বহু বছর ধরে চলে আসা দেশের কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিতর্কিত বিব্রতকর নামগুলো পরিবর্তন করতে যাচ্ছে সরকার।
তেমনি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার জারিয়া ইউনিয়নের একটি স্কুলের নাম ছিল ‘চোরের ভিটা’ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। স্কুলটির এমন নামে এলাকাবাসী থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীরা পর্যন্ত লজ্জাবোধ করেন। স্কুলের নাম জিজ্ঞেস করলে তারা বলতে বলতে চান না। এরপর এলাকাবাসী স্থানীয় শিক্ষা অফিস ও প্রশাসনের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে নাম পরিবর্তনের আবেদন করে উদ্যোগ নেয় স্কুলটির নাম পরিবর্তনের। গত মঙ্গলবার স্কুলটি ‘আলোর ভুবন’ নাম প্রস্তাব করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছেন জেলা প্রশাসক মঈন উল ইসলাম। এ ব্যাপারে ডিসি বলেন, গ্রামের নামেই সাধারণত বেশিরভাগ সরকারি স্কুলগুলো প্রতিষ্ঠা করা হয়। সে কারণেই হয়তো এটিও হয়ে গেছে। গ্রামের এমন নাম কেনইবা রাখা হলো এটি আসলে বোধগম্য নয়। এলাকাবাসীর উদ্যোগে নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব পাঠিয়েছি।
১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত আরেকটি বিতর্কিত স্কুলের নাম চুমাচুমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’। এটি রাঙামাটি জেলার জুরাছড়ি উপজেলায় অবস্থিত। জুরাছড়ি রাঙামাটি জেলার জুরাছড়ি উপজেলার একটি ইউনিয়ন। জুরাছড়ি, কুসুমছড়ি এবং লুলাংছড়ি নামের ৩টি মৌজা নিয়ে গঠিত এ ইউনিয়ন। স্থানীয়দের ভাষ্য, যক্ষা মহাজনের প্রপিতামহ এলাকাবাসীর সহযোগিতার মাধ্যমে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেন। এলাকাবাসী তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে পরস্পর সহযোগিতা বা পরস্পর ঐচ্ছিক দান ও স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে বিদ্যালয়টি। কিন্তু কেন এধরসের নাম রাখা হলো তা নিয়ে সঠিক কোন উপাত্ত খুঁজে পায়ো যায় নায়। নাম রাখা হয় চুমাচুমি প্রাথমিক বিদ্যালয়। চুমাচুমি নাম নিয়ে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিব্রত হন। স্থানীয়রা বেশ কয়েকবার নাম পরিবর্তনের বিষয়ে উদ্দ্যোগ নিলেও মূলতঃ ফলপ্রসূ কার্যক্রম বেশী দুর এগুই নি।
উল্লেখ্য যে, শুধু এ কয়টি স্কুলই নয়, সারাদেশে এ রকম বহু বিতর্কিত ও বিব্রতকর নামের স্কুল এখনো বর্তমান। চাইলেও পারা যায় না এসব নাম পরিবর্তন। কারন নাম পরিবর্তনের নীতিমালা অনুসরণ করতে গিয়ে স্থানীয় প্রশাসন, অধিদপ্তরের অনুমোদন মিলে না। সে সাথে আছে নানা দাপ্তরিক জটিলতা তো আছেই। তবে এবার নাম পরিবর্তনে সেই সুযোগ দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার অধিদপ্তর থেকে সারাদেশের জেলায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) খালেদ আহমেদের স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যেসব স্কুলের নাম শ্রম্নতিমধুরহীন, বিব্রতকর সেসব প্রাথমিক স্কুলের নাম পরিবর্তিত নাম কী হবে তা প্রস্তাব আকারে আগামী ৩০ আগস্টের মধ্যে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে ডিপিইতে পাঠাতে।
অধিদপ্তর থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, “কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম আছে যা সুশোভন নয় এবং ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাস্যরসের সৃষ্টি হচ্ছে। এসব স্কুলের নাম পরিবর্তন করে দেশের ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ শোভনীয় নামকরণের প্রস্তাব যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আগামী ৩০ আগস্টের মধ্যে অত্র অধিদপ্তরে পাঠানোর অনুরোধ করা হলো।”
এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আকরাম আল হোসেন বলেন, “নেত্রকোনা চোরের ভিটা স্কুলের নামটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার নজরে আসে।” এরপর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে স্কুলটি নামকরণ কীভাবে হয়েছে তা জানতে চায়। তিনি বলেন, “গ্রামের নামকরণ অনুসারে হয়েছে বলে জানান। ওই শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, এলাকাবাসীও স্কুলটির নাম পরিবর্তন করতে চান। সব শুনে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব পাঠাতে বলি। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে নীলফামারিতে মানুষমরা নামে একটি স্কুলের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।
তবে এ সুযোগে অনেকেই কোনো ব্যক্তি বা অন্য কারও নামে স্কুল পরিবর্তনের আবেদন করবেন, সেগুলো আমলে নেওয়া হবে না। এক্ষেত্রে নাম পরিবর্তনের জন্য বিদ্যমান যে নীতিমালা আছে সেগুলো অনুসরণ করতে হবে। বড় পরিসরে দেশের ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে বিতর্কিত ও উদ্ভট নামধারী স্কুলগুলোর নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
তবে জানা যায় যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন একটি সমসাময়িক চলমান প্রক্রিয়া। প্রতি বছর বেশ কিছু স্কুলের নাম পরিবর্তন হয়। চলতি বছর হবিগঞ্জের সদর উপজেলার যাদবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে যাদবপুর ওয়াদ উলস্না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় করা হয়। শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা সাধুবাদ জানিয়েছেন এমন প্রক্রিয়াকে। তাঁদের ভাষ্য, এতে যেমন শিক্ষার সম্মানজনক গুরুত্ব যেমন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে তেমনি শিক্ষার্থিদের মনষতাত্মিক বিকাশ হবে।