ঢাকাশুক্রবার , ১০ নভেম্বর ২০২৩
  1. অনান্য
  2. অপরাধ ও আইন
  3. অভিবাসীদের নির্মম জীবন
  4. অর্থনীতি
  5. আত্মসাৎ
  6. আন্তর্জাতিক
  7. ইতিহাস
  8. উদ্যোক্তা
  9. এশিয়া
  10. কৃষি
  11. ক্যাম্পাস
  12. খেলাধুলা
  13. গণমাধ্যম
  14. গল্প ক‌বিতা
  15. চট্টগ্রাম বিভাগ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ওএইচসিএইচআরের পক্ষপাতমূলক বিবৃতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নভেম্বর ১০, ২০২৩ ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় থেকে ‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রতিবাদ’ শিরোনামে পক্ষপাতমূলক যে বিবৃতি দেয়া হয়েছে তা ঘটনার প্রকৃত অবস্থাকে প্রতিফলিত করে না বলে নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশের সুশীল সমাজ। তারা বলছেন, এ ধরনের বিবৃতি অপরাধীদের নৃশংস ও সহিংস কার্যক্রম চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করতে পারে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার কার্যালয়ের প্রেস ব্রিফিং তথ্যনির্ভর মনে না হওয়ায় তা পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন বাংলাদেশের ৮১ জন বিশিষ্ট নাগরিক।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ৩১ অক্টোবর জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রতিবাদ’ শিরোনামের প্রেস ব্রিফিং আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এতে আমরা জানতে পেরেছি, ২৮ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াতের কর্মসূচি ও তার পরবর্তীতে বাংলাদেশে সংঘটিত সহিংস ঘটনাবলি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে। তবে প্রেস ব্রিফিংয়ে উল্লিখিত কিছু পর্যবেক্ষণ তথ্যনির্ভর মনে হয়নি এবং এ কারণে এটি পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে।’

বিশিষ্ট নাগরিকরা উল্লেখ করেন, প্রেস ব্রিফিংয়ের শিরোনাম ‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রতিবাদ’ ঘটনার প্রকৃত অবস্থাকে প্রতিফলিত করে না। গত ২৮ অক্টোবর এবং তারপরে বাস্তবে যা ঘটেছে তা সঠিকভাবে বোঝার জন্য আমরা এখানে সেসবের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরছি। নির্বিচারে অগ্নিসংযোগ, পুলিশ হত্যা, জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারা এবং ভাঙচুরসহ সব ধরনের সহিংসতাকে ‘রাজনৈতিক প্রতিবাদ’- এর অন্তর্ভুক্ত করায় এ বিবৃতিটি অপরাধীদের নৃশংস সহিংস কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করতে পারে।’

প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের অন্যান্য বিচারকের বাসভবনে হামলাকারী সব দুষ্কৃতকারীকে বিএনপিরকর্মী হিসেবে শনাক্ত করা হলেও বিবৃতিতে তার প্রতিফলন ঘটেনি। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বিরোধী দলের কর্মীরা হামলা করেছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে’ এ ধরনের মন্তব্যে প্রকৃত অপরাধীদের পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিবৃতিতে হামলাকারীদের ‘যাদেরকে সরকারি দলের সমর্থক বলে মনে করা হয়’ মন্তব্য করা হয়েছে। এ ধরনের বক্তব্যের কারণে জনমনে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হতে পারে।

১১ জনের মৃত্যুর খবরটি, বিশেষভাবে সহিংসতায় বিরোধী দলের ছয় সদস্য নিহত হয়েছে বলে যে দাবি করা হয়েছে তা বিভ্রান্তিকর। প্রকৃতপক্ষে ‘রাসেল হাওলাদার এবং ইমরান হোসেন’ নামে দুই গার্মেন্ট শ্রমিক আলাদা ঘটনায় মারা গেছেন। অন্যদিকে জাহাঙ্গীর আলম ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা এবং তাকে ২৯ অক্টোবর লালমনিরহাটে বিএনপির কর্মীরা হত্যা করেছে।

শামীম নামে অপর নিহত ব্যক্তি, যিনি ২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশে মারা গিয়েছেন তিনি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে তার বাবা ইউসুফ নিশ্চিত করেছেন। আরেক নিহত রফিক ভূঁইয়া (৭৩), বিএনপি যাকে পুলিশের হামলায় নিহত বলে দাবি করেছে, তার মেয়ে উর্মি ভূঁইয়া মিডিয়াকে জানিয়েছেন যে তার বাবা সহিংসতার মধ্যে ছিলেন না এবং রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকায় রিকশা থেকে পড়ে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মারা যান।

পুলিশ কনস্টেবল আমিরুল ইসলাম পারভেজ ২৮ অক্টোবর পল্টনে বিএনপির সমাবেশস্থলের কাছে বর্বরোচিত হত্যার শিকার হন এবং ২৯ অক্টোবর ভোরে ঘুমের মধ্যে বাসের হেলপার মো. নঈমকে পুড়িয়ে হত্যা করে বিরোধী দলের বিক্ষোভকারীরা।

