ঢাকাবুধবার , ৮ জুন ২০২২
  1. অনান্য
  2. অপরাধ ও আইন
  3. অভিবাসীদের নির্মম জীবন
  4. অর্থনীতি
  5. আত্মসাৎ
  6. আন্তর্জাতিক
  7. ইতিহাস
  8. উদ্যোক্তা
  9. এশিয়া
  10. কৃষি
  11. ক্যাম্পাস
  12. খেলাধুলা
  13. গণমাধ্যম
  14. গল্প ক‌বিতা
  15. চট্টগ্রাম বিভাগ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

“আশারা মুবাশশারা” – বহুল প্রচারিত হাদিস এবং কিছু কথাবার্তা।

সাকিল আহমেদ
জুন ৮, ২০২২ ১০:৫৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আশারা মুবাশশারা —
বহুল প্রচারিত হাদিসটির মূল সারকথা এটাই যে , হাদিসটিতে উল্লেখিত দশজন সাহাবী জান্নাতের আগাম সুসংবাদ প্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ । আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের অনেকেরই মত এরকম যে , হাদিসে উল্লেখিত দশজন তাদের জীবদ্দশয়ায় যাই করুন না কেন অবশেষে ওনারা বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবেন ।
“আশারা মুবাশশারা” ।
নিঃসন্দেহে মহানবী (সাঃ) বলেছেন যে , হযরত আবু বকর , হযরত ওমর , হযরত ওসমান , হযরত আলী (আঃ) , হযরত তালহা , হযরত যুবায়ের , হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ , হযরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস , হযরত সাঈদ ইবনে যায়েদ এবং হযরত আবু ওবায়দাহ ইবনে জেরাহগন হলেন আগাম বেহেশতের সুসংবাদ প্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ ।
সূত্র – মুসনাদে আহমাদ , খন্ড- ৩ , পৃ-২০৮ / আহমাদ বিন মুহাম্মদ , খন্ড – ১ , পৃ – ১৯৩ / তিরমিজি , খন্ড – ৩ , পৃ – ১৮৩ , ৬৪৮ / আবু দাউদ – খন্ড – ২ , পৃ-২৬৪ ।
বিঃদ্রঃ – বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে , আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হাদিস গ্রন্থ সহীহ আল বুখারী এবং সহীহ আল মুসলিম গ্রন্থের কোথাও এই হাদিসটি বর্ণিত হয় নাই ।
“আশারা মোবাশশারা” – বর্নিত হাদিসের প্রধানতম সমস্যা সমুহ ।
উক্ত হাদিসটি রাসুলের (সাঃ) পুতঃপবিত্র আহলে বাইতের (আঃ) কোন সূত্রেই বর্ণিত হয় নাই । এমনকি মাওলা আলী (আঃ) এই হাদিসটি অস্বীকার করেছেন । শুধু তাই নয় , আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ সহীহ আল বুখারী ও সহীহ আল মুসলিম হাদিস গ্রন্থের কোথাও হাদিসটি বর্নিত হয় নাই । অর্থাৎ হাদিসটি উল্লেখ না করার মুল কারন হচ্ছে , হাদিস বর্ননাকারীদের যোগ্যতা এবং বিশ্বস্ততার চরম দূর্বলতা ।
“আশারা মোবাশশারা” – বিশ্লেষনমূলক কিছু কথাবার্তা ।
হাদিস বর্ণনাকারীদের প্রথম সুত্র –
সুনানে তিরমিজি ও মুসনাদে হাম্বাল গ্রন্থে হামিদ বিন আব্দুর রহমানের মাধ্যমে উক্ত হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে । উক্ত বর্ণনাতে তিনি তার পিতা আব্দুর রহমান বিন আউফ থেকে হাদিসটি শুনেছেন বলে তিনি বর্ণনা করেছেন । অথচ বিশ্বস্ত ইতিহাসের বর্ণনা অনুযায়ী তার পিতার মৃত্যুর (৩২ হিজরি সনে) সময় তার (জন্ম ৩৩ হি.সনে) বয়স ছিল এক বছরের কম !
তাহলে তিনি ঐ বয়সে হাদিসটি কিভাবে শুনলেন ?
