“ডা. ফয়সল ইকবাল চৌধুরীর” চট্টগ্রাম স্বাস্থ্যখাতকে পঙ্গু করে দেওয়ার এক মূর্তিমান আতংকের নাম। করোনা কালীন সময়ে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য খাতের গডফাদার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন সর্বমহলে। যার দূর্ণীতি, রাজনৈতিক পেশী শক্তি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি প্রভুত অনৈতিক কর্মকান্ড করোনা কালীন সময়ে চট্টগ্রামের পুরো স্বাস্থ্য সেবা খাতকে পর্যদুস্থ করেছে। তার এ ধরনের কর্মকান্ডের পিছনে সবচেয়ে বড় অবদান ছিলো তার রাজনৈতিক প্রভাব। নগরীর প্রাক্তন মেয়র নাছিরের আস্থাভাজন অনুসারী বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রামের দীর্ঘ দিন ধরে থাকা সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক বহুল বিতর্কিত ডা. ফয়সল ইকবাল চৌধুরীর বাড়ি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার লালানগর ইউনিয়নের ধামইরহাট। তার পিতা মৃত নূরুল আবছার চৌধুরী।
এবার, চট্টগ্রামের ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীর দুর্নীতি খুঁজতে গিয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের কার্যালয় ছাড়াও দুই হাসপাতালকে তথ্য চেয়ে নোটিশ দিয়েছে চট্টগ্রামে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা। দুদকের পক্ষে চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন অনুসন্ধানের দায়িত্বে রয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, “সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকসহ চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যখাতে যত অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে, প্রধান কার্যালয়ের সিদ্ধান্ত ও নির্দেশে আমরা সেগুলোর অনুসন্ধান শুরু করেছি। আমাদের কাছে টেন্ডারবাজির কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জমা আছে। সেগুলো অনুসন্ধানের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট সব নথি তলব করে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য হাসপাতালের বিষয়েও একই প্রক্রিয়ায় অনুসন্ধান শুরু হবে।”
প্রথম দফায় দুই সরকারি হাসপাতালে ২০০৮ সাল থেকে টেন্ডারের ভিত্তিতে যত প্রকল্প বাস্তবায়ন ও সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হয়েছে, সবগুলোর নথি তলব করেছে দুদক। প্রতিষ্ঠান দুটি হচ্ছে- চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম সরকারি জেনারেল হাসপাতাল।
জানা যায়, গত আগস্ট থেকে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যখাতে ‘চাঁদাবাজি, সরকারি-বেসরকারি ঠিকাদারি, বদলি ও নিয়োগ বাণিজ্য, কমিশন-ক্লিনিক বাণিজ্য’ নিয়ে অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। এর কেন্দ্রে রয়েছেন বিতর্কিত চিকিৎসক নেতা ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী। দুদক ডা. ফয়সাল ইকবালের জ্ঞাতবহির্ভূত সম্পদের খোঁজও নেওয়া শুরু করেছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (৪ অক্টোবর) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এবং চট্টগ্রাম সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কাছে নথি তলব করে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এতে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান ২০০৮ সাল থেকে যত টেন্ডার পেয়েছে এবং তাদের মাধ্যমে যত সরবরাহ ও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে, তার নথি চাওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- জমজম এন্টারপ্রাইজ যার মালিক ডাঃ ফয়সালের মামা দিদারুল আলম ও এ সিন্ডিকেটের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো সাদমান এন্টারপ্রাইজ, আলী অ্যাসোসিয়েট, এম রহমান এন্টারপ্রাইজ এবং শাপলা এন্টারপ্রাইজ। চমেক হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মো. শাহজাহান এবং মঈন উদ্দিন কীভাবে, কোন যোগ্যতায় টেন্ডারের সঙ্গে সম্পর্কিত- সে বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। মঈন উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিনা অনুমতিতে বিদেশ ভ্রমণের অভিযোগের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম সরকারি জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মোঃফোরকানের বিষয়েও একইভাবে তথ্য চাওয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাসে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামজুড়ে চিকিৎসাক্ষেত্রে নৈরাজ্য তৈরির জন্য বরাবরই দায়ী করা হচ্ছিল বিতর্কিত চিকিৎসক নেতা ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীকে। সাধারণ মানুষকে চিকিৎসাবঞ্চিত করা চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর বিরুদ্ধে তুমুল আলোচনা-সমালোচনায় বারেবারেই বিএমএ চট্টগ্রামের এই সাধারণ সম্পাদককে অভিযোগের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছিলো বিভিন্ন মহল থেকে। গণমাধ্যম থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, এমনকি চট্টগ্রামের রাজপথে করোনাকালেই তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাতে বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। সেখান থেকে উঠেছে তাকে গ্রেপ্তারের ডাকও।
দুদক সূত্রে আরও জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুতে বিএমএ নেতা ফয়সল ইকবালের অনিয়ম-দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট ১২ দফা অভিযোগ দুদকে জমা পড়ে। এতে বলা হয়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক নিয়োগ ও বদলি অবৈধভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ফয়সল ইকবাল বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন। শুধু ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে চমেক হাসপাতালে প্রায় ৪২ কোটি টাকার টেন্ডার তিনি একাই নিয়ন্ত্রণ করেছেন। নামে বেনামে তার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলো দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ডাঃ ফয়সাল। বিএমএ’র চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক হওয়ায় ফয়সল ইকবাল কাউকে পরোয়া করেন না। তিনি চমেক হাসপাতালের নিয়োগ-বদলি, ঠিকাদারি থেকে সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, চমেক হাসপাতালের কোটি কোটি টাকার খাবার সরবরাহ, আউটসোর্সিং ব্যবসাসহ বিভিন্ন সরবরাহ কাজেরও নিয়ন্ত্রণ করেন ফয়সল ইকবাল। নামে-বেনামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্যাডে তিনি প্রভাব খাটিয়ে টেন্ডার বাগিয়ে নেন। জটিল ও কঠিন শর্ত সংযোজন করে আর কোনো ঠিকাদারকে তিনি টেন্ডারে অংশ নিতেও দেনন না। গত ২২ বছর ধরে চমেক হাসপাতালে দৃশ্য-অদৃশ্য নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি। ফয়সলের নেতৃত্বাধীন সিন্ডিকেট বাজার দরের চেয়ে অনেক বেশি দামে খাবার ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করে। আউটসোর্সিংয়ের এক-তৃতীয়াংশ জনবল সরবরাহ করে ওই সিন্ডিকেট।
চট্টগ্রাম ইপিজেডে ফয়সালের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান গ্রিন লাইফ ল্যাব এবং ইপিকে তিনি রোগী পাঠাতে ডাক্তারদের বাধ্য করেন। তিনি নগরীর বিভিন্ন চেম্বারে অনেক চিকৎসক বিশেষজ্ঞকে দিয়ে বিভিন্ন রোগীকে তার মালিকানাধীন ক্লিনিকে ভর্তি করিয়ে রোগীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করার ঘটনা অহরহ।
ডা. মো. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী নগরীর বেসরকারী ক্লিনিক ও হাসপাতাল গুলোর কর্মকান্ড পরিচালনার অঘোষিত নির্দেশদাতা হিসেবে পরিচিত। সকল বেসরকারী ক্লিনিক ও হাসপাতাল গুলোকে নিয়ে শক্ত সিন্ডিকেট।
