বিডেনকে আমেরিকান বিদেশ নীতি মেশিনের একটি ইঞ্জিন বলতে পারেন । কংগ্রেসে থাকাকালীন সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন এবং পরবর্তী সময়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে বারাক ওবামার বিশ্ব পরিচালনার মূল বিষয়গুলির ব্যক্তিত্ব তিনিই ছিলেন। বিডেন জানেন যে বিদেশনীতির নিয়ন্ত্রণ কিভাবে রাখতে হাতে হয়।
চার বছর পর প্রেসিডেন্ট হিসেবে বিডেন নিজেকে ওভাল অফিসে ফিরে দেখবেন মধ্যপ্রাচ্য তার রেখে যাওয়া অবস্থানেই আছে। সৌদি ও ইসরাইল কেবল ট্রাম্পের জামাতার সাথে কিছুদিন শান্তি গেম খেলেছেন । তিনি এই সমস্যাগুলি সমাধান করবেন এমন প্রত্যাশা করা খুব বেশি ঠিক হবেনা – কোনও রাষ্ট্রপতিই পারেননি । তবে মধ্যপ্রাচ্যে সম্পর্ক সেলাই করার জন্য এখনই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলি নিতে হবে। ইসরাইল ও সৌদি আরব বেশ দেরিতে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছে।
ইরান কে নিবৃত্ত রাখার প্রয়াস :
ইরান এবং উত্তর কোরিয়ার মতো দেশগুলি পারমাণবিক অস্ত্রের প্রায় নিকটে । ট্রাম্পের প্ৰচেষ্টা ছিল দেশ দুটোকে ভয় অথবা অর্থের লোভে পারমাণবিক অস্ত্রধারী হতে বিরত রাখা। তিনি প্রায় সফলতাও পেয়েছিলেন, হয়তো ট্রাম্প পরবর্তী মেয়াদে সফল হতেন! উস্কানি থাকা সত্বেও ইরানের সাথে যুদ্ধ এড়িয়ে গেছেন তিনি। সে হিসেবে ট্রাম্প বেশ সফল ছিলেন মধ্যপ্রাচ্যের নিয়ন্ত্রণে।
“যদি ইরান তার পারমাণবিক দায়িত্ব পালনে ফিরে আসে তবে আমি জেসিপিওএতে প্রবেশ করবো” বলেছিলেন বাইডেন । আর ইরান যদি পারমাণবিক অস্ত্রধারী হতে চেষ্টা চালিয়ে যায় তবে তা তেহরানের কুৎসিত আচরণ হিসাবে গণ্য করবেন ।
তবে বিডেন কীভাবে ইরানের মারাত্মক আঞ্চলিক আচরণ, বিশেষত ইরাক, লেবানন ও সিরিয়ার মতো দেশগুলিতে সশস্ত্র মিলিশিয়াদের সমর্থন প্রতিরোধ করবেন, তা এখনও পাওয়া যায়নি -যদিও এই সমস্যাটি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এটি ইরানের পারমাণবিক অস্ত্রধারী হওয়ার থেকেও মারাত্নক আচরণ হিসেবে দেখছে সৌদি , আমিরাত ও ইসরায়েল জোট।
ইসরাইল ফিলিস্তিন সমস্যা দ্বি রাষ্ট্র ভিত্তিক :
ট্রাম্পের সাথে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর স্বাচ্ছন্দ্য এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকার আরও লঙ্ঘন করার আকাঙ্ক্ষা ডেমোক্র্যাটরা খুব সমালোচনা করেছেন কংগ্রেসে।
বিডেন প্রায়শই বলেছিলেন যে ইস্রায়েলের প্রতি দায়বদ্ধতা তার প্রশাসনের সময় “আয়রনক্ল্যাড” হবে, তবে তার ঘনিষ্ঠরা বলছেন যে তিনি ইসরাইল কে আগের রাষ্ট্রপতিদের চেয়ে কঠোরভাবে চাপ দেবেন ফিলিস্তিনের অধিকার রক্ষার জন্য তবে ইস্রায়েলের সুরক্ষার জন্য আমেরিকার সমর্থনকে হ্রাস করবেন না।
বিডেন অবশ্য সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনি মধ্যপ্রাচ্যের ইসরাইল এর জোটবদ্ধকরণের বিরোধী। ক্ষুদ্র রাষ্ট্র ইসরাইলের সাথে সৌদি বাহরাইন আমিরাতের জোটবদ্ধতা মধ্যপ্রাচ্যের কি কাজে লাগবে সেটাও বিবেচ্য। ইসরাইল ফিলিস্তিন দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছেন তিনি।
