বক্স হেড নেন তপু বর্মন।
তার হেড জালে জড়ানোর আগে ক্লিয়ার করার চেষ্টা করেন মালদ্বীপের রক্ষণভাগের এক ফুটবলার।
সেটা লাগে তাদের আরেক ডিফেন্ডারের হাতে।
সেখান থেকে বল গ্লাভসবন্দি করে নেন মালদ্বীপ গোলরক্ষক হুসাইন শরীফ।
বাংলাদেশের ফুটবলাররা পেনাল্টির জোরালো আবেদন করলেও সেটা কানে নেয়নি রেফারি।
পরের মিনিটে গোলের উদ্দেশে আরও একটি শট নেয় লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।
তবে দুর্বল শট হওয়ায় সহজে সেটা গ্লাভসবন্দি করে নেন শরীফ।
বাংলাদেশ তাদের কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের দেখা পায় ৪২তম মিনিটে।
প্রায় মাঝমাঠ থেকে সতীর্থের ফ্রি কিক ডি-বক্সে হেড নেন তপু।
সেটা পেয়ে যান অরক্ষিত থাকা রাকিব।
বাকি কাজটা অনায়াসে সেরে দলকে সমতায় ফেরান তিনি।
বাংলাদেশ দলের এ ফরোয়ার্ড আরও একবার গোলের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন বিরতির আগে।
বাঁ প্রান্তে আক্রমণে উঠে গোলের উদ্দেশে জোরালো শট নেন তিনি। তবে দারুণ প্রচেষ্টায় লাফিয়ে সেটি কর্নারের বিনিময়ে ঠেকিয়ে দেন শরীফ।
বিরতির পরও বাংলাদেশ তাদের আধিপত্য ধরে রাখে।
৬৭ মিনিটে দলকে উৎসবে মাতান তারিক কাজী।
জটলার মধ্যে থেকে কয়েকবারের চেষ্টায় মালদ্বীপের জালভেদ করে তিনি দলকে ফেরান লিডে।
চার মিনিট পর আরও একবার প্রতিপক্ষের দুর্গে হানা দেয় লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।
বদলি নামা মিডফিল্ডার শেখ মোর্সালিন ডি-বক্সের কাছ থেকে দুর্দান্ত শট নেন।
সেটি কোনোভাবে ঠেকিয়ে মালদ্বীপকে গোল হজম থেকে রক্ষা করেন শরীফ।
৮৬ মিনিটে দলকে সমতায় ফেরানোর চেষ্টা করেন হামজা।
তবে ডি-বক্সে নেয়া তার হেডের গতি মন্থর হওয়ায় সহজে গ্লাভসবন্দি করে নেন জিকো।
নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে মালদ্বীপের জালে হানা দিয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন মোরসালিন।
তাতে ৩-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে জামালরা।
এ জয়ে লেবানন ও মালদ্বীপের সমান ৩ পয়েন্ট নিয়ে ‘বি’ গ্রুপ থেকে আসরের
সেমিফাইনালের দৌড়ে টিকে রইল বাংলাদেশ।
এর আগে নিজেদের প্রথম ম্যাচে লেবাননের বিপক্ষে শেষদিকের ব্যর্থতায় ২-০ গোলে হেরেছিল জামালরা।
গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে ২৮ জুন তপুদের প্রতিপক্ষ ভুটান।