বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীসহ যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর ডাকা চতুর্থ দফার ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির শেষদিন স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালিত হয়েছে। রাজধানীর সাথে সারাদেশের যাতায়াত ব্যবস্থা ছিল অচল। গতকাল সোমবারও অবরোধের সমর্থনে রাজধানীসহ সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিরোধীরা। আজ মঙ্গলবার সকাল ছয়টায় শেষ হয়েছে অবরোধ কর্মসূচি। অবরোধের শেষ দিনেও দূরপাল্লার কোনো বাস ঢাকা ছাড়েনি ও প্রবেশও করেনি। একই চিত্র লঞ্চ ঘাটেও। ট্রেনগুলো চললেও যাত্রী ছিল খুবই সীমিত। আন্দোলনকারীরা জানায়, কর্মসূচি পালনকালে গতকাল পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া দুই হাজারের অধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হযেছে। পুলিশ ও সরকারি দলের হামলায় শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এদিকে একদিন বিরতি দিয়ে আগামীকাল থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৫ম দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ডেকেছে সরকার বিরোধীরা। উল্লেখ্য, ৩১ অক্টোবর থেকে সারা দেশে অবরোধের কর্মসূচি শুরু করে সরকার বিরোধীরা। গতকালসহ মোট আট দিন এই অবরোধ পালিত হয়। ২৮ অক্টোবরে বিএনপি-জামায়াতে মহাসমাবেশ হামলা, শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার এবং সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবিতে এক দফার দাবিতে বিএনপি-জামায়াতসহ ৩৬ রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে যুগপৎভাবে এই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
বিএনপির বিক্ষোভ : সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিএনপির টানা ৪৮ ঘণ্টার সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচির সমর্থনে রাজধানীতে ঝটিকা মিছিল করেছে ছাত্রদল। সোমবার সকাল ৯টার দিকে ফকিরাপুল মোড়ে একটি মিছিল বের করে কেন্দ্রীয় সংসদ, মহানগর উওর ও দক্ষিণ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এসময় তারা অবরোধের সমর্থনে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে। তবে সড়কে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। মিছিলে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইমরান মজুমদার মিশু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাইজুল ইসলাম খান, সহ-সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন রনিসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। তারা ফকিরাপুল মোড় হয়ে কিছুদূর গিয়েই মিছিলটি শেষ করে।
এর আগে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে অবরোধের সমর্থনে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকায় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহ স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েলের নেতৃত্বে একটি ঝটিকা মিছিল বের করা হয়।
ঝটিকা মিছিলে অংশ নেন স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আক্তার হোসেন, মাহাবুবুর রহমান, মোহাম্মদ শরিফসহ অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও পিকেটিং করেছে স্বেচ্ছাসেবক দল। উত্তরায় মিছিলের নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন গাজী রেজওয়ান হোসেন রিয়াজ, মোস্তফা কামাল হৃদয়সহ বিভিন্ন থানার নেতাকর্মীরা। এদিকে রাজধানী সালাউদ্দিন হসপিটাল, চকবাজার সোয়ারীঘাট, খিলগাঁও চৌরাস্তা, ধানমন্ডি এবং পল্টন আজাদ প্রোডাক্টেসর সামনে থেকে পল্টন মোড় পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করে স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি এএ জহির উদ্দিন তুহিন, সাধারণ সম্পাদক সাদ মোর্শেদ পাপ্পা শিকদার, সিনিয়র সহসভাপতি এসএম সায়েম, সহসভাপতি মনির হোসেন মৃধা, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন রিন্টু প্রমুখ।
রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সকালে সচিবালয়সংলগ্ন তোপখানা রোড থেকে পুরানা পল্টন পর্যন্ত মিছিল করেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এতে নেতৃত্ব দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় সংসদের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব।
দুপুরে বাংলামোটর থেকে শাহবাগ অভিমুখে মিছিল ও অবরোধ করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সৈয়দ সাইফুজ্জামান সাইফুল, আকতারুজ্জামান আক্তার। এ সময় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা রাস্তা অবরোধ করে এক দফা দাবি আদায়ে অবরোধের সমর্থনে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকেন।
রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানের নেতৃত্বে দুপুর দেড়টার দিকে মালিবাগ চৌধুরীপাড়া আবুল হোটেলের সামনে এ মিছিল হয়।
যাত্রাবাড়ীর সায়েদাবাদ জনপথ মোড়ে স্বেচ্ছাসেবক দল মহানগর দক্ষিণের সভাপতি এ এ জহির উদ্দিন তুহিনের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করতে গেলে সাদা পোশাকে পুলিশ হামলা করে এবং দক্ষিণের ৯ জন নেতা কর্মীকে গ্রেপ্তার করে। ৬ জনকে যাত্রাবাড়ী থানায় তিনজনকে গেন্ডারীয়া নিয়ে যায়।
দ্বিতীয় দিনে মিছিল করেছে শ্যামপুর-কদমতলী থানা বিএনপি। সোমবার বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে রাজধানীর দোলাইপাড় মহাসড়ক থেকে শুরু হয়ে দয়াগঞ্জ মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিলটি শেষ হয়। বিএনপির অভিযোগ, মিছিলটি দয়াগঞ্জ মোড়ে এসে পৌঁছালে অতর্কিত হামলা করে পুলিশ। মুহূর্তেই ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় নেতাকর্মীরা এতে তিনজন আহত হন এবং ৩ জনকে আটক করে পুলিশ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আ ন ম সাইফুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে এতে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি নাছির আহমেদ মোল্লা, ছাত্রদলের সহসভাপতি তানজিল হাসান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এইচ এম আবু জাফর, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহসভাপতি আল আমিন মৃধা প্রমুখ।
জামায়াতের মিছিল-পিকেটিং : চতুর্থ দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর রায়েরবাগ, মতিঝিল, হাজারীবাগ, খিলগাঁও, শ্যামপুর ও সদরঘাটসহ ১৩ স্থানে বিক্ষোভ মিছিল, পিকেটিং, পথসভা করেছে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা। জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ কামাল হোসাইনের নেতৃত্বে সোমবার (ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক (রায়েরবাগ বাস স্ট্যান্ড) অবরোধ করে নেতাকর্মীরা। রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় সড়ক অবরোধ করেছে মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. মু. আবদুল মান্নান এতে নেতৃত্ব দেন। রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় রামপুরা ডেমরা সড়ক অবরোধ করে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আবদুস সালাম এর নেতৃত্ব দেন। দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য মো. হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে অবরোধের দিনে রাজধানীর ধোলাইপাড় শ্যামপুর সড়কে অবরোধ করে জামায়াতে ইসলামী নেতাকর্মীরা। দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক নুর নবী মানিকের নেতৃত্বে রাজধানীর হাজারীবাগে সড়ক অবরোধ করে জামায়াত। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য কামরুল আহসান হাসানের নেতৃত্বে রাজধানীর সদরঘাট এলাকায় সড়ক অবরোধ করে জামায়াত। অন্যদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াত রাজধানীর মিরপুর-১, মিরপুর ১৩, মিরপুর ১১, ফার্মগেট, উত্তরা, রামপুরা, মোহাম্মদপুরে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করে বলে জানা গেছে।
