গত পাঁচ মাসে করোনা অধ্যুষিত জেলা হিসাবে ঢাকার পরই ছিলো চট্টগ্রামের অবস্থান। সে আলোকে করোনা সংক্রমনে মৃত্যুর মিছিলেও এগিয়ে ছিলো চট্টগ্রাম। এ অবস্থায় দীর্ঘ প্রায় ৫ মাস পর আগামী ২২শে আগস্ট থেকে খুলে দেয়া হচ্ছে চট্টগ্রামের বিনোদন সব স্পট গুলো। বুধবার (১৯ আগস্ট) চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন। তিনি জানান, “১৬টি শর্তে আগামী ২২ আগস্ট থেকে বিনোদন কেন্দ্রগুলো খোলার অনুমতি দেয়া হয়েছে। করোনা সংক্রমণ ক্রমাগতভাবে কমতির দিকে থাকায় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানাসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলোর উপর থাকা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে যাচ্ছি। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দর্শনার্থীদের বিনোদন কেন্দ্রে যেতে হবে।”
এদিকে চট্টগ্রামের সচেতন মহল মনে করছেন যে, এ মুহুর্তে এ ধরনের সিদ্ধান্ত হবে অনেকটাই আত্মঘাতি। এ বিষয়ে উদহারন দিতে গিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ হোসনে আরা খানম বলেন, “নগরীর জনগনের মধ্যে হঠাৎ যেনো করোনার বিষয়ে একটি উদাসীনতা চলে এসেছে, যেখান থেকে তাদের মধ্যে আগের মতো সচেতনেতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। মাস্ক ব্যবহার আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। এমন অবস্থায় নগরবাসী কতটা স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিনোদন স্পটগুলোতে যাবেন তা নিয়ে আমি চিন্তিত।” তবে তিনি দীর্ঘ মেয়াদি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখারও পক্ষপাতী নন।
চট্টগ্রাম শিশু হাসপাতাল সংলগ্ন ব্যবসায়ী মোঃ সাবের তালুকদার বলেন, “আগ্রাবাদের এ এলাকায় দুটি বিনোদন স্পট রয়েছে, স্পটগুলো খুলে দেবার সাথে সাথে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়বে। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসা যাওয়া শুরু করলে অত্র এলাকাটি ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।” তিনি লোকজনের স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার বিষয়ে সন্দিহান প্রকাশ করেছেন।
উল্লেখ্য যে, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিন ব্যক্তির শরীরে করোনা শনাক্ত হয় এবং ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কায় সরকার ১৬ মার্চ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু ছুটি পেয়ে ১৭ মার্চ বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে জনসাধারণ। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা সমালোচনা শুরু হলে এর পরদিন ১৮ মার্চ চট্টগ্রাম নগর পুলিশ, জেলা প্রশাসন যৌথ সিদ্ধান্তে নগরীর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, সিআরবি শিরিষতলা, ডিসিহিল, চিড়িয়াখানা, ফয়’স লেক, কর্ণফুলী শিশুপার্ক, আগ্রাবাদ জাম্বুরি পার্ক, চান্দগাঁও স্বাধীনতা কমপ্লেক্সসহ সব বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া হয় যা অদ্যবধি বন্ধ আছে।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে গেলে চট্টগ্রাম কলেজের প্রাক্তন মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপিকা জনাবা তৈয়বা পারভীন দৈনিক অপরাজিত বাংলাকে বলেন, “ইউরোপের জনগন তুলনামূলক ভাবে আমাদের দেশের জনগনের চেয়ে অনেক বেশী সচেতন। সংক্রমন কাটিয়ে উঠা ইউরোপের অনেক দেশ যখন তাদের দেশের বিনোদন পার্ক, সমুদ্র সৈকত গুলো খুলে দিলো তার কিছু দিনের মধ্যেই ইউরোপ করোনার দ্বিতীয় ধাপে আক্রান্ত হয়েছে যা পুনরায় ভয়াবহ অবস্থায় রুপ নিচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের নগরীর স্পট গুলো খুলে দেওয়া হলে ঝুঁকিটা আশংকার মধ্যেই থেকে যায়।” নগরীতে করোনা সংক্রমণ ক্রমাগতভাবে কমতির দিকে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “করোনা সংক্রমন তখনই বেশী ছিলো যখন নমুনা পরীক্ষার মাত্রা বেশী ছিলো। কিন্তু বিভিন্ন কারনে সাধারন জনসাধারন এখন আর করোনা পরীক্ষায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে, তাই বুঝার উপায় নাই নগরীতে করোনার বর্তমান সঠিক সংখ্যা বা প্রতিদিনের আক্রান্তের চিত্র।” এর কারন হিসেবে তিনি আরও বলেন, “রোগীদের সাথে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সংশ্লিষ্টদের যে বিরূপ আচরন, অসহযোগীতা মানুষ দেখেছে তা থেকে করোনা পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য কেন্দ্র গুলোতে যাওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে জনসাধারনরা।”
তাই এখন দেখার বিষয় নগরীর জনগন কতটুকু স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে বিনোদনের জন্য যান। এ বিষয়ে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করবেন এমটাই প্রত্যাশা করছেন সাধারন নগরবাসী। কারন অনিরাপদ চট্টগ্রাম নগরীর জন্য এমন সিদ্ধান্তের সময় এখনই নয় বলে মনে করেন বেশিরভাগ নগরবাসী।