এক বছরের একজন শিশু কোনক্রমেই ঐ বয়সে হাদিসটি বর্ণনা করা বা শ্রবনের উপযোগী ছিলেন না । তাই অবশ্যই অন্য কারও মাধ্যমে উক্ত হাদিসটি তার কাছে এসে পৌছেছে । উক্ত ব্যক্তির নাম ইতিহাসে বা হাদিসের সনদে উল্লেখিত হয় নাই ।
সূত্র – ইবনে হাজার আসকালানী / তাহজীব আত্ তাহজীব ৩য় খন্ড, পৃ-৪০-৪১ এবং ৬ষ্ঠ খন্ড , পৃ-২২২ ।
হাদিস বর্ণনাকারীদের দ্বিতীয় সুত্র –
উল্লেখিত হাদিসের বর্ণনাকারীদের ধারাবাহিকতায় এমন ব্যক্তিদের নাম উল্লেখিত হয়েছে যাদেরকে স্বয়ং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বিখ্যাত হাদিস বিশারদগণ সত্যবাদী হিসেবে গ্রহন করেন নাই । যেমন , আব্দুল আজিজ দ্বারা অর্বাদি যিনি আবু হাতেম নামে প্রসিদ্ব ।
সূত্র – জাহাবী, মিজানুল এতেদাল, ২য় খন্ড , পৃ-৬৩৪ ।
সুনানে আবি দাউদ গ্রন্থের তৃতীয় খন্ডের ৪০১ পষ্ঠায় সাঈদ বিন জাইদ থেকে এবং অন্য আরেকজন আব্দুল্লাহ বিন জালিম যার নাম উল্লেখিত হয়েছে , সহীহ আল বুখারী ও সহীহ আল মুসলিমের দৃষ্টিতে তারা কাজ্জাব বা চরম মিথ্যাবাদী এবং তাদের প্রতি বিশ্বাস করা যায় না এবং তাদের সনদে বর্নিত হাদিস গ্রহণ করা থেকে তারা উভয়ই বিরত থেকেছেন এবং স্পষ্টভাবে বলেছেন যে , তাদের বর্ণিত হাদিস সহীহ নয় ।
সূত্র – হাকেম নিশাপুরী , মুস্তাদরাক আল সা্হিয়াইন বি জিলাতিল তালখিস লিজ জাহাবী, তৃতীয় অধ্যায়, পৃ-৩১৭ ।
অবাক বিষয় যে , হাদিসটি যারা বর্ননা করেছেন তাদের নাম উক্ত হাদিসের শেষ ব্যক্তিদ্বয়ের তালিকায় রয়েছে । সঙ্গত কারনেই উক্ত হাদিসের বর্ণনাকারী তারা নিজেদের রাজনৈতিক সুযোগ সুবিধা হাসিল করার উদ্দ্যেশে হাদিসটি জাল করেছেন বলে সন্দেহ থেকে যায় ।
আব্দুর রহমান বিন আউফ ও সাঈদ বিন জাইদ যারা উক্ত হাদিসের বর্ণনাকারী তারা নিজেরাই হলেন ঐ তথাকথিক সুসংবাদ প্রাপ্তদের অর্ন্তভুক্ত । অথচ যাদের নাম ঐ হাদিসে নেই তাদের কোন একজনও উল্লেখিত হাদিসটি বর্ণনা করেন নাই ! শুধু তাই নয় মহানবী (সাঃ) থেকে উক্ত হাদিসটি বর্ণনার কথা ঐ দুইজন ছাড়া আর অন্য কেউই বর্ণনা করেন নাই এবং অন্য কাউকে উক্ত ঘটনার সাক্ষীও পাওয়া যাই নাই ।
মহানবীর (সাঃ) ইন্তেকালের পর যখন কতিপয় সাহাবী বনু সকিফাতে একত্রিত হয়ে মুসলিম উম্মাহর নেতা নির্বাচানের লক্ষ্যে এবং একেকজন নিজের ফজিলত বর্ণনা করছেন মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব লাভের চেষ্টায় তখন আনসার ও মুহাজিরগণ প্রত্যেকের ফজিলত সমুহের মধ্যে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিসের কথা কেউই উল্লেখ করেন নাই । ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয় যে , হাদিসটি সর্বপ্রথম মুয়াবিয়ার শাসন আমলে লিখিত ও প্রচার লাভ করে করে । মুয়াবিয়ার আমল ছিল জাল-বানোয়াট হাদিসের স্বর্নযুগ !