বাস টার্মিনাল একবারেই সুনসান : অবরোধে গতকালও যাত্রীশূন্য মহাখালী, সায়েদাবাদ ও গাবতলী বাস টার্মিনাল। সোমবার সকালে রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, চিরচেনা কর্মব্যস্ত ও কোলাহলপূর্ণ মহাখালী বাস টার্মিনাল একেবারেই সুনসান। নেই কোনো হাঁক-ডাক। শ্রমিকরা অনেকেই এখনো বাসেই ঘুমিয়ে আছেন। আর কিছু কিছু দূরপাল্লার বাস টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছে। এমন অবস্থায় নিজেদের খাওয়া খরচ মেটাতেও ঋণ করা লাগছে বলে জানান পরিবহন শ্রমিক ও স্টাফরা। টার্মিনালের সামনে বিরস মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় কলমাকান্দার মাস্টার এন্টারপ্রাইজ বাসের চালক আরশ আলীকে। তিনি বলেন, অবরোধ হরতাল ঘোষণা হলে এমনই হয়। মানুষজন ভয়ে ঘর থেকে বের হতে চান না। এখন ঋণ করে চলতে হচ্ছে। মালিক কিস্তি দিতে পারছেন না। কলমাকান্দা পর্যন্ত আপ-ডাউনে আমার ১২ হাজার টাকার তেল প্রয়োজন হয়। সঙ্গে তিনজন স্টাফ। সবমিলিয়ে যদি ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় না হয় তাহলেই লস হয়ে যায়। সেখানে ২-৩ জন যাত্রী নিয়ে বাস ছাড়ার মানেই হয় না।
যাত্রী শূন্যতায় বেশ বিপাকে পড়েছেন এই স্ট্যান্ডে কুলির কাজ করা অনেক মানুষজনও। আব্দুর রাজ্জাক নামের একজন বলেন, বাস টার্মিনালে আসা যাত্রীদের ব্যাগ-পত্র টেনে যে টাকা আয় হয় সেটা দিয়ে সংসার চলে। এখন পর্যন্ত ১০ জন যাত্রীও আসেনি। আমরা কীভাবে চলবো কীভাবে কি করব সেটিই বুঝতে পারছি না। এভাবে চলতে থাকলে না খেয়ে মরতে হবে।
এছাড়া সদরঘাট থেকেও কোনো লঞ্চ ছাড়েনি। ট্রেন ছাড়লে যাত্রী উপস্থিতি ছিল খুবই কম। এদিকে চতুর্থ দফার অবরোধের দ্বিতীয় দিনেও পুলিশ পাহারায় সড়কে কিছু বাস চলাচল করেছে। ব্যক্তিগত গাড়ি, প্রাইভেটকার, সিএনজি, মোটর সাইকেলের চলাচলও ছিল। সোমবার সকালে রাজধানীর নিউমার্কেট, ধানমন্ডি, আসাদগেট ও মহাখালী এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা যায়। এসব এলাকার অধিকাংশ বাস স্টপেজগুলোতেই যাত্রীরা বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। মূলত সকালে গাড়ির পরিমাণ কিছুটা কম হওয়ার কারণেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়।
অন্যান্য দলের বিক্ষোভ : চতুর্থ দফার অবরোধের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) নেতাকর্মীরা। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে কাকরাইল মোড় থেকে পুরানা পল্টন পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন এলডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য ডক্টর আওরঙ্গজেব বেলাল, ভাইস চেয়ারম্যান মাহে আলম চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব বিল্লাল হোসেন মিয়াজিসহ গণতান্ত্রিক মহিলা দল, গণতান্ত্রিক যুবদল, গণতান্ত্রিক স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ঢাকা মহানগর এলডিপির নেতাকর্মীরা।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা সাইফুল হক বলেছেন, সরকার প্রতিটি গ্রামে-ইউনিয়নে সংঘাত ছড়িয়ে দিচ্ছে। সংঘাত-সংঘর্ষের মধ্যদিয়ে তারা দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে এবং দেশকে আফ্রিকার অকার্যকর ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবরোধের সমর্থনে গণতন্ত্র মঞ্চের বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, বাংলাদেশে ১৯৭৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত দলীয় সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি, এটি প্রমাণিত সত্য। সুতরাং সারা জাতি ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করার আইন, বিধি-বিধান তৈরি করেছে।