তার এ সিন্ডিকেটে করোনা কালীন সময়ে স্বাস্থ্য সেবায় নেমে আসে চরম অরাজকতা। এ সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মহানগরীর একমাত্র ডেডিকেটেড সরকারি হাসপাতাল ‘চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল’। প্রথমদিকে এই হাসপাতালে আইসিইউ ছিল না। সে সময়ে করোনা আক্রান্ত রোগীদের আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন হলে ১২টি বেসরকারি হাসপাতালকে তিনটি করে চার ধাপে বলা হয় আইসিইউ সাপোর্ট দেওয়ার জন্য। চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগের এই সিদ্ধান্তকে বেসরকারি হাসপাতালগুলো অগ্রাহ্য করে। ফলে করোনাভাইরাসের চিকিৎসা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালগুলো অনীহা প্রকাশ করেছে। এই অনীহার পেছনে ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীর দায়দায়িত্ব আছে বলে সাধারণ মানুষ মনে করেন।
এদিকে গত ১ জুলাই তৈরি করা পুলিশের গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীর সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ড উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক। দীর্ঘদিন তিনি বিএমএর চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক থাকার কারণে চিকিৎসক ও চিকিৎসা সংক্রান্ত সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর তার একটি কর্তৃত্ব তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন ইস্যুতে ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের পক্ষাবলম্বন করেন। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর মালিকানার ওপর তার যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরী এলাকায় বিশেষায়িত বেসরকারি হাসপাতালগুলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নন— এমন চিকিৎসক দ্বারা পরিচালিত। করোনা সংকটে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর প্রশ্নবিদ্ধ কার্যক্রম ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী প্রশ্রয়ে হয়েছে এমন অভিযোগ আছে।’
চিকিৎসা নৈরাজ্যে ফয়সাল ইকবালের দায়
চট্টগ্রামে চিকিৎসা নৈরাজ্যের চিত্র তুলে ধরে গোপন ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘করোনাভাইরাস সংকটের শুরু থেকে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালসমূহ সিদ্ধান্ত নেয় তাদের হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ভর্তি করবে না এবং অনেকদিন ধরে পরিত্যক্ত চট্টগ্রামের খুলশী থানাধীন হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালকে তাদের নিজেদের অর্থায়নে সংস্কার করে সম্পূর্ণ কোভিড-১৯ হাসপাতাল হিসেবে কাজ করার উপযুক্ত করে দেবে। এই হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালের দোহাই দিয়ে প্রাইভেট হাসপাতালগুলো স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা অমান্য করে মে মাসের শেষ সপ্তাহের পূর্ব পর্যন্ত তাদের হাসপাতালে কোনো করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি করেনি। গত ১ জুন থেকে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম শুরু হয়।’
এতে আরও বলা হয়, ‘হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসার পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই এবং রোগীদের খাবারের ব্যবস্থা, বাথরুম, টয়লেট ইত্যাদির ভাল ব্যবস্থা নেই। আইসিইউগুলোতে শুধুমাত্র হাইফ্লো অক্সিজেন দেওয়া যায়, কিন্তু ভেন্টিলিটর নেই। হাসপাতালের পরিবেশ ভালো নয়। হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল চালু করার জন্য প্রত্যেক প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে তিন লাখ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া অনেক শিল্পপতির কাছ থেকে চাঁদা নেওয়া হয়েছে। এ সকল অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় হলে হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক ভালো হতে পারতো। এই বিষয়ে ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরীর দায়দায়িত্ব আছে বলে মনে করা হয়।’