তথাকথিত হাদিসটির আলোচ্য বিষয়বস্তুগত সমস্যা ।
পবিত্র কোরআন ও মহানবীর (সাঃ) সুন্নাত বিরোধী হাদীস ।
হাদিসটির সবচেয়ে বড় আরেকটি সমস্যা হল , হাদিসে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে মহানবীর (সাঃ) ইন্তেকালের পরপরই তাদের মধ্যে পরস্পর বিরোধী শত্রুতা চরম আকার ধারণ করে । এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে তারা একে অপরের প্রতি তলোয়ার ধরেছেন এবং একে অন্যের হাতে খুনও হয়েছেন ! রাসুল (সাঃ ) বলেছেন যে , “দুইজন মুমিন মুসলমান যদি পরস্পরের বিরুদ্বে তলোয়ার দিয়ে যুদ্ধ করে তাহলে হত্যাকারী এবং নিহত উভয়কেই জাহান্নামী হতে হবে ।”
আমরা যদি এই হাদিসকে সত্য বলে ধরে নেই তাহলে এই “আশারা মোবশশারা” হাদিসটি ধুয়া হয়ে কর্পুরের মত বাতাসে পুরোপুরি মিলিয়ে যাবে । কেননা ওনাদের মধ্যে কেউ কেউ একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ , হত্যা এবং নিহতও হয়েছেন !
ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয় যে , হযরত তালহা ও হযরত যুবায়ের হযরত আলীর (আঃ) হাতে বাইয়াত করার পর সেই বাইয়াত ভঙ্গ করেন এবং বাইয়াত ভঙ্গকারীদের দলে যোগ দেন । অতঃপর হযরত আয়েশার নেতৃত্বে জঙ্গে জামাল বা উষ্ট্রের যুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেন । যেখানে অসংখ্য সাধারণ মুসলমান সাহাবী নিহত হন । অতএব যারা পরস্পরকে খুন করতে উদ্ধত হন তারা কিভাবে জান্নাতের সুসংবাদ পাবেন ?
এটি একটি মৌলিক ও কঠিন প্রশ্ন ।
মুয়াবিয়া কতৃক সৃষ্ট জঙ্গে সিফফিন যুদ্ধে ইমাম আলীর (আঃ) বিজয়ের পক্ষে যুদ্ধরত অবস্থায় আম্মার ইয়াসসার (আঃ) শহীদ হয়েছেন । এই যুদ্বে লক্ষাধিক মুসলমান নিহত হয়েছেন ।
হাদিসটির বিষয় কিছু মৌলিক প্রশ্ন চলে আসে ।
ইসলামী ইতিহাসের সোনালী যুগে আরও অনেক মহান সাহাবী ছিলেন তাদের নাম উল্লেখিত হাদিসে ঐ দশজনের মধ্যে নাই কেন ?
নবীজীর (সাঃ) এ কথাও সত্য যে , ইয়াসসারের বংশধরদের সংবাদ দিয়ে দাও যে , তোমাদের সাথে জান্নাতের ওয়াদা করা হয়েছে ।
রাসুল (সাঃ) একথাও বলেছেন যে , বেহেশত চারজনের জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে , তারা হলেন , আলী (আঃ) , আম্মার (আঃ) , সালমান (আঃ) এবং মিকদাদ (আঃ) ।
মুসলিম তার সহীহতে আরও রেওয়ায়েত করেছেন যে , রাসুল (সাঃ) বলেছেন , আবদুল্লাহ ইবনে সালামকে (রাঃ) জান্নাতের সুসংবাদ দাও এবং হাসান (আঃ) ও হোসেন (আঃ) জান্নাতে যুবকদের সরদার , জাফর ইবনে আবি তালিব (রাঃ) জান্নাতে ফেরেশতাদের সাথে উড়ে বেড়ানোর কথাও মহাসত্য ।
এছাড়া নবীকন্যা ফাতেমা (সাঃআঃ) জান্নাতে নারীদের সম্রাজ্ঞী এবং এও সত্যি যে , ওনার শ্রদ্ধেয় মাতা হযরত খাদিজাকে (সাঃআঃ) হযরত জীব্রাইল (আঃ) জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন । অনুরুপভাবে সোহেব রুমি , বেলাল হাবশী , সালমান ফারসীকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন । অতএব ঐ দশজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার মধ্যে কোন না কোন রহস্য রয়েছে ?
শুধু তাই নয় আরও মজার বিষয় হল , উক্ত হাদিসে মহানবীকেও (সাঃ) জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্তদের একজন হিসাবে অন্তভুক্ত করা হয়েছে ।
সূত্র – সুনানে ইবনে মাজা , ১খন্ড , ৪৮ পৃ. ।
অতএব নিজেই নিজেকে সুসংবাদ দিচ্ছেন ! প্রত্যেক ব্যক্তির একটি বিশেষ অবস্থান রয়েছে সেই অবস্থানগত দিক থেকে নিঃসন্দেহে মহানবীর (সাঃ) স্থান সবার উর্ধে । কিন্ত উক্ত হাদিসে সবার শেষে নাম আনা হচ্ছে । এছাড়া মহানবীর (সাঃ) জান্নাতী হওয়ার ক্ষেত্রে সুসংবাদ দেয়ার কোন প্রয়োজন আছে কি ?!
