কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনার পারদ আবারও চড়তে শুরু করেছে। একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেই চলেছে উত্তর কোরিয়া। এর মধ্যে অন্তত একটা ক্ষেপণাস্ত্র কোনো সতর্কবার্তা ছাড়াই প্রতিবেশী জাপানের ওপর দিয়ে উড়ে গিয়ে পড়েছে প্রশান্ত মহাসাগরে। দেশটির এমন কর্মকাণ্ডের জবাবে সামরিক মহড়া চালিয়েছে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। সঙ্গে যোগ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও।
গত দুই সপ্তাহে অন্তত আটটি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে উত্তর কোরিয়া। ২০১১ সালে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম ক্ষমতা নেয়ার পর থেকে এক বছরে এতবেশি ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেনি পিয়ংইয়ং। ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার এ হঠাৎ বৃদ্ধি পুরো অঞ্চলে একটা ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। জবাবে যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান যৌথ সামরিক মহড়ার পাশাপাশি ক্ষেপণাস্ত্রও ছুড়েছে।
শুধু তাই নয়, একধাপ এগিয়ে ওয়াশিংটন কোরীয় উপদ্বীপের কাছেই প্রশান্ত মহাসাগরে বিমানবাহী রণতরী পাঠিয়েছে। ফলে পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন অবস্থায় যেকোনো সময় পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
এদিকে গত দুই সপ্তাহ ধরে হঠাৎ এত ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের নেপথ্যের কারণ জানিয়েছে পিয়ংইয়ং। সোমবার (১০ অক্টোবর) দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, যুদ্ধক্ষেত্রে কৌশলগত পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার ও শত্রুপক্ষকে উড়িয়ে দেয়ার মহড়া হিসেবে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ছোড়া হয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীন দল ওয়ার্কার্স পার্টির ৭৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের বিবৃতিটি প্রকাশ করা হয়। এতে কিম জনকে শক্তিশালী নেতা হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। এতে দাবি করা হয়েছে, পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম হিসেবে এসব ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করা হয়েছে। এগুলো স্বল্প পাল্লার অস্ত্র ও যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা। সেনাবাহিনী এগুলোতে আসলে ওয়ারহেডের ডামি সংস্করণ লোড করার অনুশীলন করেছে।
মহড়ায় সফলভাবে দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক ঘাঁটি, বন্দর ও বিমানবন্দরে আঘাত করার অনুশীলন করা হয়েছে। এ উৎক্ষেপণ ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি সতর্কবার্তা। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেএনসিএ একটি ছবি প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উন ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা দিচ্ছেন।
মার্কিন ও দক্ষিণ কোরীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়ে আসছেন ২০১৭ সালের পর প্রথমবার একটি পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালাতে পারে পিয়ংইয়ং। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশটি প্রথমে ছোট আকারের একটি ট্যাকটিক্যাল অস্ত্রের বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। যা দেশটির পরীক্ষা করা ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম।
উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু কর্মসূচি থেকে বিরত রাখতে দেশটির ওপর বেশ কিছু অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে জাতিসংঘ ও পশ্চিমের বেশ কিছু দেশ। এসব নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে পিয়ংইয়ং। ২০০৬ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত অন্তত ছয়টি পরমাণু পরীক্ষা চালিয়েছে তারা।
দেশটির নেতা কিম জং উনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বিশ্বের অন্য নেতাদের সাম্প্রতিক সব বৈঠকই কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৮ সালে কিমের সঙ্গে সবশেষ বৈঠক করেন ট্রাম্প। এরপর আবারও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা শুরু করে দেশটি। সম্প্রতি পর্যবেক্ষকরা সতর্ক করেন, উত্তর কোরিয়া আবারও পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
হঠাৎ করে এখন এতে বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এর অন্যতম কারণ হতে পারে প্রায় দুই বছর পর চলতি বছরের আগস্টে করোনা মহামারির বিরুদ্ধে বিজয় ঘোষণা। আরেকটা কারণ হতে পারে দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সাম্প্রতিক সম্পর্ক আরও সংহত করার চেষ্টা। এসব কারণে এ সময়কে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের সঠিক সময় হিসেবে বেছে নিতে পারে পিয়ংইয়ং।
যেমনটা বলছেন দক্ষিণ কোরিয়ার কুকমিন বিশ্ববিদ্যালয়র অধ্যাপক আন্দ্রেই ল্যানকভ। তিনি বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় গত কয়েক বছর নিশ্চিতভাবেই তারা ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করতে সক্ষম হয়নি। ফলে খেলনাগুলো (ক্ষেপণাস্ত্র) ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা উত্তর কোরিয়ার প্রকৌশলী ও জেনারেলরা তা নিশ্চিত হতে চাচ্ছেন।