ফ্রান্সের মুসলিম নেতাদের ১৫ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ। রাষ্ট্রীয় মূল্যবোধ রক্ষায় একটি সনদ মেনে নিতে এই আল্টিমেটাম জারি করা হয়েছে। ইসলামের বিস্তৃতি ঠেকাতে তিনি এমন কড়া অবস্থান নিয়েছেন বলে বিবিসির এক খবরে বলা হয়েছে।
তবে সাম্প্রতিক মহানবী (সাঃ) এর কার্টুন প্রদর্শনকে কেন্দ্র করে এক চেচেন মুসলামন যুবক কর্তৃক ফ্রান্সের এক শিক্ষককে হত্যার পর পরই ফ্রান্সের সরকার ইসলামপন্থিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন। তারই ধারাবাহিকতায় ফ্রান্সের উগ্র ইসলামপন্থিদের এবং যেকোনো ধর্মের উগ্রপন্থিদের উত্থান ঠেকাতে বা নিয়ন্ত্রণে বর্তমান সরকার কিছু আইন করতে যাচ্ছেন।
একে ফরাসি ভাষায় বলা হচ্ছে “Loi confortant les principes républicains” এবং আগামী ডিসেম্বরের ৯ তারিখে এটি ক্যাবিনেটে যাবে। অবশ্য আইনটি পার্লামেন্টে এবং শেষে সিনেট থেকে পাশ হয়ে আসতে হবে।
চরমপন্থী ইসলাম সমর্থকদের প্রতিহত করার জন্য এ নতুন চার্টার প্রকাশিত করলেন প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ। চার্টার অফ রিপাবলিকান ভ্যালুস নামের ওই নির্দেশপত্র ১৫ দিনের মধ্যে গ্রহণ করতে হবে ফরাসি ইসলামী নেতাদের এবং তা যাতে সকলে মেনে চলেন, তা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রস্তাবিত আইনের দিকগুলো নিচে তুলে ধরা হলোঃ
১। দুইটি মূলনীতি পরিস্কারভাবে উল্লেখ করা থাকবে: রাজনৈতিক ইসলাম প্রত্যাখ্যান এবং যেকোনো ধরণের বিদেশি হস্তক্ষেপ।
২। কোনো ব্যাক্তি যদি কাউকে ক্ষতি করতে চায় এবং যাঁকে ক্ষতি করতে চায় তাঁকে চিনিয়ে দেয়ার জন্যে সম্ভাব্য যেকোনো কিছু যদি অন্য থার্ড পারসন করেন (যেমন: চিনিয়ে দেয়া এবং কোথায় আছে এই বিষয়ে তথ্য দেয়া) তাহলে সেইটা অপরাধ বলে গণ্য হবে। জরিমানা হবে ৪৫০০০ হাজার ইউরো এবং তিন বছরের জেল।
৩। যেই শিক্ষককে হত্যা করা হয়েছে তিনি অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের শিকার হয়েছিলেন এইসব কাজে যাঁরা লিপ্ত হবেন এবং সন্দেহের তালিকাতে থাকবেন তাঁদেরকে অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে ডাকা হবে।
৪। হোম-স্কুলিং বা ঘরে থেকে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং ধর্মীয় কারণে সরকারি কর্মকর্তাদের হুমকি দেয়া বা ভয় দেখানো হলে আরও কঠিন শাস্তির বিধান।
নতুন আইনের অধীনে শিশুদের একটি পরিচিতি বা আইডেন্টিফিকেশন নম্বর প্রদান করা, যার মাধ্যমে নিশ্চিত করা যাবে যে তারা স্কুলে যাচ্ছে কি-না। যেসব অভিভাবক এই আইন অমান্য করবে, তাদের বড় অঙ্কের জরিমানাসহ ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডের শাস্তি দেয়া হতে পারে।
৫। সরকারি চাকুরিজীবীদের যেমন:শিক্ষকদের ভয়-ভীতি দেখানো অপরাধ বলে বিবেচিত হবে।
৬। যেইসব এনজিও এবং চ্যারিটিগুলোতে যে কোনো ধর্মের চরমপন্থিদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলে সন্দেহ আছে সেইগুলোকেও ফ্রান্সের সরকারের নজরদারির মধ্যে রাখা হবে।
৭। একজন বিচারক চাইলে কোনো বিশেষ ব্যক্তিকে তাঁর কোনো আক্রমণাত্মক কিংবা বিদ্বেষমূলক কাজের জন্যে যেকোনো উপাসনালয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে।
৮। ফ্রান্সের কোনো এসোসিয়েশন যদি সরকারের সাহায্য পাইতে চায় তাহলে অবশ্যই ফ্রান্সের মূল্যবোধকে সন্মান জানাতে হবে এবং যদি সন্মান না জানায় তাহলে যেই সাহায্য নিবে সেইটা সরকারকে ফিরিয়ে দিতে হবে। আর ১০,০০০ হাজার ইউরোর উপরে কোনো বিদেশি সাহায্য আসলে অবশ্যই সেইটা ডিক্লেয়ার করতে হবে।
সিএফসিএম ইমামদের নিয়োগ এবং কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল অব ইমাম’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সম্মত হয়েছে। এটি ইমামদের আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়ার এবং তাদের অনুমতিপত্র বাতিল করতে পারবে।
এই আইন নিয়ে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি বলেছেন, “উগ্র ইসলামিস্টদের খপ্পর থেকে আমাদের সন্তানদের বিপথে যাওয়া হতে রক্ষা করতে হবে।”
এই আইন নিয়ে ফ্রান্সের আইনমন্ত্রি বলেছেন, “এই আইন হচ্ছে , আমার শিক্ষকদের প্রতি হস্তক্ষেপ হতে দূরে থাকো এবং এই প্রজাতন্ত্রের মূলনীতিতে হস্তক্ষেপ হতে দূরে থাকো।”
উল্লেখ্য যে, দেশটিতে ইসলামের নবী মুহাম্মদ (স)-এর ব্যঙ্গচিত্র নিয়ে ক্লাসে আলোচনা করায় এক শিক্ষক হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এ ঘটনার এক মাস পর মুসলিম নাগরিকদের ওপর আচরণবিধি ঠিক করে দিল ফ্রান্স।