ঢাকারবিবার , ১৯ নভেম্বর ২০২৩
  1. অনান্য
  2. অপরাধ ও আইন
  3. অভিবাসীদের নির্মম জীবন
  4. অর্থনীতি
  5. আত্মসাৎ
  6. আন্তর্জাতিক
  7. ইতিহাস
  8. উদ্যোক্তা
  9. এশিয়া
  10. কৃষি
  11. ক্যাম্পাস
  12. খেলাধুলা
  13. গণমাধ্যম
  14. গল্প ক‌বিতা
  15. চট্টগ্রাম বিভাগ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বিএনপি অফিস এখন যেন মৃতপুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক
নভেম্বর ১৯, ২০২৩ ৩:৪৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মনোনয়নপত্র বিক্রির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও এর শরিক দলগুলো নির্বাচনী যাত্রা শুরু করে দিল। অন্যদিকে গতকাল শনিবারও বিএনপির অফিসে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। রাজনীতির এমন বিপরীতমুখী অবস্থা চলমান সংকটেরই প্রতিচ্ছবি যেন।

স্লোগান-মিছিলে ২২ দিন আগেও রাজধানীর নয়াপল্টন ছিল নেতাকর্মীর পায়ের ছন্দে মুখর। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সেই আঙিনা এখন নির্জন। ঝুলছে ২২ দিন ধরে তালা। প্রধান ফটকের স্বল্প দূরত্বে দুই পাশে পুলিশের কড়া পাহারা। ‘গ্রেপ্তার ভীতি’তে নয়াপল্টনের আশপাশ এড়িয়ে চলছে সবাই। কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী এমনকি নিরাপত্তা প্রহরীরও নেই দেখা। প্রহরীর টেবিলটা পড়ে রয়েছে আড়াআড়ি। যতদূর দেখা যায় ময়লা আর ধুলোর আস্তরণ। লিফলেট, পোস্টারের ছেঁড়া অংশ, খালি পানির বোতল, উল্টে থাকা দুটি প্লাস্টিকের চেয়ার–

সবকিছু এলোমেলা। এর মধ্যেই আবিষ্কার করা গেল নির্বাচন কমিশনের খামে আসা একটি চিঠি, আলোছায়াতে পড়ে আছে কার্যালয়ের ভেতর। সব মিলিয়ে দেশের অন্যতম বড় দলটির গমগম করা রাজনৈতিক কার্যালয়ে এখন যেন রাজ্যের আঁধার।

সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে বিএনপি রাজপথে। তাই দলটি সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পরও প্রধান কার্যালয় ঘিরে নেই ভোটের আমেজ। ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনের আগে দলের মনোনয়ন নিতে নেতাকর্মীর যেমন সরব উপস্থিতি ছিল, এবার যেন তার ঠিক উল্টো ছবি।

গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় দলটির মহাসমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষ, হতাহত আর গ্রেপ্তার অভিযানের পর থেকেই তালা পড়ে কার্যালয়ে। ১৭ দিন পর ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেছিলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা চাইলে তাদের কার্যালয়ে যেতে পারেন। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মূল ফটকে তালা বিএনপি লাগিয়েছে বলে দাবি করেছিলেন তিনি। এর এক দিন পরই কার্যালয়ের সামনে কাঁটাতারের ব্যারিকেড সরিয়ে নেয় পুলিশ। নিরাপত্তা বেষ্টনীও কার্যালয়ের সামনে থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া হয় তখন।

প্রশাসনের তরফ থেকে এমন আশ্বাস এবং কার্যালয় ঘিরে পুলিশি তৎপরতা একটু শিথিল হওয়ার পরদিন ১০-১২ নেতাকর্মী তালাবদ্ধ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় তারা অবরোধ সমর্থনে স্লোগানও দেন। তবে কিছু সময়ের মধ্যেই পুলিশ সেখান থেকে তাদের সরিয়ে দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। এক দিন বিরতি দিয়ে ওই সময় থেকে আবারও দলীয় কার্যালয়ের সামনে শক্ত অবস্থান নেয় পুলিশ। দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করে। এখনও সেরকমই আছে নয়াপল্টনের চেহারা। তবে কার্যালয়ের পাশের ফুটপাত সচল হয়েছে, পথচারী চলাচল করতে পারছেন।

বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ একতরফা নির্বাচন আয়োজনের সব কৌশল নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে ২৮ অক্টোবর শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করে বিএনপি নেতাকর্মীর নামে মামলা দিয়ে গণহারে গ্রেপ্তার করছে। সাজানো নির্বাচনে যাতে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয় সেজন্য বিরোধী দলের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। এ কারণেই নেতাকর্মীর আবেগের ঠিকানা দলীয় কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।

