চারদিন আগে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিল বিএনপি।
বেগম খালেদা জিয়ার স্থায়ী জামিন এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য এই আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু সেই ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে আরও চারদিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত বিএনপি আল্টিমেটামের পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় নির্ধারণ করতে পারেনি।
এধরনের আল্টিমেটাম দেওয়ার ফলে একদিকে যেমন রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি হালকা এবং খেলো হয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে যাচ্ছে।
সাধারণত রাজনীতিতে আল্টিমেটাম চূড়ান্ত সতর্ক সংকেত।
এধরনের আল্টিমেটামের পর সেই দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সর্বস্ব উজাড় করে কর্মসূচি পালন করা হয়।
কিন্তু বিএনপির ক্ষেত্রে সেরকম হচ্ছে না।
বিএনপি এর আগে অন্তত এক ডজন বার বিভিন্ন আল্টিমেটাম দিয়েছিল।
কিন্তু সেই সমস্ত আল্টিমেটামের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর বিএনপি বরং এটি ভুলে গেছে।
২০০৯ সাল থেকে এরকম আল্টিমেটাম দিয়েই যাচ্ছে বিএনপি।
২০১৩ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য আল্টিমেটম দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু সেই আল্টিমেটাম ব্যর্থ হয়। এরপর নির্বাচন বন্ধ করার জন্য আল্টিমেটম দিয়েছিল বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
সেই আল্টিমেটামও সফল হয়নি।
২০১৫ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের এক বছর পূর্তির সময়ও বেগম খালেদা জিয়া আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন এবং যতক্ষণ পর্যন্ত সরকারের পতন না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবেন না বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন।
কিন্তু সেই আল্টিমেটামও ব্যর্থতায় পর্যবেসিত হয়।
আজ পর্যন্ত বেগম জিয়ার সেই অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়নি।
এরপর ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী বেগম খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হন।
এই সময় বিএনপির পক্ষ থেকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিল, বলেছিল যে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি বেগম জিয়াকে মুক্ত না করা হয় তাহলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
কিন্তু দুই বছর বেগম খালেদা জিয়া কারান্তরীন থাকলেও বিএনপি দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি।
আবার ২০১৮ নির্বাচনের পরও বিএনপির পক্ষ থেকে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছিল নির্বাচন বাতিল এবং পুনঃনির্বাচনের দাবিতে।
সেই আল্টিমেটামেও সাড়া দেয়নি সরকার।
গত বছরে ১০ ডিসেম্বর বিএনপি আল্টিমেটাম দিয়েছিল। সেই আল্টিমেটাম অনুযায়ী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল।
কিন্তু সেই আল্টিমেটামও সফলতার মুখ দেখেনি।
আর সর্বশেষ এক দফা ঘোষণার পর বিএনপি নতুন করে আল্টিমেটাম দেয় যে এক দফা বাস্তবায়ন করতে হবে।
যদি বাস্তবায়ন না করা হয় তাহলে বিএনপি কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটাবে।
কিন্তু সেই এক দফা আন্দোলনও এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে।
প্রশ্ন হলো যে বিএনপি বার বার আল্টিমেটাম দিচ্ছে কিন্তু সেই আল্টিমেটাম গুলো কেন ব্যর্থ হচ্ছে?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, বিএনপি কোনো রকম পরিস্থিতি যাচাই বাছাই ছাড়াই নিজেদের শক্তি সামর্থ্য বিবেচনা করা ব্যতিত রেখে এধরনের আল্টিমেটাম দিচ্ছে।
যার ফলে আল্টিমেটাম গুলো ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে।
বিএনপি যখন এই ধরনের আল্টিমেটাম দেয়া তখন পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করা উচিত বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বিশেষ করে একটি রাজনৈতিক দল কত দূর পর্যন্ত যেতে পারে এবং কতটুকু তার সামর্থ রয়েছে তা বিবেচনা করেই আল্টিমেটামের পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
কিন্তু সেক্ষেত্রে বিএনপি তা করছে না।
না করার ফলে বার বার তার আল্টিমেটাম একটা হাস্যকর বিষয়ে পরিণত হচ্ছে।
আর সে কারণেই অনেকে মনে করছেন যে, এই ধরনের আল্টিমেটাম দিয়ে রাজনৈতিক দল হিসেবেই বিএনপি জনগণের কাছ থেকে গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে।
পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল অপরাজিতবাংলা ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন oporajitobangla24@yahoo.com ঠিকানায়।