সুতরাং বিষয়টি স্পষ্টত অনুধাবনযোগ্য যে , এটি একটি বানোয়াট ও জাল হাদিস যা বিশেষ কিছু ব্যক্তির স্বার্থসিদ্ধির অভিসন্ধিমুলক কাজ ।
হাদিসটি পবিত্র কোরআন বিরোধী ।
হাদিসে উল্লেখিত দশজন ব্যক্তিকে কেন এমনভাবে বিশেষভাবে জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হইল তা কারও জানা নাই । তবে এটি স্পষ্ট যে , জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ এক অপরের সাথে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অবর্তীণ হয়েছেন যার ফলে নিজেরাও নিহত হয়েছেন । আবার তাদের কার্যক্রমের দরুন হাজার হাজার মুসলমানও খুন হয়েছে ।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন –
” — এবং যে ব্যক্তি কোন বিশ্বাসীকে (মুমিনকে) ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করে , তারা সাজা হল জাহান্নাম , যেখানে সে চিরকাল থাকবে এবং আল্লাহ তার উপর ক্রোধান্বিত হন এবং তার উপর লানত (অভিসম্পাত) বর্ষণ করেন এবং তারজন্য মহাশাস্তি প্রস্তত করে রেখেছেন —- ” ।
সুরা – নিসা / ৯৩ ।
অতএব , এটা কিভাবে সম্ভব যে , নিজেরা পরস্পর খুন-খারাবী করবেন এবং হাজার হাজার নিরীহ ঈমানদার মুসলিম ব্যক্তির হত্যার কারন হবেন আর মহান আল্লাহ কোন বিচার ছাড়াই এমনিই ছেড়ে দিবেন ?!
নিঃসন্দেহে হাদিসটি একটি বানোয়াট ও মিথ্যা জাল হাদিস ।
কেউ কেউ তাদের সুস্পষ্ট অপকর্মগুলো লুকাতে বা অপব্যাখ্যা করতে তথাকথিত সাহাবীগণের ইজতেহাদের অবতারণা করে থাকেন । কিন্ত তারা একবারও চিন্তা করেন না যে , যিনি শরীয়ত এনেছেন এবং প্রচার করেছেন তাঁর প্রদত্ত শরীয়াতের বিরুদ্ধে ইজতেহাদ করলে ধর্মের আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না । বরং ইজতেহাদ হল শরীয়াতের অস্পষ্ট বিষয়গুলো বা নব্যসৃষ্ট সমস্যা সমূহের সমাধান প্রদানের লক্ষ্যে শরীয়তের ধারক ও প্রচারকের যথার্থ আর্দশ বা পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহ থেকে তার সমাধান খুঁজে বের করা । ইজতেহাদ এমনটি নয় যে , নিজের ইচ্ছাকে মহানবীর (সাঃ) আর্দশ বা সীরাত ও সুন্নাতের উপর চাপিয়ে দেয়া । আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) সীরাত ও সুন্নাতের মোকাবিলায় সমস্ত ইজতেহাদ সবই বাতিল ।
কেননা পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন যে –
“ —- গ্রহন কর যা রাসুল তোমাদের দেয় এবং পরিত্যাগ কর যা সে তোমাদেরকে নিষেধ কর এবং আল্লাহ সম্পর্কে সতর্ক হও । নিশ্চয়ই আল্লাহ উপযুক্ত শাস্তি দানে অত্যন্ত কঠোর — ।“
সুরা – হাশর / ০৭ ।
‘ — হে মুমিনগন ! আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অনুগত হও এবং তোমরা যখন তাঁর কথা শুনতে পাও তখন তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না —- ।”
সুরা – আনফাল / ২০ ।
অতএব , যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসুলকে (সাঃ) আনুগত্য করেন সে মুলত মহান আল্লাহর আনুগত্য করলেন ।
” —- যে রাসুলের আনুগত্য করিল সে আল্লাহরই আনুগত্য করিল — ।”
সুরা – নিসা / ৮০ ।
সুতরাং চুড়ান্ত সত্যের মাপকাঠি হল আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে , হযরত আলী (আঃ) উক্ত হাদিসটিকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখান করেছেন । বিভিন্ন ইতিহাসে জামালের যুদ্ধের পেক্ষাপটে বর্ণিত হয়েছে যে , হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বে হযরত তালহা ও হযরত যোবায়েরকে ডাকলেন এবং বললেন , তোমরা কি জানো জামালের যুদ্ধের সেনাগণ অভিশপ্ত ?
