ঢাকাশনিবার , ১ মে ২০২১
  1. অনান্য
  2. অপরাধ ও আইন
  3. অভিবাসীদের নির্মম জীবন
  4. অর্থনীতি
  5. আত্মসাৎ
  6. আন্তর্জাতিক
  7. ইতিহাস
  8. উদ্যোক্তা
  9. এশিয়া
  10. কৃষি
  11. ক্যাম্পাস
  12. খেলাধুলা
  13. গণমাধ্যম
  14. গল্প ক‌বিতা
  15. চট্টগ্রাম বিভাগ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বাবুনগরীর ত‌ড়িৎ পা‌ল্টে যাওয়া, ভাস্কর্য মু‌র্তি‌কে হালাল ফ‌তোয়া দি‌তে প্রস্তুত তি‌নি!

নিজস্ব প্রতিবেদক
মে ১, ২০২১ ১২:০৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মাত্র কিছু‌দিন আগেও হেফাজত আমীর জুনা‌য়েদ বাবু নগরীর নেতৃ‌ত্বে হেফাজতে ইসলা‌মের নেতা‌দের জ্বালাময়ী বক্ত‌ব্যে কেঁ‌পে উঠে‌ছি‌লো বাংলা‌দেশ। ধ্বংসস্তু‌পে প‌রিণত হ‌য়ে‌ছি‌লো সি‌লেট, ব্রাক্ষনবা‌ড়িয়ার ম‌তো সমৃদ্ধ শহর, রণ হুংকা‌রের বজ্রপাত ঘ‌টে‌ছি‌লো জিহা‌দের ডা‌কে, ভাস্কর্য মা‌নি না, সর্বস্ত‌রে ইসলা‌মের কা‌য়েম, মা‌নি না নারী নেতৃত্ব, কা‌ফের ছাত্রলী‌গের সা‌থে বি‌য়ে হারাম, এদের মৃত্যু‌তে জানাযা পরা‌নো হ‌বে না, ইত্যা‌দি ইত‌িবৃত্তান্ত ফ‌তোয়া‌তে নি‌জে‌দের ভা‌সি‌য়ে দি‌য়ে‌ছি‌লেন ইসলা‌মের হেফাজত করা এসব হেফজ‌তে নেতা সমর্থকরা।

‌কিন্তু হঠাৎ যে‌নো সব কিছু ভোলভা‌জির ম‌তো উবে গে‌লো। পাল্টে গেলেন হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। এখন তিনি উল্টো সুরে কথা বলছেন।
কদিন আগেও তিনি বলেছিলেন, তালিকা দিন যারা আছে সবাইকে নিয়ে জেলে যাবাে। কিন্তু এখন তিনি জেলে না জাবার জন্য এদিকে সেদিক লবিং করছেন। তার হয়ে দৌড়ঝাঁপ করছেন জাতীয় পার্টির দুজন নেতা।
এছাড়াও চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের দুজন নেতার সাথেও জুনায়েদ বাবুনগরী নিয়মিত যােগাযােগ করছেন। তাদের কাছে বারবার অনুনয় করছেন, তারা যেন বাবুনগরীকে জেলে যাওয়া থেকে রক্ষা করেন। সরকারের একাধিক মন্ত্রীর কাছেও জুনায়েদ বাবুনগরীর বার্তা দেওয়া হয়েছে। সরকার যা বলবে, সেভাবেই তিনি চলবেন তবু তিনি জেলে যেতে চান না। আর তাই ব্যাপক হম্বিতম্বি করা জুনায়েদ বাবুনগরীর গলার স্বর নরম হয়ে গেছে। শুধু জেল সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে নয়, হেফাজতের আমির হওয়ার পর থেকে যা যা বলেছিলেন বাবুনগরী, এখন সবকিছু থেকে তিনি পিঁছু হটছেন।

নভেম্বরে হেফাজতের আমির হওয়ার পর তিনি বলেছিলেন, ইসলাম যেখানে বিপন্ন হবে, আক্রান্ত হবে সেখানেই তারা কথা বলবেন এবং মাথা ঘামাবেন। এখন বাবুনগরী বলছেন, হেফাজতে ইসলাম কওমি মাদ্রাসার বিষয় ছাড়া অন্য কোনাে বিষয়ে মাথা ঘামাবে না এবং এই দায়িত্ব হেফাজতের নয়। তিনি বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ ও স্থাপন যে কোনাে মূল্যে ঠেকাবেন। এখন তিনি বলছেন, হেফাজত প্রয়ােজনে এই ভাস্কর্য নির্মাণের পক্ষে ‘ফতােয়া দিবেন!

