ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার ইতিহাস বিকৃত করে অপরাজনীতিতে নেমেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীরউত্তমকে বিতর্কিত করার হীন উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা অপপ্রচারের একটি সংগঠিত ঘৃণ্য অপতৎপরতা জাতি গভীর ক্ষোভের সাথে লক্ষ্য করছে। সরকার প্রধান ১৫ আগস্ট শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ঐতিহাসিক ভ‚মিকাকে বিকৃত করার মাধ্যমে সে অপচেষ্টা নতুনভাবে শুরু করা হলো।কারণ এখন আর সরকারের কোনো রাজনীতি নেই। তারা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য অপরাজনীতিতে নেমেছে। ক্ষমতাসীনরা এই মিথ্যাচার করে ইতিহাস বিকৃত করার প্রক্রিয়ায় জিয়াউর রহমানকে খাটো করার অপচেষ্টয় লিপ্ত হয়েছে। জিয়াউর রহমানকে নিয়ে এই ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচারের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান তিনি।
১৫ আগস্টের ঘটনার সঙ্গে জিয়াউর রহমানকে জড়িত করে সরকার প্রধানের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ‘মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠাকারী ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা শহীদ জিয়াউর রহমানকে বিতর্কিত করার হীন উদ্দেশে ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা অপপ্রচারের একটি সংগঠিত ঘৃণ্য অপততপরতা জাতি গভীর ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছে। ১৫ আগস্ট সরকার প্রধান কর্তৃক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ঐতিহাসিক ভূমিকাকে বিকৃত করার মাধ্যমে সে অপচেষ্টা নতুনভাবে শুরু করা হলো।
মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা যে গণতান্ত্রিক চেতনা, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করেছিলাম, গত এক দশকের বেশি সময় ধরে বর্তমান সরকার সেই চেতনাকে হিমাগারে পাঠিয়েছে। সেই চেতনাকে বিনষ্ট করে দিয়ে তারা একটি ফ্যাসিবাদী সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে। ক্ষমতাসীনরা এ মিথ্যাচার করে ইতিহাস বিকৃত করার প্রক্রিয়ায় জিয়াউর রহমানকে খাটো করার অপচেষ্টায় লিপ্ত।
তিনি বলেন, আমরা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে এরকম ষড়যন্ত্র এবং মিথ্যাচারের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির ভিডিও প্রচার উদ্দেশ্যমূলক উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১৫ আগস্ট হত্যা মামলায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত এক আসামীকে (মেজর (অব) মাজেদ) দিয়ে বন্দি অবস্থায় দেশের আইন, আদালত, শাসনব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে সরকাররের মুসাবিদায় মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের ধারণকৃত ভিডিও উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারে বাধ্য করা এবং একই সাথে বেতনভুক্ত সাইবার ফোর্স নিয়োগ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করা হয়েছে। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ১৫ আগস্ট হত্যার সকল আসামীদেরকে যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করা এবং রায় কার্যকর করার পর্ব প্রায় সম্পন্ন হতে চলেছে। এই অবস্থায় আইনিভাবে এই ধরনের বক্তব্যের কোনো সাক্ষ্যমূল্য নাই। এই পদক্ষেপ বরঞ্চ সংঘটিত বিচার প্রক্রিয়া ও রায়কে নতুনভাবে বিতর্কিত করে তুলতে পারে। আইন বিরোধী এই ধরনের পদক্ষেপ আসলে অপরাজনীতি ছাড়া আর কিছুই নয়।
তিনি বলেন, কথিত মাজেদের জবানবন্দিতে বয়ান করা হয়েছে ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডে জড়িতদের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিদেশে পাঠিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নিজেও ১৯৭৫ সালের ঘটনার নায়কদের ইনডেমনিটি রেফারেন্স দিয়ে জিয়াউর রহমানকে ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের মদদদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করেছেন। অথচ জাতি জানে, প্রকৃতপক্ষে সরকার প্রধান নিজেও জানেন, ওই সময়ের ঘটনার নায়কদের ইনডেমনিটি দিয়েছিল ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক, জিয়াউর রহমান নয়। এই অধ্যাদেশটি ১৯৭৫ সালের অধ্যাদেশ ৫০ নামে অভিহিত। ‘দ্য বাংলাদেশ গেজেটে’ প্রকাশিত অধ্যাদেশটিতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদ ও আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এমএইচ রহমানের স্বাক্ষরে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত ১১ বছরে বর্তমান সরকারের আমলে বিচারবর্হিভুত হত্যার শিকার হয়েছে প্রায় তিন হাজার জন। এই সকল হত্যাকান্ডের সুনির্দিষ্ট ফৌজদারি অভিযোগ যা বাংলাদেশের দন্ডবিধি অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য। একদিন সকল বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের বিচার ঠিকই হবে এদেশে।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু ও চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক অপরাজিত বাংলা