খুলনার নারী ফুটবলারদের অনুশীলনের সময় ছবি তুলে তাতে অপ্রীতিকর মন্তব্য যোগ করে ছড়িয়ে দিতো কিছু গ্রামবাসী।
এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় চার নারী ফুটবলারকে বেদম মারধর করা হয়েছে।
আহত অবস্থায় তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
তাদের মধ্যে একজনের মাথায় ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় বটিয়াঘাটা উপজেলার তেঁতুলতলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন- মঙ্গলী বাগচি, হাজেরা খাতুন, জুঁই মণ্ডল এবং সাদিয়া নাসরিন।
পরে রোববার দুপুরে এ ঘটনায় সাদিয়া নাসরিন বাদি হয়ে বটিয়াঘাটা থানায় ছয় জনকে আসামি করে মামলা করেছেন।
তারা হলেন- তেঁতুলতলা স্কুল মাঠ এলাকার আলাউদ্দিন (১৬), সালাউদ্দিন (২২), নুর আলম (৪৮), রঞ্জি বেগম (৪০), মনোয়ারা বেগম (৫৫) ও নুপুর খাতুন (২২)।
সাদিয়া সাংবাদিকদের বলেন, অনুশীলনে গেলেই প্রতিনিয়ত লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়।
অনুশীলনের ছবি তুলে এনে বাড়িতে আমার বাবা-মাকে দেখিয়ে আজেবাজে মন্তব্য করেন।
এতে বাবা-মা খেলতে যেতে নিষেধ করেন।
মূলত এসব ছবি তুলে বাড়িতে না পাঠানোর অনুরোধ করলে তারা আমাদের ওপর হামলা চালান।
বোটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাতরানো মঙ্গলী বাগচী বলেন, তার সঙ্গের আরেক নারী
খেলোয়ারের প্রাকটিসের ছবি বিভিন্ন আত্মীয়দের কাছে ছড়িয়ে দেয়া এবং নানা বাজে মন্তব্যের
প্রতিবাদ করায় গ্রামের একটি পরিবার তাদের বেধড়ক মারধর করেছে।
হামলার শিকার সাদিয়া, হাজেরা, জুই মণ্ডলসহ আরও কয়েকজন নারী খেলোয়ার বলেন,
গ্রামের মাঠে কেন তারা হাফপ্যান্ট পরে ফুটবল খেলে, এটাই তাদের অপরাধ।
মামলার এজাহারে জানা যায়, তারা স্থানীয় ‘সুপার কুইন ফুটবল একাডেমিতে’ নিয়মিত অনুশীলন করেন। এ কারণে তাকে প্রতিনিয়ত স্থানীয়দের কাছ থেকে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়।
গত বৃহস্পতিবার একাডেমিতে অনুশীলনের সময়ে নুপুর খাতুন ছবি তোলেন। পরে সেই ছবি সাদিয়ার বাবা-মাকে দেখিয়ে আজেবাজে মন্তব্য করেন।
এ নিয়ে বাবা-মা তাকে বকাঝকা করেন।
শনিবার বিকালে ছবি তুলে বাবা-মাকে দেখানোর কারণ জানতে চান সাদিয়া।
বিষয়টি নিয়ে তাদের বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে সাদিয়াকে গালিগালাজ করেন নুপুর।
প্রতিবাদ করলে মারধর করেন। বিষয়টি বাবা-মা, ক্লাবের কোচ মুস্তাকুজ্জামান মুস্তাক ও অন্য খেলোয়াড়কে জানান।
তারা সাদিয়াকে সঙ্গে নিয়ে শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে নুপুরের বাড়িতে যান। এতে নুপুরের পরিবারের লোকজন ক্ষুব্ধ হন।
পরে আলাউদ্দিন, সালাউদ্দিন, নুর আলম, রঞ্জি বেগম ও মনোয়ারা তাদের ওপর হামলা চালান।
এতে সাদিয়া, মঙ্গলী, হাজেরা ও জুই আহত হন। হামলার সময়ে সালাউদ্দিনের লোহার রডের আঘাতে মাথায় গুরুতর আঘাত পান মঙ্গলী বাগচী।
পরে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘এক মেয়ের মাথায় ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। বাকিরা আশঙ্কামুক্ত। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ ক্রীড়া সংগঠকরা।
তারা বলেছেন, সারাদেশে যখন নারী খেলোয়ারদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উত্থান ঘটছে, তখন এধরনের হামলা ক্রীড়াঙ্গনে ভয়ানক ক্ষতি করবে।
বোটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম, এটা ক্রীড়াঙ্গনের ওপর সাংঘাতিক আঘাত। প্রশাসন এটা সহ্য করবেনা।
এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক বোটিয়াঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ শওকত কবির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি।
পরে পুলিশ জানিয়েছে নুর আলম নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে।
ফুটবলার খেলায় এমন ঘটনায় উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ খেলোয়াড়, তাদের স্বজন ও স্থানীয়রা।
তার এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
সূত্রঃ ৭১ টিভি।