উপ-শিরোনাম: বাণিজ্য সচিব থেকে এনবিআর চেয়ারম্যান হতে ৩৯৫ কোটি টাকার লেনদেন। নেপথ্যে শফিক, আসিফ ও নাহিদ সিন্ডিকেট।
প্রশাসনের শীর্ষ পদগুলো এখন পরিণত হয়েছে লাভজনক পণ্যে। মেধা বা জ্যেষ্ঠতা নয়, এখন বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কেনাবেচা হচ্ছে সচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদ। সম্প্রতি এমন এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে বর্তমান বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমানকে ঘিরে। অতিরিক্ত সচিব থেকে বাণিজ্য সচিব হতে ৩৫ কোটি, সেখান থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব হতে ৬০ কোটি এবং সবশেষে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান হতে ৩০০ কোটি টাকার চুক্তি করেছেন তিনি। সব মিলিয়ে প্রায় ৩৯৫ কোটি টাকার এই পদোন্নতি বাণিজ্যের নেপথ্যে রয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট, যাদের নিয়ন্ত্রণে জিম্মি হয়ে আছে প্রায় সব মন্ত্রণালয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অতিরিক্ত সচিব থাকাকালীন মাহবুবুর রহমান বাণিজ্য সচিব পদে পদোন্নতি নিশ্চিত করতে ৩৫ কোটি টাকার একটি চুক্তি সম্পন্ন করেন। সেই চুক্তি সফল হওয়ার পর তিনি আরও উচ্চাভিলাষী হয়ে ওঠেন। তার পরবর্তী লক্ষ্য ছিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) সচিবের পদ, যা পদাধিকারবলে এনবিআর চেয়ারম্যানের দায়িত্বও বটে। তবে প্রথমে আইআরডি সচিব পদের জন্য তিনি “মেসার্স আর্মি বিডি কনসালটেন্সি” নামক একটি রহস্যময় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সাথে ৬০ কোটি টাকার চুক্তি করেন।
সবচেয়ে বড় চুক্তিটি করা হয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য। এই পদের জন্য ৩০০ কোটি টাকার একটি অবিশ্বাস্য চুক্তি করেছেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, এই বিপুল পরিমাণ অর্থ কয়েকটি ধাপে পরিশোধের কথা ছিল এবং এর গ্যারান্টি হিসেবে বিভিন্ন ব্যাংকের চেক ব্যবহার করা হয়েছে।
এই বিশাল আর্থিক লেনদেনের জাল বিস্তার করতে মাহবুবুর রহমানকে সহায়তা করেছেন সাইফুল ইসলাম নামের এক প্রভাবশালী ব্যক্তি। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, চুক্তিগুলোর গ্যারান্টি হিসেবে দেওয়া চেকগুলোতে সাইফুল ইসলামই স্বাক্ষর করেছেন। তাকে প্রায়ই বাণিজ্য সচিবের একান্ত সচিবের (পিএস) কক্ষে বিভিন্ন ক্লায়েন্টের সাথে বৈঠক করতে দেখা যায়, যা প্রশাসনে তার দাপটের প্রমাণ দেয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এই হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির পেছনে কারা জড়িত, তা নিয়েও চলছে নানা গুঞ্জন। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে তিন ব্যক্তির নাম, যারা “তিন পান্ডব” নামে পরিচিত। তারা হলেন—প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। অভিযোগ উঠেছে, নিয়োগ, পদোন্নতি ও বিভিন্ন প্রকল্পের কমিশন বাবদ হাজার হাজার কোটি টাকা এই চক্রের পকেটেই যাচ্ছে। তাদের হাতে মন্ত্রণালয়গুলো জিম্মি হয়ে পড়েছে এবং পুরো প্রশাসনে একটি ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ নতুন নয়। তাকে প্রশাসনে ” লীগের দোসর আমলা” হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং পূর্ববর্তী সরকারের আমলে তিনি বিভিন্নভাবে সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, দেশে ইন্টারনেট শাটডাউনের মতো বিতর্কিত ঘটনায় তার ভূমিকা ছিল বলেও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি এই অভিযোগগুলোর সত্যতা থাকে, তবে এটি দেশের প্রশাসনের জন্য একটি অশনিসংকেত। অর্থের বিনিময়ে শীর্ষ পদে নিয়োগ হলে পুরো প্রশাসনিক কাঠামো ভেঙে পড়বে এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বলে কিছু থাকবে না। এই সিন্ডিকেটের মূলোৎপাটন করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা না গেলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।