বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘‘এই সরকারের কোনোরকমের মূল্যবোধ নেই। আওয়ামী লীগ তো গণতন্ত্রই বিশ্বাসই করে না। আওয়ামী লীগ ও গণতন্ত্র একসাথে যায় না, কখনোই যায় না। ওদের যে রসায়ণ তার মধ্যে গণতন্ত্র হয় না।ওদের ভাবটাই হচ্ছে যে, আমি ছাড়া আর কেউ নেই। আমি একমাত্র দেশকে নিয়ন্ত্রণ করবো, আমি দেশ চালাবো, আমি সব কিছু।”
‘‘সেজন্য এই অবস্থা থেকে মুক্ত হতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, পারস্পরিক সমস্যাগুলোকে দূর করতে হবে। ন্যাশনাল ইউনিটি এই গণতন্ত্রের জন্য বেশি প্রয়োজন। ” বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে ‘গণতান্ত্রিক আন্দোলন ছাড়া কেউই রক্ষা পাবে না’ মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন আয়োজিত ‘মুক্ত সাংবাদিকতার অন্তর্ধান দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলামের সঞ্চলনায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, ডিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাকের হোসাইন, বিএফইউজের সিনিয়র সহ সভাপতি নুরুল আমিন রোকন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোরসালিন নোমানী, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি বাছির জামাল ও রাশেদুল হক, ফটোজার্নালিস্ট এসোসিয়েশন সাবেক সভাপতি একেএম মহসিন, সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিষ্ট আবদুল আউয়াল ঠাকুরসহ সাংবাদিক নেতারা বক্তব্য রাখেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, জাতিকে আবদ্ধ করে রাখার জন্য যে সব আইন করা দরকার বর্তমান সরকার তা করেছে। উদ্দেশ্য একটাই যেন ভিন্নমত কথা বলতে না পারে এবং তাদের অপকর্মগুলো জনগণের কাছে প্রকাশিত না হয়।
তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাংবাদিকদের মধ্যে ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করেছে। এই আইন বাতিল এখন সময়ের দাবি।
তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে যেটা চলছে আমার কাছে মনে হয় সেটা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। ১৯৭২ সালে তারা যখন ক্ষমতায় এসেছিলো তখনও তারা বিভিন্ন গনবিরোধী আইন করার মাধ্যমে জনগণের কণ্ঠরোধ করেছে। আমি বলব এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য বদলে দেয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। বদলে দেয়ার পথ একটাই আর সেটি হচ্ছে আন্দোলন সংগ্রাম। আমাদের সেই আন্দোলন সংগ্রামেকে এগিয়ে নিয়ে যেয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে পরাজিত করতে হবে। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে এরা মোটেও শক্তিশালী না। যারা দিনের ভোট রাতে করে মিথ্যার উপর ভিত্তি করে টিকে থাকে তারা কখনোই শক্তিশালী হতে পারে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমার কাছে মনে হয় সারাবিশ্বে কর্তৃত্ববাদী সরকারের প্রবণতা বেড়েছে এবং বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। গণতন্ত্র এখন আগের জায়গায় নেই। বৈশ্বিক কারণে গণতন্ত্র পেছনের দিকে চলে গেছে। আপনারা লক্ষ্য করবেন যেই আমেরিকাকে গণতন্ত্রের আঁতুরঘর বলা হয় সেখানে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর কিভাবে গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। আমেরিকার মতো ঐতিহ্যবাহী গণতান্ত্রিক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের কাছ থেকে যেটা কখনো কাম্য না।
সাংবাদিকদের গণতন্ত্রের অন্যতম মূল ভিত্তি উল্লেখ করে তিনি বলেন, নানা প্রতিকূলতার মাঝেও আপনারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অগ্রভাগে আছেন। আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে শক্তিশালী আন্দোলনের মাধ্যমে এই অগণতান্ত্রিক সরকারকে পরাজিত করে একটি জবাবদিহিতামূলক জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করি।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, মরহুম সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী একটা কথা বলতেন, ‘আওয়ামী লীগ এমন এক বাক্স যেখানে ঢুকালে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে বের হয়’।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে আমিও যুদ্ধ করেছি। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেই না। ফখরুল ভাই দেন কিনা জানি না। যে দেশে শহীদ জিয়াউর রহমানকে রাজাকার ও পাকিস্তানের এজেন্ট বলা হয় সেদেশে কিসের মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় দিবো?
তিনি আরো বলেন, দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদের মতো বাংলাদেশের একজন প্রবীণ সম্পাদককে অন্যায়ভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। তিনি জামিন পাচ্ছে না। বাংলাদেশে আজ মুক্ত স্বাধীনতা নেই। সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে ও গণতন্ত্রের পক্ষে আমরা অতীতে ছিলাম, এখনো আছি ও ভবিষতেও থাকবো। আমি বিশ্বাস করি আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে এই ফ্যাসিবাদের পতন হবে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে “কালোর চেয়েও কালো” আইন উল্লেখ করে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী বলেন, এই আইন মানুষের বাক-স্বাধীনতার ক্ষেত্রে মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, এই আইনের দ্বারা স্বাধীন গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা আজ হুমকির মুখে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আজ রুদ্ধ। কেড়ে নেয়া হয়েছে মুক্ত চিন্তার স্বাধীনতাকে। যার ফলে ইতিহাসের উপর গবেষণা সীমিত হয়ে পড়েছে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সরকারের সমালোচকদের ঘায়েল করার মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ভিন্নমত দমনে এই আইনের যথেচ্ছা ব্যবহার হচ্ছে। শুধু পত্রিকায়-ই নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনা করলেই মামলা হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে