জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বেকায়দায় রয়েছেন। তিনি নির্বাচনে যাবেন কি যাবেন না— এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগেই জাতীয় পার্টির কো চেয়ার এবং প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ নির্বাচনের তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছেন। সুস্পষ্টভাবে জাতীয় পার্টিতে রওশন এরশাদ পন্থীরা নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছেন। এর ফলে একটা বিপজ্জনক অবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
ক দিন আগেই দলের সভায় জিএম কাদেরকে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। জিএম কাদের পন্থীরা সেই সভায় নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নেই—এমন কথাও বলেছিল। কিন্তু জাতীয় পার্টির অধিকাংশ নেতাই নির্বাচনের পক্ষে। তারা মনে করেন যে, এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা মানেই হল বিএনপিকে সমর্থন দেওয়া। আর বিএনপি হল সেই রাজনৈতিক দল যারা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে অমানবীয় কায়দায় কারাগারে রেখেছিল। তার বিরুদ্ধে প্রহসনের বিচার করেছিল। জাতীয় পার্টির একটি বড় অংশ মনে করে যে যারা বিএনপিকে আন্দোলনে সহায়তা দেবে তারা জাতীয় পার্টিতে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে পরিগণিত হবে। আর এ কারণেই শেষ পর্যন্ত যদি জিএম কাদের নির্বাচনের ব্যাপারে কোন নেতিবাচক ঘোষণা দেয় বা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা থেকে নিজেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত জানায়, তাহলে জাতীয় পার্টির ভাঙন অনিবার্য। এখন জিএম কাদেরের সামনে দুটি বিকল্প রয়েছে। প্রথমত, নির্বাচনে যাওয়া এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে দলের শক্তি সামর্থ্য অর্জন করা এবং দলকে সংগঠিত করা। আর দ্বিতীয় পথ হল দল ভাঙ্গা।
জিএম কাদের নির্বাচনে যাবেন কি যাবেন না—তা নিয়ে বিভিন্ন রকম ধোঁয়াশা ছিল। তিনি একেক সময় একেক কথা বলেছেন। সর্বশেষ তাকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনের চায়ের দাওয়াত দিয়ে ডেকে নিয়ে যান। সেখানেও নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার প্রশ্নে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তার কথা হয়েছে বলে জানা যায়। রাষ্ট্রপতির কাছে জিএম কাদের নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব অনুযায়ী শর্তহীন সংলাপের কথা বলেছিলেন। যদিও রাষ্ট্রপতি তাকে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের গুরুত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু জাতীয় পার্টির মধ্যে অনেকেই সন্দেহ করতেন যে, শেষ পর্যন্ত জিএম কাদের অন্য রকম অবস্থান নিতে পারেন।
একাধিক কারণে যে কাজের ব্যাপারে তাদের সন্দেহ ছিল। প্রথমত, তার সঙ্গে সুশীল সমাজের একটি অংশের খুব সুসম্পর্ক রয়েছে, যারা একটি অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনতে চায়, নির্বাচন বানচাল করতে চায়। তাদের সাথে সুসম্পর্কের কারণেই তাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে জিএম কাদের নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নিতে পারেন বলে কেউ কেউ মনে করছিল। আবার অন্যদিকে কোন কোন মহল মনে করছিল যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে যে জিএম কাদেরের একটি ঘনিষ্ঠতা রয়েছে এবং পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে তিনি খুবই পছন্দের ব্যক্তি। তারাও অনির্বাচিত সরকার আনার জন্য জিএম কাদেরকে ট্রাম্পকার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু একাধিক সূত্র মনে করছে যে জিএম কাদের হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নন। এরশাদের যেমন তৃণমূল পর্যন্ত পুরো জাতীয় পার্টি নিয়ন্ত্রণে ছিল জিএম কাদেরের অবস্থা তেমনটি নন। বরং তাকে ভারসাম্য করেই চলতে হয়। জাতীয় পার্টিতে এখন জিএম কাদেরের চেয়েও রওশন এরশাদের প্রভাব বেশি এবং শেষ পর্যন্ত যদি জিএম কাদের নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাহলে নিশ্চিতভাবেই জাতীয় পার্টি ভাঙনের মুখে পড়বে। এই ঝুঁকি নিলে রাজনীতিতে জিএম কাদেরই পরিত্যক্ত হয়ে যেতে পারেন। আর এ কারণে এখন জিএম কাদের কি সিদ্ধান্ত নেয় সেটি দেখার অপেক্ষায় রয়েছে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, আজ কালের মধ্যে জাতীয় পার্টির অবস্থান পরিষ্কার হবে।
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল অপরাজিতবাংলা ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন oporajitobangla24@yahoo.com ঠিকানায়।