বিক্ষোভ কর্মসূচিতে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু ইউসুফ সেলিম, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমন, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সারসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করে বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সিনিয়র সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম, অতিরিক্ত মহাসচিব আবদুল্লাহ আল হাসান সাকিব, জাহিদুর রহমান, বাংলাদেশ এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এম এ বাশার, বাংলাদেশ জাতীয় দলের ভাইস চেয়ারম্যান সারোয়ার আলম, প্রচার সম্পাদক বেলায়েত হোসেন শামীম, শামসুল আহাদ, আবুল মনসুর, ইসলামী ঐক্যজোটের যুগ্ম মহাসচিব ইলিয়াস রেজা, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি জাকির হোসেন, আতাউর রহমান, যুব জাগপার সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবলু, জাতীয় ছাত্রসমাজের সভাপতি কাজী ফয়েজ আহমেদ, সভাপতি দক্ষিণ মো. ফাহিম হোসাইন, ছাত্র জমিয়তের সভাপতি নিজাম উদ্দিন আল আদনান প্রমুখ।
বিএনপিকে অভয় দিতে দলটির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেছে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক গণঅধিকার পরিষদ। সোমবার এই মিছিল করেছে নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশে সংঘর্ষের ঘটনার পরদিন থেকে নয়াপল্টনের দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ রয়েছে। কার্যালয় এখন কার্যত পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। অবরোধ সমর্থনে বেলা সাড়ে ১১টার পর বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে থেকে নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের করে গণঅধিকার পরিষদ। এরপর মিছিলটি পল্টন মোড় ঘুরে নাইটিঙ্গেল মোড় হয়ে নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে দিয়ে অগ্রসর হয়। তারপর ফকিরাপুল মোড় ঘুরে পুনরায় বিএনপি কার্যালয়ের সামনে দিয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় হয়ে বিজয়নগর পানির ট্যাংকির সামনে গিয়ে শেষ হয়। গণঅধিকার পরিষদের মিছিলটি বিএনপি কার্যালয়ের সামনের সড়ক দিয়ে যাওয়া ও আসার সময় সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় ছিলেন।
সতর্ক অবস্থানে আ’লীগ : সরকার বিরোধীদের অবরোধ কর্মসূচির বিরুদ্ধে গতকালও রাজপথে সতর্ক পাহারায় ছিল ক্ষমতাসীনরা। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছাড়াও যাত্রাবাড়ী, ধানমন্ডি ৩২, উত্তরা, মিরপুর, গাবতলীসহ রাজধানীর কয়েকটি স্থানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশি পাহারায় ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। তবে উপস্থিতি ছিল খুবই সামাণ্য।
নেতাকর্মীশূন্য বিএনপি কার্যালয় : বিগত দিনগুলোর মতোই গতকালও সকাল থেকেই নেতাকর্মীশূন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। চতুর্থ দফার অবরোধেও কার্যালয় ঘিরে নেই কোনো নেতাকর্মীর আনাগোনা। এমনকি অবরোধের সমর্থনেও কার্যালয়ের সামনে কিংবা এই এলাকা কোনো ধরনের কর্মসূচিও পালন করেননি তারা। তবে বরাবরের মতোই কার্যালয়টির সামনে অবস্থান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। সেমাবার রাজধানীর নয়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এমন দৃশ্যই দেখা যায়। তবে গতকাল গণ অধিকার পরিষদ নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সড়কে অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ করে।
২৯ অক্টোবর থেকে আজ পর্যন্ত দীর্ঘ ১৬ দিন ধরেই তালাবদ্ধ কার্যালয়টির দুইটি কলাপসিবল গেট। নেতাকর্মীরা দূরে থাক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্মচারীরাও এই কয়দিনের মধ্যে কার্যালয়ের ধারেকাছে আসেননি। কার্যালয়টির ডান পাশের পূবালী ব্যাংকের সামনে এবং বাম পাশে হোটেল ভিক্টরির সামনে অবস্থান নিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। রাখা আছে ব্যারিকেডও। কার্যালয়টির সামনে ফুটপাতটিও বন্ধ। মানুষজন চলাচল করছেন সড়ক দিয়ে। রিকশা, সিএনজি, ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া নেই কোনো গণপরিবহন। আশপাশের অধিকাংশ দোকানই বন্ধ।