কিন্তু সমালোচকরা বলছে, বিডেন দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পরিবর্তে বর্তমান ইস্রায়েলি-প্যালেস্টাইনের দ্বন্দ্ব সংকট পরিচালনা করতে সময় পার করে দেবেন । তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে আর রাষ্ট্রপতি হবেন না।
সৌদি ইস্যু, সালমানের বন্ধু কুশনার আর নেই:
মধ্যপ্রাচ্যের অন্য মিত্র হল সৌদি আরব। ট্রাম্পের অধীনে, সৌদি আরব আমেরিকার বেশ নিকটবর্তী হয়ে উঠেছে – মূলত ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এবং ট্রাম্পের জামাতার সম্পর্কের কারণে।
তবে অনেক ডেমোক্র্যাট বিশেষত প্রগতিশীলরা, সৌদি আরবের প্রতি মার্কিন সহায়তার নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন – জামাল খাশোগির হত্যায় শীর্ষ সৌদি নেতাদের হাত থাকা এবং ইয়েমেনে সৌদি সৃষ্ট যুদ্ধের ঘোর বিরোধী তারা । বাইডেন ইয়েমেন যুদ্ধ সরাসরি বন্ধ করার পক্ষপাতী।
তবে, বাইডেনের জন্য সমস্যা হল বিগত চার বছরে সৌদি আরব ও আরব আমিরাত এ এলাকায় নতুন আঞ্চলিক সামরিক শক্তি হিসেবে আবির্ভুত হয়েছে।
বিডেন বলেছেন, মার্কিন-সৌদি নীতিমালার আগের যুগে আর ফিরে যেতে হবে না । মার্কিন অস্ত্র ও অর্থায়নের বিনিময়ে ইরানের বিরুদ্ধে সস্তা সৌদি তেল এবং বাণিজ্য বোঝা টানতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র কে।
সে যাহোক, খারাপ খবরটি হ’ল বিডেন কারও কারও মতে কখনও বিশ্ব মঞ্চে সফল হন নি। তিনি যুদ্ধ পরবর্তী ইরাকের প্রচেষ্টা আরও খারাপ করেছেন, স্বৈরাচারী নেতাদের খুব কাছে এসেছিলেন এবং কংগ্রেসে বা ওবামার 2নং হিসাবে তাঁর বৈদেশিক নীতির কোনও স্বাক্ষর নেই।
মুসলিমদের প্রতি নীতি:
চিত্র, ইলহান ওমর ও তালেব ,দুই ডেমোক্রেট সদস্য, বাইডেনের বিদেশনীতির প্রভাবক।
মুসলিমদের সাথে ট্রাম্প প্রশাসনের বিভেদ প্রসঙ্গে বিডেন বলেছিলেন, “নিরাময়ের পরিবর্তে আমরা ছিঁড়ে যাচ্ছি এবং আমি তা করতে অস্বীকার করব । রাগ ও বিভক্তির ছোবলে এই অবিশ্বাস আমাদের জাহাজ ডুবিয়ে রাখবে । কিন্তু আমাদের অনেক উজ্জ্বল ভবিষ্যত রয়েছে।”
একজন প্রার্থী হিসাবে ট্রাম্প মুসলমানদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের “সম্পূর্ণ শাটডাউন” দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এই নিষেধাজ্ঞাকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বিডেন ।
মুসলিমদের প্রতি তিনি বলেছেন, “রাষ্ট্রপতি হিসাবে আমি আমাদের সমাজ থেকে ঘৃণার বিষ ছিঁড়ে ফেলার জন্য আপনাদের সাথে কাজ করব, আপনাদের অবদানকে সম্মান করব । একসাথে কাজ করার জন্য আমরা প্রস্তুত তাই আসুন আমরা বিশ্বাসকে ছড়িয়ে দিই”।
সবশেষে,
বিডেন শুরু থেকেই কোভিড -১৯ ও জলবায়ু পরিবর্তন এই দুটি বিষয়ে মনোযোগ দেবেন। এদুটো বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী হুমকি এবং কেবল প্রয়োজনের বাইরে নয়, তিনি এই সমস্যাগুলি ট্রাম্পের চেয়েও বেশি বোঝেন। এটুকুই সান্তনা বিশ্ববাসীর।