একনেক সভা
সরকার এবার বিভন্ন মহাসড়ক থেকে টোল আদায় করার চিন্তা ভাবনা করছে। গতকাল একনেক এর সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেশ কিছু বিষয় নিয়ে অনুশাসন দিয়েছেন। মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্প নিয়ে আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্মাণ খরচের কথা বিবেচনায় রেখে সামান্য হলেও মহাসড়কে টোল আদায় করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে দাউদকান্দি-গোয়ালমারী-শ্রীরায়েরচর (কুমিল্লা)-মতলব উত্তর (ছেঙ্গারচর) জেলা এটা কীভাবে আদায় করা যায়- সে বিষয়ে পরিকল্পনা করার জন্য তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, “সব সড়ক টোলমুক্ত হবে এটা ঠিক নয়। রাস্তাঘাট মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ যাতে টোলের টাকা থেকে আসে সে ব্যবস্থা করা যেতে পারে।” বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করে বলেন প্রধানমন্ত্রী এও নির্দেশ দিয়েছেন যে, টোল আদায় প্রক্রিয়ায় যাতে সড়কে যানজট সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকার।
১৮ আগস্ট মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং একনেক চেয়ারপারসন হিসেবে বৈঠকে সভাপতিত্ব করে এই নির্দেশনা দেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে সংযুক্ত হন। বিভিন্ন প্রকল্পের সংশ্নিষ্ট সচিবরা রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনের একনেক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে বৈঠকে যোগ দেন।
গতকাল সভায় একনেকের ৭টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। ছয়টি নতুন, বাকিটা সংশোধিত প্রকল্প। এসব প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৪৬২ কোটি টাকা। অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে- বারৈয়ারহাট-হেঁয়াকো-রামগড় সড়ক প্রশস্তকরণ, দাউদকান্দি-গোয়ালমারী-শ্রীরায়েরচর মতলব উত্তর (ছেঙ্গারচর) জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্তকরণ, খুলনা সড়ক জোনের আওতাধীন মহাসড়কে বিদ্যমান সরু ও ঝুঁকিপূর্ণ পুরোনো কংক্রিট সেতু/বেইলি সেতুর স্থলে কংক্রিট সেতু নির্মাণ। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাউফল উপজেলার ধুলিয়া লঞ্চঘাট থেকে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপাশা রক্ষা প্রকল্প, কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ (দ্বিতীয় পর্যায়), মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের গভীর সমুদ্রে টুনা ও সমজাতীয় পেলাজিক মাছ আহরণে পাইলট প্রকল্প এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ‘ইমার্জেন্সি মাল্টি সেক্টর রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসপন্স (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্প।
একনেক চেয়ারপারসন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অতিরিক্ত ব্যয়ের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উন্নয়নের প্রায় প্রকল্পে অতিরিক্ত ব্যায় বিষয়ে সমালোচনা আছে দীর্ঘদিন ধরে।” তিনি প্রকল্প উন্নয়নে অতিরিক্ত ব্যায়ের সমালোচনা করে বলেন, “অপচয় রোধে বিভিন্ন সময় অনুশাসন দেওয়া সত্বেও প্রকল্পের কেনাকাটায় অপচয়ের মাধ্যমে দুর্নীতি এবং অপ্রয়োজনীয় গাড়ি কেনা ও স্থাপনা নির্মাণের ঘটনা বন্ধ হয়নি।”
এসময়, ‘বারৈয়ারহাট-হেঁয়াকো-রামগড় সড়ক প্রশস্তকরণ’ প্রকল্প এবং ‘খুলনা সড়ক জোনের আওতাধীন মহাসড়কে বিদ্যমান সরু ও ঝুঁকিপূর্ণ পুরোনো কংক্রিট সেতু বা বেইলি সেতুর স্থলে কংক্রিট সেতু নির্মাণ’ প্রকল্প নির্মাণ পরিদর্শনের জন্য দুটি বাংলো নির্মাণের প্রস্তাব করা হলে প্রধানমন্ত্রী তা নিজ হাতে কেটে দেন। এ সময় প্রকল্পের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় তাই দুটি বাংলো নির্মাণের প্রস্তাব নিজ হাতে কেটে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সে সাথে দু’টি অপ্রয়োজনীয় দুটি ডাক বাংলো বাবদ প্রস্তাব দেওয়ায় প্রায় ছয় কোটি টাকা সাশ্রয় হলো। সে সাথে তিনি এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, প্রধানমন্ত্রী ওই বাংলোর বিষয়ে বলেছেন, “সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সারাদেশে অনেক বাংলো রয়েছে। কাজেই কোনো প্রকল্পের আওতায় নতুন করে আর বাংলো নির্মাণের প্রয়োজন নেই।” পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, তারা মনে করেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার ফলে প্রকল্প এলাকায় কর্মকর্তাদের অস্থায়ী অবস্থানের প্রয়োজন নেই। দিনে গিয়ে পরিদর্শন শেষে কর্মস্থলে ফেরা সম্ভব।
বন্যা প্রতিরোধে খাল খননের নির্দেশনা দিয়েছেন একনেক চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া তিনি বাঁধ রক্ষায় স্লুইসগেট নির্মাণ বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। বন্যা এবং নদীভাঙন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভাঙনের মুখে থাকা বিভিন্ন স্থাপনা রক্ষায় মডেলিং করতে হবে, যাতে এসব নদীভাঙনের আগে রক্ষা করা যায়।”