খুলনায় ইদানিং বেড়ে গেছে রহস্যময় ব্যক্তিদের আনাগোনা। তাদের চালচলন, কথাবার্তা শুনে প্রাথমিকভাবে মানসিক প্রতিবন্ধী মনে হয়। কোথা থেকে তারা এসেছে, সারাদিন কোথায় ঘোরাফেরা করে, কী খায়, কোথায় থাকে- সঠিকভাবে এসব কেউই বলতে পারেন না। সাধারণ মানুষ তাদের এক কথায় বলেন ‘পাগল’ আবার কেউ কেউ তাদের মনে করেন কোন দেশ বা বিশেষ গোষ্ঠির ‘এজেন্ট’। অনেকেই অনর্গল হিন্দি ভাষায় কথা বলেন। কখনো কখনো চুপচাপ দীর্ঘ সময় একইস্থানে বসে থেকে তারা কোন কিছু নজরদারি করেন নাকি স্বভাবগতভাবে চুপ করে থাকেন, তা বোধগম্য নয়। সবসময় তারা নিজেদের এতোটাই অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্ন রাখেন যে, তাদের সাথে কেউ কথা বলা বা কোন প্রশ্ন করতে এগিয়ে যায় না। অপরিচ্ছন্নতাই তাদের নিজেদের রক্ষায় ঢাল হিসেবে কাজ করে। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, এদের বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য পুলিশ বা সমাজ সেবা অধিদফতরের কাছে নেই। স¤প্রতি খুলনাঞ্চলে বেশ কিছু জঙ্গী আটক এবং এ ধরনের সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় বেশ কিছুটা আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে নগরবাসীর মনে। গোয়ালখালী বাসস্ট্যান্ড মোড়ে নাম-পরিচয়হীন এ ধরনের একজনকে সারাদিন দেখা যায় দেয়ালের পোস্টার লিফলেট ও খবরের কাগজ ছিঁড়তে। কাস্টমস মোড় এলাকার ব্যক্তিটি পুরনো জুতা স্যান্ডেল জড়ো করেন। ডাকবাংলো মোড় এলাকার ব্যক্তিটি কল্পিত কোনো ব্যক্তির উদ্দেশ্যে প্রায় সময় অশ্রাব্য গালিগালাজ করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগরীর একাধিক সচেতন মানুষের সাথে বলা হলে তারা বলেন, খুলনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগীয় শহর। এখানে প্রতিরক্ষা বাহিনীর নৌ-ঘাটি, সেনা ক্যান্টনমেন্ট, বিজিবির সেক্টর হেড কোয়ার্টার, রেঞ্জ ও মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দফতর, সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার আঞ্চলিক অফিস, বেতার ও টিভি কেন্দ্র, বড় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র, শিল্প কারখানা রয়েছে। সুনির্দিষ্টভাবে যদিও ভাসমান সন্দেহজনক এসব মানুষের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি, তারপরও তাদের নজরদারিতে আনা দরকার। তারা আরো বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় কিন্তু বেশ কিছু ভারতীয় সন্দেহভাজন ব্যক্তি সেতু এলাকা থেকে আটক হয়েছিল। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার বিএম মো. নুরুজ্জামান জানান, নগরীর ভাসমান, ভবঘুরেদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য উপাত্ত আমাদের হাতে নেই। সন্দেহজনক মনে হলে তাকে আমরা সাথে সাথে আইনের আওতায় আনি। খুলনা জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক খান মোহাতার হোসেন বলেন, নানা ধরনের সীমবদ্ধতার কারণে ইচ্ছে থাকলেও ভবঘুরেদের পুনর্বাসনে সমাজ সেবা কার্যালয় তেমন কিছু করতে পারছে না। বিভাগীয় শহর খুলনায় কোনো ভবঘুরে পুনর্বাসন কেন্দ্র নেই। সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সেগুলো বাস্তবায়িত হলে তাদের জন্য ভালো কিছু করা সম্ভব হবে। নগরীর ভাসমান এসব ব্যক্তিদের বিষয়ে কোন তথ্য কার্যালয়ে নেই বলে তিনি জানান।
বেশ কয়েকদিন ধরে খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেছে, ডাকবাংলো মোড়, খালিশপুর কাস্টমস মোড়, গোয়ালখালী মোড়, রেলীগেট ট্রাক স্ট্যান্ড, সোনাডাঙ্গা বাইপাস রোড মিলিয়ে ৮/১০টি স্থানে কয়েকজন এ ধরনের ব্যক্তি রয়েছেন যাদের কোন নির্দিষ্ট ঠিকানা নেই। সারাদিন পথে পথেই থাকেন। কয়েকজন অনর্গল হিন্দিতে কথা বলেন। বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁর সামনে খাবারের জন্য দাঁড়িয়ে থাকেন। কেউ কিছু দিলে খান, না দিলে চলে যান। রাত হলে অন্যত্র চলে যান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাধারণ মানুষ ‘পাগল’ মনে করে তাদের নিয়ে খুব বেশি আগ্রহ দেখান না। তবে তারা কোথা থেকে এসেছে এবং কেনো নির্দিষ্ট কতকগুলো এলাকা বেছে নিয়ে সেখানেই রাতদিন অবস্থান করেন এবং মাঝে মাঝে লাপাত্তা হয়ে যান- এ প্রশ্নের উত্তর কারো কাছে মেলেনি।
নগরীর ডাকবাংলো মোড় এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, মাঝে মাঝে একজনকে দেখি। কিছু খেতে দিলে খায়, না হলে চুপ করে চলে যায়। রাতে ফুটপাতে ঘুমায়। কখনো কখনো কয়েকদিনের জন্য লাপাত্তা হয়ে যায়, আবার ফিরে আসে। সচেতন মহল মনে করেন, কখনও জঙ্গীবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার উত্থান ঘটলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা দমনে সফলতা দেখান। খুলনাতে বেশ কয়েকজন জঙ্গী ইতঃপূর্বে ধরাও পড়েছে। কাজেই এ ধরনের সন্দেহভাজনদের নজরদারিতে আনা দরকার।