বাঁচার জন্য এখন আগের অবস্থানও পাল্টে ফেলেছেন বাবুনগরী। ২৬-২৭ মার্চের পর সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বাবুনগরী বলেছিলেন, সরকার যদি হেফাজত নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে তাহলে সারাদেশে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলবে। সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে না। এখন হেফাজতের শীর্ষ নেতাদেরকে গ্রেপ্তার করা হলেও বাবুনগরী চুপচাপ।

সংগঠনে এক অদ্ভূত দোটানায় পড়েছেন জুনায়েদ বাবুনগরী।
দলের অন্য নেতারা বলছেন, জুনায়েদ বাবুনগরী আমাদের আমির, সংগঠনের এতগুলাে নেতা গ্রেপ্তার হলাে অথচ তিনি চুপচাপ। তাদের মুক্তির জন্য হুজুর কিছুই করছেন না। এ প্রসঙ্গে হেফাজতের অনেক নেতাই ২০১৩ এর উদাহরণ দিচ্ছেন। সে সময় হেফাজতের অনেক নেতা গ্রেপ্তার হন। আহমদ শফী তখন ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে সরকারের সাথে দেন-দরবার করে তাদের মুক্ত করতে সক্ষম হন। বাবুনগরীকে এখন সেই কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন নেতৃবৃন্দ। তবে তাদের মতে, জুনায়েদ বাবুনগরী শুধু নিজে বাঁচার জন্য অন্যদেরকে সামনে ঠেলে দিচ্ছেন। এ কারণেই হেফাজতে তার অবস্থা কোণঠাসা হয়ে গেছে।

হেফাজতের কেন্দ্রীয় ১৯ জন নেতা এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন। এদের মধ্যে ১২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এড়াও সারাদেশে মাঠ পর্যা‌য়ে হেফাজতের দেড় শতাধিক নেতা-কর্মী আটক হয়। তাদের অ‌নেককেই রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

একইসাথে পুলিশের তালিকায় আছেন দেশের বিভিন্ন জেলার ৪ শতাধিক নেতার তালিকা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর় সূত্রে জানা যায়, আটককৃত হেফাজত নেতাদেরকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবা‌দে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

