রাজনৈতিক দাবি আদায়ে রাজপথে সরব হয়েছে বিএনপি-জামায়াত ও তাদের মিত্র দলগুলো। গত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের পর হরতাল ও টানা তিনদিনের অবরোধে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে আগুন-সন্ত্রাস, ভাঙচুর এবং হামলা-সংঘর্ষে জড়িয়েছে দলগুলোর নেতাকর্মীরা। আর এসব ঘটনায় পুলিশ ও সাংবাদিকসহ ৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এ অবস্থায় রোববার (৫ নভেম্বর) থেকে দ্বিতীয় দফায় দুইদিনের ‘সর্বাত্মক অবরোধ’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দল দুটি।
এবার অবরোধের আগের রাতেই (শনিবার) রাজধানীর নিউ মার্কেট, সায়েন্স ল্যাব, সায়েদাবাদের জনপথ মোড় এবং গুলিস্তানে চারটি বাসে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় প্রাণহানির কোনো তথ্য মেলেনি।
জানা গেছে, রাত সাড়ে ৭টার দিকে নিউমার্কেট এলাকায় গাউছিয়া মার্কেটের সামনে মিরপুর লিংক বাসে আগুন দেয় অবরোধকারীরা। এর পাঁচ মিনিট পরেই এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্লান সিটি সেন্টারের সামনে গ্রিন ইউনিভার্সিটির একটি বাসে আগুন দেয়া হয়। পরে সায়েদাবাদ জনপথের মোড় ফ্লাইওভারের নিচে আরেকটি বাসে আগুন দেয়া হয়। রাত ১০টার দিকে গুলিস্তানে একটি যাত্রীবাহী বাসেও আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে।
এদিকে ভোর থেকে শুরু হওয়া অবরোধে যান চলাচল করবে কিনা তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।
যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সড়কে গাড়ি নামাতে পরিবহন মালিকদের আহ্বান জানিয়েছেন। নাশকতার আগুনে গাড়ির কিছু হলে ক্ষতিপূরণেরও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
এদিকে শনিবার (৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ সড়কে গণপরিবহন চলবে বলে জানিয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোববার (৫ নভেম্বর) থেকে টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধে ঢাকাসহ সারাদেশে বাস-মিনিবাস চলাচল অব্যাহত থাকবে। মালিক সমিতি সব রুটে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য সমিতি ও কোম্পানির মালিকদের অনুরোধ করেছে। এরআগে, তিন দিনের অবরোধেও যান চলাচলের ঘোষণা দিয়েছিল পরিবহন মালিক সমিতি। তবে সে সময় বিভিন্ন রুটে দূরপাল্লার বাস চলাচল তেমন চোখে পড়েনি।
জানমালের নিরাপত্তায় প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
এদিকে অবরোধে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ও সার্বিক নিরাপত্তায় প্রস্তুত রয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। সংস্থাটির পক্ষ থেকে গণপরিবহন চলাচলে অ্যাসকর্ট সার্ভিস দেয়া হবে। র্যাব ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলাচলকারী ও ঢাকামুখী বাসগুলোকে এই নিরাপত্তা দেবে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, দূরপাল্লার যাত্রীবাহী যান চলাচলে যেন কোনো বাধার সৃষ্টি না হয় সেই ব্যাপারটি নিশ্চিত করবে র্যাব। পরিবহন মালিক বা সংশ্লিষ্টরা চাইলে দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে সহায়তা দিতে আমরা প্রস্তুত।
তিনি আরও জানান, সার্বিক নিরাপত্তায় গোয়েন্দা নজরদারি চলছে। সারাদেশে র্যাবের তিনশর বেশি টহল থাকবে। কিছু স্থানে র্যাব-পুলিশ যৌথ টহল দেবে। নাশকতা বা চোরাগোপ্তা হামলা চালানোর সুযোগ কেউ পাবে না।
এদিকে রাজধানীবাসীর নিরাপত্তায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকেও বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, নগরবাসীর নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। অবরোধ আহ্বানকারীরা প্রকাশ্যে কোনো নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের সুযোগ পাবেন না। আর চোরাগোপ্তা হামলা ঠেকাতে নানারকম প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে।
এছাড়া জনগণের নিরাপত্তায় অবরোধের সময় আনসার-ভিডিপির ৬৫ হাজার সদস্য মাঠে থাকবে বলেও জানানো হয়েছে। সন্ধ্যায় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাহিনীর পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
উল্লেখ্য, বিএনপি-জামায়াতের সমাবেশের দিন থেকে শুরু করে প্রথম দফার তিনদিনের অবরোধে ৯ জনের প্রাণ গেছে। এরমধ্যে সমাবেশের দিন পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ এবং বিএনপির দাবি করা এক যুবদল নেতা প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া সমাবেশের দিন আহত গণমাধ্যমকর্মী রফিক ভূইয়ার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়।
৩০ অক্টোবর হরতালের দিন এক পরিবহন শ্রমিককে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এছাড়া বাসে আগুন দিতে গিয়ে জনতার ধাওয়ায় প্রাণ যায় আরেক বিএনপি কর্মীর। লালমনিরহাটে স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
৩১ অক্টোবর শুরু হওয়া টানা তিনদিনের অবরোধের প্রথম দিন কিশোরগঞ্জে বিএনপির দুই কর্মী এবং সিলেটে যুবদলের এক নেতা প্রাণ হারান।
এছাড়া গত কয়েকদিনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে বিএনপি-জামায়াতকর্মীদের দেয়া আগুনে অ্যাম্বুলেন্স, যাত্রীবাহী বাস, জরুরি পণ্য পরিবহনকারী ট্রাকে অগ্নিসংযোগের তথ্য পাওয়া গেছে।