শ্রম আইন, কর্মপরিবেশ ও মানবাধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার হুঁশিয়ারি ইউরোপীয় কাউন্সিলের। যার ফলে দুশ্চিন্তা বাড়ছে রপ্তানি, বিশেষ করে পোশাক খাত নিয়ে। উদ্যোক্তারা বলছেন, গেলো কয়েক বছরে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে এই খাতে। কিন্তু তাতেও পুরোপুরি স্বস্তি খুঁজে পাচ্ছেন না তারা। তাদের মতে, পদক্ষেপ নিতে হবে সতর্কতার সঙ্গে।
দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক। যার অর্ধেকের বেশি যায় ইউরোপের দেশগুলোতে। ওই জোটের পরিসংখ্যান এজেন্সি ইউরোস্ট্যাটের মতে, ২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে তারা পোশাক আমদানি করেছে প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলারের। বছর ব্যবধানে যা বাড়ে ৩৫ শতাংশের ওপরে।
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ওই অঞ্চলে রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে বাংলাদেশ। জিএসপি হিসেবে যা চলমান থাকবে ২০২৯ সাল পর্যন্ত। তবে এই সুবিধা উঠে গেলে চড়া শুল্ক দিয়ে কিভাবে প্রতিযোগিতা করবে বাংলাদেশ- সেই দুশ্চিন্তা নানা মহলে। এই আলোচনার মধ্যেই নতুন করে শঙ্কা বাড়িয়েছে, ইউরোপীয় কাউন্সিলের দেয়া চিঠিতে। যাতে, প্রশ্ন তোলা হয়েছে, দেশের শ্রমমান, মানবাধিকার ও কর্মপরিবেশ নিয়ে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়া নিয়ে যখন দেনদরবারের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ, তখন এমন সতর্কতা আমলে নিতে হবে গুরুত্বের সঙ্গে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএস) গবেষণা পরিচালক মাহফুজ কবীর বলেন, এটা খুবই আশঙ্কার বিষয়। এখন তারা কথাবার্তা তুলছে। এর মানে যেকোনও সময় সিদ্ধান্ত আসতে পারে। কিন্তু এর আগে অনেক প্রক্রিয়া রয়েছে। বিশেষ করে আইএলওকে বলতে হবে বাংলাদেশ এরকম করছে না। বিচক্ষণতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমার মনে হয় না, আমরা কোনও জায়গায় পিছিয়ে আছি। ফলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে আমরা ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের পাঠানো চিঠির আগে, একই ইস্যুতে বাংলাদেশকে সতর্ক করে রপ্তানির সবচেয়ে বড় একক বাজার যুক্তরাষ্ট্রও। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংস্থা ওটেক্সার হিসাবে, গত বছর দেশটি বাংলাদেশ থেকে পোশাক কিনেছিল পৌনে ১০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে। যদিও সেই বাজারে ১৬ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিয়ে ব্যবসা করেন দেশীয় উদ্যোক্তারা। তবু শ্রম পরিবেশ, নিরাপত্তা এবং শ্রম আইন সংশোধনসহ নানা বিষয়ে চাপ অব্যাহত রেখেছে মার্কিনিরা।
বিআইআইএস গবেষণা পরিচালক মাহফুজ কবীর বলেন, অনেকের অনেক রকম নজর রয়েছে বাংলাদেশের দিকে। কারণ, বাংলাদেশ উন্নতি করছে। এদেশের শ্রম অধিকার সনদ রয়েছে। যেগুলোতে অনেক দেশ সই করেছে। তবু প্রশ্ন তুলছে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র। আগামীতে অন্যান্য দেশ যেমন জাপানও তুলতে পারে।
বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, তাদের পরামর্শ অনুযায়ী; শ্রম আইনের যখন যেখানে সংশোধন দরকার করা হচ্ছে। শ্রমিক, মালিক ও সরকার মিলেই সেটা করা হচ্ছে। সুতরাং বাংলাদেশ কোথাও পিছিয়ে নেই। ওটেক্সার তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে বাংলাদেশ থেকে ২৩ শতাংশ পোশাক কেনা কমায় যুক্তরাষ্ট্র।