শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কারাদণ্ড সরকারের প্রতিহিংসার প্রতিফলন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, শ্রম আইন লঙ্ঘনের কথিত মামলায় শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইনূসকে ফরমায়েশী রায়ে আজ ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন শেখ হাসিনার আদালত।
এই গণভবনের রায়ে পুরো জাতি লজ্জিত। ফরমায়েশি রায়ের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং ক্ষোভ জানাচ্ছি। প্রতিহিংসার বসবর্তী হয়ে এই রায় যে দেয়া হয়েছে তার প্রমাণ শেখ হাসিনা অব্যাহত ভাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে বিষোদগার এবং তাকে হুমকী দেয়ার ঘটনা প্রমাণ করে। ২০২২ সালের ১৮ মে এক আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা পদ্মা নদীতে টুস করে ফেলে দিয়ে হত্যা করার হুমকী দেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পদ্মা সেতু থেকে পানিতে ফেলে চুবিয়ে মারার হুমকি দিয়েছিলেন। তখন থেকেই স্পস্ট হয় নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে তার গভীর দুরভিসন্ধি করা হচ্ছে। দেশে আওয়ামী লাখ লাখ কোটি টাকা পাচারের হোতা, লুটেরা, ব্যাংক ডাকাত, ঋণ খেলাফিদের কিছুই হয় না। অথচ সম্পূর্ণ সাজানো গোছানো রায়ে সাজা দেয়া হয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতো জাতির গর্বকে। গতকাল সোমবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
নতুন বছরের প্রথম দিনে দেশের স্বাধীনতাপ্রিয় গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে মোটেই সুখকর নয় মন্তব্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, পাতানো তামাশার নৌকা আর ডামীদের নির্বাচন ঘিরে সারাদেশে কায়েম করা হয়েছে চরম নৈরাজ্যকর এবং ভয়ংকর পরিস্থিতি। পুলিশ এবং আওয়ামী হানাদার তাণ্ডবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় মুক্তিকামী জনগণ গত তিনমাস ঘর-বাড়ী ছেড়ে ফেরারী ও উদ্বাস্তু জীবন যাপন করছে। ভোট ডাকাত শেখ হাসিনার নির্দেশে ১৮ কোটি মানুষের মৌলিক ভোটাধিকার আদায়ে আন্দোলনরতদের গ্রেফতারে হন্যে হয়ে উঠেছে পুলিশের পোশাক পরা আওয়ামী নাৎসীরা। জনগণের ওপর চলছে স্মরণকালের সবচাইতে ভয়াবহ নিপীড়ন-বর্বরতা।বুভুক্ষদের আর্তনাদে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে অর্থ-বিত্তের পাহাড়ে বসা লুটেরা আওয়ামী লীগের সুখ উৎসবের রোশনাই। কোন কোন জনপদে শ্মশানের নীরবতা নেমে এসেছে।
তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণ এখন নিজ দেশেই পরাধীন। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার অবৈধ ক্ষমতালিপ্সার খায়েশ মেটাতে বাংলাদেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। স্বাধীনতার গৌরব ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে এখন বিনাভোটে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে রেখেছে শেখ হাসিনার ‘ডামি সরকার’। কখন কাকে ধরতে হবে, কাকে মারতে হবে, রাখতে হবে, সীমান্তের ওপারে ফেলে আসতে হবে, সব সিদ্ধান্তই আসে অন্য দেশ থেকে। কয়েকদিন আগেই ‘ডামি নির্বাচনে’ এক ‘ডামি প্রার্থী’ প্রকাশ্যেই নিজেকে ভারতের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এমন নির্লজ্জ স্বীকারোক্তির মাধ্যমে আবারো প্রমাণিত হয়েছে, এই ‘ডামি সরকারের’ স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেয়ারও ক্ষমতা নেই।
২০১৪ সালে বিনা ভোটে, ২০১৮ সালে রাতের ভোটের পর এবারে ২০২৪ সালের নির্বাচনে, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) শুধুমাত্র তার দল, উচ্ছিষ্টভোগী জোট, গৃহপালিত বিরোধীদল, গোয়েন্দা সংস্থার গড়া নকল দল তথাকথিত কুইন্স পার্টি, ভূইঁফোড় পার্টি, ড্রিঙ্কস পার্টি, ছিন্নমূল পার্টি এবং খুচরা কিছু পার্টি আর শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থীদেরই দিয়েই ভাগ বাটোয়ারার তামাশার নির্বাচনে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। আদতে এই ৩০০ আসনের নির্বাচনে ২ হাজার ২৬০ জন প্রার্থী হলেও ভোটার কেবল একজনই। তিনি খোদ শেখ হাসিনা, তিনি যাদের পছন্দ করবেন তাকেই সিল মোহর দিয়ে দলদাস কাজী হাবিবুল আউয়াল তার আওয়ামী নির্বাচন কমিশনারের মাধ্যমে নির্বাচিত ঘোষণা করবেন।
পাতানো আমি-ডামির নির্বাচন জমাতে পারছেনা অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বিবিসির প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, ‘আগামী ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে জাতীয় এই নির্বাচনের অনিবার্য ফলাফল কী হবে তা এরই মধ্যে স্পষ্ট।’ ভোট বর্জনে সারাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে দেখে আতংকিত শেখ হাসিনাসহ তার পুরো মাফিয়াচক্র। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এখন লাঠিয়ালের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। আওয়ামী লীগ আর সিইসি যেন সহোদর দুই ভাই। জনগণের ভোট না দেয়ার সাংবিধানিক অধিকার বন্দুকের নলের মুখে হত্যা করতে চান সিইসি। ইসির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন গোটা বিশ্ববাসী নিবিড়ভাবে অবলোকন-পর্যবেক্ষণ করছে। বাংলাদেশকে আপনারা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। এই ভোট ডাকাত সরকারের পতনের সাথে সাথে আপনাদের রক্ষা করার কেউ থাকবে না।