হযরত যোবায়ের বললেন , আমরা কিভাবে অভিশপ্ত হলাম ? আমরা তো জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অর্ন্তভুক্ত !
হযরত আলী (আঃ) বললেন , আমি যদি তোমাদেরকে জান্নাতী মনে করতাম তাহলে তোমাদের প্রতিহত করতে যুদ্ধে আসতাম না । তোমাদের সাথে যুদ্ধ করাকে বৈধ মনে করতাম না ।
হযরত যোবায়ের বললেন , আপনি কি সাঈদ বিন আমর বিন নাফিল যে হাদিস মহানবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন কুরাইশদের দশজন জান্নাতী সে হাদিসটি কি আপনি শোনেন নাই ?
ইমাম আলী (আঃ) বললেন , হ্যাঁ , আমি শুনেছি সাঈদ ওসমানের শাসনামলে তার নিজের স্বার্থে বর্ণনা করেছে ।
হযরত যোবায়ের বললেন , তাহলে এটা কি মথ্যা হাদিস ?
হযরত আলী (আঃ) তাদের নামগুলো বলতে বললেন ।
হযরত যোবায়ের নয়জনের নাম বললেন ।
হযরত আলী (আঃ) বললেন , দশম ব্যক্তি কে ?
হযরত যোবায়ের বললেন , আপনি নিজেই ।
হযরত আলী (আঃ) বললেন , তাহলে আপনি স্বাক্ষ্য দিলেন যে , আমি জান্নাতী । তবে আপনি যা নিজের জন্য ও আপনার অনুসারীদের জন্য দাবী করেছেন তা আমি অস্বীকৃতি জানাচ্ছি ।
তখন হযরত যোবায়ের বললেন , তাহলে আপনি সাঈদকে সন্দেহ করছেন যে সে মিথ্যা হাদিস বর্ণনা করেছে ?
তখন হযরত আলী (আঃ) বললেন , আমি তাকে সন্দেহ করছি না বরং নিশ্চিতভাবেই বলছি যে , সাঈদ হাদিসটি জাল করেছে এবং এটা একটি মিথ্যা হাদিস ।
সূত্র – আল ইহতেজাজ তাবরেসী, ১খন্ড, ২৩৭ পৃষ্ঠা / আল কাফায়াতু ফি ইবতাল তওবাতুল খাতিয়াহ, শেইখ মুফিদ, ২৪ পৃষ্ঠা / মুন্তাখাবুত তাওয়ারিখ, ১৪-১৫ পৃষ্ঠা / আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া , ১খন্ড , ২৩৭ পৃষ্ঠা / আল মু’জাম আল কাবির / মাজমাউজ জাওয়ায়েদ , ২৪ পৃষ্ঠা / মুসনাদ আহমদ ১ খন্ড , ১৪-১৫ পৃষ্ঠা / আল ইমামত আল সিয়াসাত পৃষ্ঠা ৪০ / আসনাব আল আসরাফ খন্ড ২ পৃষ্ঠা ১৯৩ ।
লেখার শেষাংশে বলছি যে , ইন্তেকালের পূর্বে অসিয়তনামা লেখার জন্য রাসুলের (সাঃ) আদেশ মোতাবেক খাতা-কলম না দেওয়ার জন্য হযরত ওমরসহ তার দলবলকে রাসুল (সাঃ) নিজে তাঁর গৃহ থেকে বের করে দিলেন । একইভাবে আদমকে (আঃ) সেজদা না করার জন্য ঈবলীশকেও আল্লাহ তাঁর দরবার থেকে বের করে দিলেন ।
মূল প্রশ্নটা হচ্ছে যে , মহান আল্লাহর দরবার থেকে আল্লাহ কতৃক বিতাড়িত হবার পরে ঈবলীশ চিরজাহান্নামী হয়ে গেল । তাহলে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কতৃক বিতাড়িত ব্যক্তি কিভাবে “আশারা মোবশশারা” সনদ পায় ?

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল অপরাজিতবাংলা ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন oporajitobangla24@yahoo.com ঠিকানায়।