আপ্যায়ন করে সেটার ছবি তুলে পত্রিকায় দেয়া অত্যন্ত নিম্নমাণের মশকরা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
তিনি বলেন, এটুকু যাচাই-বাছাই করার ক্ষমতা এদেশের মানুষের আছে।
ডিবি কার্যালয়ে আপ্যায়ন প্রসঙ্গে রোববার সাংবাদিকদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
বললেন, আমার সঙ্গে যা করা হয়েছে তা অত্যন্ত নিম্নমাণের মশকরা।
রাজধানীর নয়াপল্টনে রোববার (৩০ জুলাই) দুপুরে ব্যক্তিগত কার্যালয়ে সাংবাদিকরা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অফিসে খাবার খাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি এসব কথা বলেন।
ওই সময়ের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে গয়েশ্বর বলেন, ‘খোঁড়াতে খোঁড়াতে কষ্ট করে হেঁটে ওনার ওইখানে গেলাম।
তখন বললো যে, সারাদিনে স্যার তো কিছু খান নাই, শুনলাম পানিও খান নাই। না খেয়ে স্যালাইন নিবেন!
যাই আছে একটু খেয়ে নেন। আমাদেরও তো দায়িত্ব আছে, না খাইয়ে তো রাখা যায় না।’
‘তখন দরজা খুলে ডাইনিং রুম দেখিয়ে দিলো। এরপর বসলাম। দেখলাম খাবার সাজানো।
বললাম এসব কিসের খাবার? আমি তো এসব খাই না, হোটেল সোনারগাঁওয়ের খাবার খাই না।
কোন হোটেলের খাবার খাই না। এমনিতেই দাওয়াতে যাই। আমি ৯০ শতাংশ ভেজিটেরিয়ান।’
এসময় ছবি তোলা হচ্ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেখলাম ছবি তুলতেছে। বললাম এই তোমরা তুলতেছ কেন?
এটা তো কোন ভদ্রলোকের পর্যায়ে পড়ে না খাওয়ার সময় ছবি তোলা।’
তখন ডিবি প্রধান তার বাসার খাবার নিয়ে আসেন আমাকে খাওয়াতে।
বলেন, ‘স্যার এটা আমার বাসার খাবার। দেখলাম টিফিন বাটিতে করে খাবার আনা হয়েছে।
তখন সে দুই চামচ ভাত দিলো।
আর আমি বললাম তোমার ওই সবজিটা দাও আর কিছু লাগবে না।
তখন সে বললো স্যার, আমার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ থেকে আনা রুই মাছ। এক টুকরো নেন। এই এক পিস মাছ আর ওই সবজি।’
‘আমি তো বিদেশেও গেছি। কেউ তো না খাইয়ে রাখে নাই। কিন্তু সাধারণ খাবার।
এখন এই যে সোনারগাঁও থেকে এতো দামি খাবার আনার ফান্ড তাদের কে দিলো?
এটা তাদের নিয়মে আছে কি না। যাদের কাস্টডিতে নেয়, তাদের সাথে এই আচরণ করে কি না।
আমি জানি করে না। তাহলে বুঝতে হবে তারা এসব করেছে ছবি তুলে পত্রিকাতে ছাপাতে।
একটা মশকরা বলতে যা বুঝয়, এটা নিম্নমানের একটা মশকরা, আর কিছু না।’
গয়েশ্বর বলেন, এতে কি সরকার প্রমাণ করতে চায় যে আমরা হাভাতে? ভিক্ষা করে খাই?
গ্রামের ভাষায় বলা হয় ‘খাইয়ে খোটা দেওয়া’।
ডিবি অফিসে আমার সঙ্গে যা করা হলো, তা ওই রকমই। আমার বাড়িতে তো বিভিন্ন সময় অনেক লোক খায়।
এটা আমার জন্য অত্যন্ত সম্মানের। কিন্তু এই খাবারের ছবি উঠিয়ে কি আমি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেব?
এটা কি আমার জন্য ভালো হবে?’
এর আগে, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার রাজধানীর নয়াবাজার (বাবুবাজার ব্রিজের প্রবেশ মুখ) মোড়ে অবস্থান নেয়ার কথা ছিলো বিএনপির।
তবে এর বদলে বেলা ১১টার দিকে ধোলাইখাল মোড়ে অবস্থান নেন দলটির নেতাকর্মীরা।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ।
জবাবে ইটপাটকেল ছোড়ে অবস্থানকারীরা। সেখান থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে নিয়ে যান গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা।
ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, রাজধানীর ধোলাইখাল মোড়ে বিএনপি ও পুলিশের মাঝে পড়ে যান গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
তিনি বিএনপি কর্মীদের ছোড়া ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন। তাকে সেভ করতেই মূলত ডিবিতে নিয়ে আসে হয়।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে আপ্যায়নের জন্য সোনারগাঁও হোটেল থেকে উন্নতমানের খাবার আনা হয়।
ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের সঙ্গে তিনি দুপুরের খাবার খান। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, গয়েশ্বরের প্লেটে খাবার তুলে দিচ্ছেন ডিবি প্রধান।
পরে ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এরপর বেলা ৩টার দিকে ডিবি কার্যালয় থেকে বের হন তিনি। এরপর একটি গাড়িতে করে তাকে বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়। সূত্র: সময়টিভি।