কবে নাগাদ কার্যালয়ের তালা খোলা হবে তা বলতে পারছেন না দলের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, নয়াপল্টন কার্যালয়ের নিচ থেকে লাইব্রেরিয়ানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গুলশান কার্যালয় থেকে বের হওয়ার পথে তাদের মিডিয়া সেলের তিনজন অরাজনৈতিক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর আগেও নয়াপল্টন কার্যালয়ে যখন বিভিন্ন সময়ে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে তখন কার্যালয়ের কর্মচারীদের গ্রেপ্তার করেছে, কারাগারে পাঠিয়েছে। এখন তারা সবাই অপেক্ষা করছেন একটি স্বাভাবিক পরিবেশের। যখন আবার রাজনীতি করার সুযোগ আসবে তখনই কার্যালয়ে যাওয়ার চিন্তা করছেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশে ফ্যাসিজম একেবারে আটঘাট বেঁধে জেঁকে বসেছে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে বিরোধী দলের প্রধান কার্যালয় এরকম অবরুদ্ধ করার কোনো নজির নেই। তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে স্বৈরশাসন চলছে তাতে এরকম ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। এর আগেও তারা একাধিকবার বিএনপির কার্যালয়ে হামলা করেছে, অবরুদ্ধ করেছে, কার্যালয়ের মধ্যে তাণ্ডব চালিয়েছে, লুটপাট করেছে। এটি তাদের ঐতিহ্য।

এখন কার্যালয়ে যাওয়ার মতো পরিবেশ নেই। শুধু নেতাকর্মী নয়, কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও নিরাপদ নন। পুলিশ যাদের পাচ্ছে তাদের গ্রেপ্তার করছে। এ অবস্থায় কার্যালয় কে খুলবে? দলের সব জ্যেষ্ঠ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাহলে ওই কার্যালয়ে কে বসবে?
দলটির দাবি, মহাসমাবেশ ঘিরে এখন পর্যন্ত সারাদেশে ২৯৬ মামলায় ১৩ হাজার ২১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আহত হয়েছেন ৪ হাজার ১৩৩ জন এবং একজন সাংবাদিকসহ নিহত হয়েছেন ১৪ জন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কোনো নেতাকর্মীকে দেখা যায়নি গতকাল শনিবারও। ভালো নেই কার্যালয় ঘিরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য। ফুটপাতে হকারদেরও নেই আগের মতো হাঁকডাক। ধস নেমেছে হোটেল-রেস্তোরাঁর ব্যবসায়। পুলিশের অবস্থানের কারণে সাধারণ মানুষও এখন নয়াপল্টন এলাকা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন। আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ীরাও ধুঁকছেন তাদের অতিথি শূন্যতায়। বিভিন্ন মার্কেটেও বেচা-বিক্রি কমে গেছে বলে অভিযোগ দোকান মালিকদের।

মহাসমাবেশে সংঘর্ষের পর থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় পুলিশ। পরদিন গোয়েন্দা পুলিশ সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট কার্যালয়ের সামনে স্টিকার দিয়ে ঘিরে তদন্ত চালায়। তখন পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, ‘ক্রাইম সিন’ লিখে বেষ্টনী দিয়ে ঘিরে রাখার অর্থ হচ্ছে, ওই বেষ্টনী পেরিয়ে বিএনপি কার্যালয়ে কেউ ঢুকতে বা বের হতে পারবে না। অপরাধ তদন্তের জন্য সেখান থেকে পুলিশ আলামত সংগ্রহ করছে। পুলিশের তদন্ত কাজের এ প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিএনপি কার্যালয় কার্যত বন্ধ থাকবে।

এর দুই দিন পর কার্যালয়ের দুই পাশে কাঁটাতারের ব্যারিকেড বসায় পুলিশ। কার্যালয়ের সামনের ফুটপাত দিয়েও সাধারণ মানুষজনের চলাচল বন্ধ রাখা হয়। পথচারীদের পুলিশ রাস্তার পাশ দিয়ে ঘুরে যেতে বলত। মামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে তখন থেকে কোনো নেতাকর্মী কার্যালয়মুখী হননি। এমনকি ফুটপাত দিয়েও চলাচলে বাধা দেওয়া হয়েছে এতদিন। তবে গত বুধবার থেকে ফুটপাত দিয়ে চলাচল উন্মুক্ত হয়।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল অপরাজিতবাংলা ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন oporajitobangla24@yahoo.com ঠিকানায়।