বিরোধী দলের কর্মী আব্দুর রশিদের মৃত্যু সম্পর্কে দেশের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি সংবাদপত্র ডেইলি স্টার লিখেছে, ‘বিএনপি কর্মীর নিচে পড়ে মৃত্যুবরণ’। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বেশিরভাগ মূলধারার গণমাধ্যম জানিয়েছে, ২৯ অক্টোবর শহরের অপর প্রান্তে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়ার পর পালানোর সময় একটি নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ থেকে পড়ে তার মৃত্যু হয়।

যুবদলের (বিএনপির যুব সংগঠন) কর্মী জিলু আহমেদ ৩১ অক্টোবর ঢাকা থেকে প্রায় ২৩৫ কিলোমিটার দূরে সিলেটের একটি মহাসড়কে বিএনপির সহিংস মিছিলে যোগ দেয়ার সময় তার দ্রুতগামী মোটরসাইকেল একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে গুরুতর আহত হন। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, বিল্লাল হোসেন ও রিফাত উল্লাহ বিএনপির প্রায় ১৫০০ জন উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মীর মধ্যে ছিলেন। তারা ভারী অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে বেআইনিভাবে একটি সহিংস সমাবেশ করে। সমাবেশ থেকে পুলিশের ওপর আক্রমণ করা হয়। কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচরে ৩১ অক্টোবর আনুমানিক সাড়ে ৮টায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের দুজনেরই মৃত্যু ঘটে।

বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের অন্যান্য বিচারপতির বাসভবনে নজিরবিহীন আক্রমণে গোটা জাতি স্তম্ভিত। প্রায় ৩৫ জন সাংবাদিককে আহত করার ঘৃণ্য ঘটনাও জাতিকে উদ্বিগ্ন করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে এরইমধ্যে এ ঘটনায় জড়িত মুখোশধারী ও অন্য আক্রমণকারীদের শনাক্ত করা হয়েছে এবং বিএনপির সঙ্গে তাদের সুস্পষ্ট যোগসূত্র পাওয়া গেছে।

পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে মারার এবং কুপিয়ে হত্যা করার ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, কিছু আক্রমণকারী মুখোশ পরে ছিল। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের অনুমান যে, মুখোশ পরা আক্রমণকারীরা ছিল ক্ষমতাসীন দলের লোক। তাদের এই অনুমান বিভ্রান্তিকর এবং বিষয়টি গভীর পর্যবেক্ষণের দাবি রাখে।

সব গণমাধ্যম ২৮ অক্টোবর ঢাকা দক্ষিণ যুবদলের (বিএনপি) সদস্যসচিব রবিউল ইসলামের ‘প্রেস’ লেখা ভেস্ট পরে গাড়ি পুড়িয়ে দেয়ার ছবি ও ভিডিও সংবাদ প্রকাশ করে। ব্রিফিং নোটে বলা হয়েছে, পুলিশ রড দিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর আক্রমণ করেছে। অথচ এর কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই। বরং দেখা গেছে, আক্রমণকারীরা অত্যন্ত সহিংস হয়ে উঠলে পুলিশ বিধি মোতাবেক শুধু লাঠি, টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

পুলিশের তল্লাশি অভিযান ও নির্বিচার গ্রেফতার নিয়ে অভিযোগ বিষয়ে আমরা মনে করি, পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ২৮ অক্টোবর সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে।

আমরা ওএইচসিএইচআরকে অনুরোধ করছি, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্টের অন্যান্য বিচারপতির বাসভবনে হামলা, সাংবাদিকদের ওপর ন্যক্কারজনক আক্রমণ, পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে মারা, সেন্ট্রাল পুলিশ হাসপাতালে ভাঙচুর চালিয়ে অগ্নিসংযোগ, কয়েক ডজন গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া, বাংলাদেশ পুলিশের সেন্ট্রাল ও বৃহত্তম পুলিশ লাইনে হামলা করা, নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মারার ঘটনার মতো তীব্রতা ও নিষ্ঠুরতা- এ বিষয়গুলো যেন গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেয়া হয়।

এ অবস্থায় উল্লিখিত বিষয় সম্পর্কে তথ্য ও পরিসংখ্যান আরও যাচাই-বাছাই করার জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়কে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন অর্থনীতিবিদ ও পরিবেশবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমদ, মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতা যুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মো. ডা. সারওয়ার আলী, মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান খান, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) সাবেক সচিব ও সাবেক সদস্য কেএইচ মাসুদ সিদ্দিকী, বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মুহাম্মদ নুরুল হুদা, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) সাবেক সচিব ও সাবেক সদস্য উজ্জ্বল বিকাশ দত্ত, অভিনেতা ও মঞ্চ পরিচালক রামেন্দু মজুমদার, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. কনক কান্তি বড়ুয়া, বাংলাদেশের সাবেক মহাপরিদর্শক পুলিশ ও রাষ্ট্রদূত ড. হাসান মাহমুদ খন্দকার, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক এবং মুক্তিযোদ্ধা, লেখক ও সাংস্কৃতিককর্মী নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুসহ ৮১ জন।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল অপরাজিতবাংলা ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন oporajitobangla24@yahoo.com ঠিকানায়।