বিরোধপূর্ণ নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশী আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের মধ্যে সংঘাত চলছেই। গত কয়েকদিন ধরে চলা এই সংঘাত বন্ধের কোনো লক্ষণই নেই। চারদিন ধরে চলতে থাকা এই সংঘাতে বহু প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আর্মেনিয়ার সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট। এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আর্মেনিয়া ওই বিরোধপূর্ণ অঞ্চলের দাবি না ছাড়বে ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন তারা।
তিনি বলেন, আমাদের একটাই শর্ত। আর্মেনিয়া বাহিনীকে বিনা শর্তে, পুরোপুরি এবং তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের ভূখণ্ড ছাড়তে হবে।
গত কয়েকদিনের টানা সংঘাতে দু’দেশের সামরিক বাহিনীর সদস্যসহ শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
জাতিসংঘ এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হলেও দু’পক্ষই তা উপেক্ষা করে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবেশী এই দু’দেশের মধ্যে সংঘাতে আজারবাইজানকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে তুরস্ক।
এদিকে, তুরস্ক আজারবাইজানের পক্ষে থাকলেও রাশিয়া আর্মেনিয়ার প্রতি নমনীয়। আর্মেনিয়ায় তাদের একটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। তবে তাদের আজারবাইজানের সঙ্গেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। দু’পক্ষকেই সংঘাত থামানোর আহ্বান জানিয়ে আসছে রাশিয়া।
১৯৮০’র দশকের শেষদিকে কারাবাখ অঞ্চলে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৯১ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মুহূর্তে সংঘর্ষ চূড়ান্ত আকার ধারণ করে।
১৯৯৪ সালে দু’পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত এ সংঘর্ষে ৩০ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। কারাবাখ অঞ্চলটি আজারবাইজানের ভেতরে হলেও আর্মেনিয়া সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করছে জাতিগত আর্মেনীয়রা।
২০১৬ সালের পর এবারই প্রথম এই অঞ্চলে বড় ধরনের সংঘাতের জড়িয়ে পড়েছে আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান। ওই অঞ্চলে দুই দেশের সামরিক বাহিনী ভারী অস্ত্র ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ করেছে উভয় পক্ষই।
আজারবাইজান সরকার বলেছে, আর্মেনিয়ার হামলায় তাদের অন্তত ১২ জন বেসামরিক ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে ৩৫ জন। তারা সামরিক ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ প্রকাশ করেনি।
অন্যদিকে, আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকল পাশিনিয়ান বলেছেন, আজারবাইজানের সশস্ত্র বাহিনীর হামলায় তাদের সামরিক ও বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেকেই প্রাণ হারিয়েছে।
কারাবাখ অঞ্চলের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সেখানে ৮৪ জন সেনা প্রাণ হারিয়েছে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষেরই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও দুই দেশই আলোচনায় বসার সম্ভাবনা নাকচ করেছে। আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, তারা আর্মেনিয়ার সঙ্গে কোনো আলোচনা করবেন না।
একই ধরণের কথা বলেছেন আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান। তিনি বলেছেন, সংঘর্ষ ও উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে। এ অবস্থায় আজারবাইজানের সঙ্গে কোনো ধরণের আলোচনার সম্ভাবনা নেই। নগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গত রোববার সকাল থেকে দু’দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘাত এখনও চলছেই।