আইন প্রয়ােগকারী সরকারি সংস্থার সূত্রগুলাে বলছে, হেফাজতকে মূলতঃ ব্যবহার কৱেছিলাে বিএনপি এবং জামায়াত। বিএনপি এবং জামা‌য়াত তাদেৱ সরকার‌বি‌রোধী আন্দোলনকে উসকে দেয়ার জন্য এবং সরকারকে চাপে ফেলার জন্য হেফাজতকে ব্যবহার করেছিলো। এজন্যই হেফাজত‌কে আন্দোলন করার ক্ষেত্রে প্র‌লো‌ভিত করেছিলাে।
আর কীভাবে হেফাজত‌কে প্রলােভিত করা হ‌য়ে‌ছি‌লো এ সম্পর্কে সংগঠনের আটককৃত নেতারা চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন। এই তথ্যগুলাে এতো বেশি চাঞ্চল্যকর এবং ভয়ানক যে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলাে রীতিমত হতবাক হয়ে গে‌ছেন। এসব প্র‌লোভ‌নে শীর্ষ হেফাজ‌তে ইসলাম নেতা‌দের লোভনীয় আর্থিক সু‌বিধা দেওয়া হ‌য়ে‌ছি‌লো।
‌বিএন‌পি জামায়াত চে‌য়ে‌ছি‌লো ন‌রেন্দ্র‌ মোদী ইস্যু‌তে হেফাজ‌তে ইসলাম‌কে দি‌য়ে সরকার ও প্রশাসন‌কে কোনঠাসা ক‌রে পেছন থে‌কে সরকার‌কে পত‌নের মরন কামড় দে‌বে। তার কার‌নেই বঙ্গবন্ধুর ভাস্ক‌র্যের ম‌তো অত্যন্ত স্পর্শকাতর ইস্যু‌কে বে‌ছে নেয় প‌রিকল্পনাকারীরা। মাদ্রাসার সাধারন ছাত্র‌দের খুব সহ‌জেই বুঝা‌তে সক্ষম হয় যে, এই ভাস্কর্য কোন ইসলা‌মিক রা‌ষ্টের জন্য হারাম। শুরু হয় সারা‌দে‌শে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙ্গার প্র‌তি‌যোগীতা। বিএন‌পি-জামাত ভে‌বে‌ছি‌লেন যে, বঙ্গবন্ধু ভাস্ক‌র্যে হাত দি‌লে সরকার উত্তপ্ত হ‌য়ে উঠ‌বে এবং কোন না কোন ভুল ক‌রে বস‌বে। আর সে ভু‌লের সু‌যোগ‌টি কা‌জে লাগা‌বে বিএন‌পি-জামাত। কিন্তু সরকার তা‌দের প‌রিকল্পনা‌টি বুঝ‌তে পারেন এবং তুড়িৎ কোন এ্যাকশা‌নে না গি‌য়ে প‌রি‌স্থি‌তি অনুধাব‌নে প‌রি‌স্থি‌তির সামাল দেয়।

আইন প্রয়ােগকারী সংস্থার একাধিক সূত্র বলছে, বিএনপি মূলতঃ প্রথম বৈঠক করে নিজেদের মধ্যে এবং তারপর লন্ডন থেকে তারেক রহমান সেই বৈঠকে সরকারকে বিপাকে ফেলার উদ্দেশ্যে দেশজুড়ে তাণ্ডব চালানাের উপর গুরুত্বারােপ করেন।
নিপুণ রায়ের বাস পােড়ানাের নির্দেশের ঘটনার পর থেকে বিএনপি’র ওপর সরকারের নজরদারি বা‌ড়ে, সেই সাথে দলটির তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীরা যেন সুসংগঠিত হয়, সে কারণে ভিন্ন পরিকল্পনা নেয়া হয় বিএন‌পি জামা‌তের পক্ষ থে‌কে। ঠিক করা হয়, নাশকতার জন্য ব্যবহার করা হবে মাদ্রাসার ছাত্রদের। নরেন্দ্র মােদির আগমনের উছিলাকে ব্যবহার করে তাদের উসকে দেয়া হবে। আর সেই সাথে ছাত্ররা ধর্মের জিগির তুলে রাস্তায় নেমে পড়বে। রাস্তায় বিক্ষোভে না নামলে এতিম, দরিদ্র, অসহায় মাদ্রাসা ছাত্রদের ১৫ দিনের খাবার বন্ধ করে দেওয়া হ‌বে ব‌লে ‌ঘোষনা দেয় অ‌নেক মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ, যারা হেফাজতের নেতা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বলছে, হেফাজতের মধ্যে ২০ দলীয় জােটের
আধিপত্য ব্যাপক। সম্প্রতি বিলুপ্ত হওয়া ১৫১ জনের কমিটিতে ৮০ জনই ছিলেন বিএনপি জামায়াতসহ সমমনা রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। খেলাফ‌তে মজলিস, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন সহ গ্রুপগুলি মূলতঃ নাশকতার আন্দোল‌নের নেতৃত্ব দেয়।

‌হেফাজত নিজেদেরকে অরাজ‌নৈতিক সংগঠন দাবি করলেও আহমদ শফী’র মৃত্যুর পর তাদের ম‌ধ্যে ক্ষমতা দখলের রাজনী‌তি‌ শুরু হয় ব্যাপকভা‌বে। পাকিস্তানি জঙ্গিবাদী ভাবধারায় লালিত জুনায়েদ বাবুনগরী হেফাজতের দা‌য়িত্ব গ্রহণের পর সংগঠনটি মূলতঃ ২০ দলীয় জোটের ভাড়া‌টি‌য়ে সংগঠনে প‌রিনত হ‌য়ে‌ছে। তারা সরকার বিরোধী
নানান কর্মসূচিতে সংগঠনের অধীনস্ত মাদ্রাসার লাখ লাখ ছাত্র‌কে ব্যাবহার করে
নিজেদের প‌কেট ভারী ক‌রতে থা‌কেন।

সরকারও জুনায়েদ বাবুনগরীকে এখন বিশ্বাস করতে পারছেন না। সরকার দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বাবুনগরীকে গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া চলছে। সবদিক গুছিয়ে এগােতে চায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অর্থাৎ কোনাে ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে নয় বরং সত্যিকারের একজন অপরাধীকে তার অপরাধের তথ্য প্রমাণ নিয়েই গ্রেপ্তার করা হবে।

অন্য‌দি‌কে, বর্তমা‌নে দেশজু‌ড়ে প্রশাস‌নের সাঁড়া‌শি অ‌ভিযা‌নে ব্যতিগ্রস্থ হ‌য়ে প‌ড়ে‌ছেন হেফাজ‌তের কে‌ন্দ্রীয় ও মধ্যমসা‌রির নেতারা। কে‌ন্দ্রের শীর্ষ নেতা‌দের গ্রেফতা‌রের পর আটককৃত হেফাজ‌তে ইসলা‌মের নেতা কর্মী‌দের ভ‌বিষ্যৎ কী তা নি‌য়ে‌ কোন সিদ্ধান্ত দি‌তে পার‌ছেন না হেফাজ‌তের আমির জুনা‌য়েদ বাবুনগরী। হেফাজত‌ে ইসলাম সং‌শ্লিষ্টরা এখন অ‌নেকটাই নি‌শ্চিৎ যে, তা‌দের আমির জুনা‌য়েদ বাবুনগরী’র কাছ থে‌কে দল‌টির বিপদগ্রস্থরা কোন সহ‌যোগীতা পাবেন না। তি‌নি এখন নি‌জে‌কে সরকার এবং প্রশাস‌নের কা‌ছে নি‌জের ক্লিন ইমেজ তৈরী‌তে ব্যস্ত। জেল ও মামলা থে‌কে নি‌জে‌কে রক্ষা কর‌তে বর্তমা‌নে গ্রেফতারকৃত‌দের বিষ‌য়ে কোন কিছু সিদ্ধান্ত দেবার ক্ষমতাও হা‌রি‌য়ে ফে‌লে‌ছেন। গ্রেফতারকৃত হেফাজত নেতা-কর্মী‌দের ঘ‌নিষ্ঠরা মামলা হামলা থে‌কে তা‌দের প‌রি‌চিত‌দের মুক্ত কর‌তে বাবুনগরীর সহ‌যোগীতা চাই‌লেও তারা তা পা‌চ্ছেন না।

বর্তমা‌নে হাটহাজারী মাদ্রাসা অঙ্গনের ভিতরও হেফাজতে’র আমির জুনা‌য়েদ বাবুনগরীর হঠাৎ আগের অবস্থান থে‌কে স‌রে এসে সরকা‌রের নতজ‌ানু হবার বিষ‌য়টি‌‌কে নি‌য়ে ক্রমশঃ অস‌ন্তোষ তৈরী হ‌চ্ছে ব‌লে মাদ্রাসার দা‌য়িত্বশীল সূ‌ত্রে জানা যায়। তারা এখন কোনভা‌বেই তা‌দের আমির জুনা‌য়েদ বাবুনগরী’কে ‌বিশ্বাস কর‌তে পার‌ছেন না। এভা‌বে চল‌তে থাক‌লে খুব অল্প সময়ের ম‌ধ্যে হেফাজ‌তে ইসলাম সংগঠন‌টরি বিলুপ্ত ঘটা সম‌য়ের ব্যাপার ব‌লে ম‌নে কর‌ছেন হেফাজ‌তে ইসলাম সং‌শ্লিষ্ট ব্য‌ক্তিরা।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল অপরাজিতবাংলা ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন oporajitobangla24@yahoo.com ঠিকানায়।