রোগী ভর্তি নিয়ে প্রাইভেট হাসপাতালের অরাজকতা বিশদ বিবরণ দিয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিক রয়েছে মোট ৬১টি। এসব হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সাধারণ বেডের সংখ্যা ২ হাজার ২৪১টি, কেবিন ১ হাজার ১৪৭টি, সিসিইউ ৮২টি, এইচডিইউ ৬৭টি এবং আইসিইউ ৮৩টি। সর্বমোট বেডের সংখ্যা ৩ হাজার ৬৪৭টি। কর্মরত ডাক্তার রয়েছেন ১ হাজার ১৩৯ জন। নার্স-ব্রাদার-মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ২ হাজার ৫১৭ জন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা ৫ হাজার ৩১৩ জন। চট্টগ্রামের সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো সরকারি নির্দেশনা মেনে কোভিড ও নন-কোভিড রোগীদের ভর্তি করানোর যথেষ্ট আন্তরিক হলে চিকিৎসাক্ষেত্রে অরাজকতা সৃষ্টি হতো না।
করোনা কালীন সময়ে সরকারের বিভিন্ন প্রজ্ঞাপনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে সরকারকে বিভিন্নভাবে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছেন।
করোনাযোদ্ধা চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরুৎসাহিত করে দায়িত্বে থেকে সরকারের অপপ্রচার করার অভিযোগ উঠেছিল ডা. ফয়সলের বিরুদ্ধে। যা শেখ হাসিনা সরকারকে বিব্রত পরিস্থিতি ও প্রশ্নবিদ্ধ করছে। বিএমএ নেতার চিকিৎসা রাজনীতি, নিরুৎসাহিত হচ্ছে স্বাস্থ্যকর্মী ও দায়িত্বে থেকে সরকারের অপপ্রচারে ব্যস্ত ডা. ফয়সল শিরোনামে সংবাদও প্রকাশিত হয় গণমাধ্যমে।
চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরুৎসাহিত ও উস্কানি দিয়ে ডা. ফয়সল ফেসবুকে লিখেন, “দেশ তো দেখি পিপিপিতে সয়লাব, ভিক্ষুকও পিপিপি পড়ে ভিক্ষা করছে। সন্মানিত চিকিৎসক ও চিকিৎসাসেবাকর্মী ভাইয়েরা, লাইভ-এ দেখলাম ১০ লাখের অধিক বিতরণ। আপনারটা পেয়েছেন তো? পিপিপি নয় PPE”
বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার এই নেতা অন্য স্টট্যাসে লিখেছেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গলা ফাটাইয়া বলতে চাই চট্টগ্রামে কোথাও ১টা N95 মাস্ক সরবরাহ করা হয় নাই। গ্লাভস ও সংকট। পিপিই মান সম্মত নয়।”
ডাঃ ফয়সালের এধরনের রাজনৈতিক শিষ্ঠাচার বহির্ভূত ও সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলানোর জন্য নগরীর প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদেরও প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ আশ্রয় প্রশ্রয় আছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।
অবশ্য আগেই থেকেই ডা: ফয়সাল সাংবাদিক কন্যা রাইফার মৃত্যু, বেসরকারি ক্লিনিক সিন্ডিকেটের সম্পৃক্ততা, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে( চমেক) হাসপাতালে টেন্ডারবাজি, দুর্নীতি ও উপমন্ত্রী নওফেলকে ক্যাম্পাসে প্রবেশে হুমকি এবং জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাকে ব্যঙ্গ করে সামাজিক মাধ্যমে স্ট্যাটাস প্রদান সহ নানা ইস্যুতে নিন্দিত।
সর্বশেষ গত জাতীয় নির্বাচনে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সংসদীয় এলাকা রাঙ্গুনিয়ায় দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে মহড়া দেওয়াই তথ্যমন্ত্রী সমর্থক ও এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীরা তাঁর উপর চরম অসন্তুষ্ট।
পুলিশের গোপন প্রতিবেদনটিতে যা আছে ।
একজন চিকিৎসক হয়েও অপরাধীদের সাথে সখ্যতা এবং অপরাধ জগতের সাথে তার বিচরন হরহামেশা। নগরীরর শীর্ষ কিছু রাজনৈতিক কর্তাদের প্রশ্রয়ে ডাঃ ফয়সালের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ সারাদেশে আলোচিত। তার উল্লেখযোগ্য অপরাধী কার্যকলাপগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য~
ফয়সল ইকবাল ৫০ লাখ টাকার বিনিময়ে চট্টগ্রামের আলোচিত কোকেন মামলার আসামি নুর মোহাম্মদকে চমেক হাসপাতালে একটি ভিআইপি কেবিনে মাসের পর মাস থাকার ব্যবস্থা করে দেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনি চমেকর সামনে ইপিক হেলথ কেয়ারের জমি দখল ও ভবন নির্মাণে সহায়তা করে নগদ এক কোটি টাকা ও শেয়ার নেন। তার শ্বশুর প্রতিমাসে তার পক্ষে সেখান থেকে দুই লাখ টাকা করে নেন।
বেসরকারি উদ্যোগে করোনা আইসোলেশন সেন্টার উদ্বোধন এবং সরকারি সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভিন্নভাবে তা প্রভাবিত করিয়ে চট্টগ্রামে চিকিৎসা পরিস্থিতে অস্থির করে চিকিৎসাহীন রোগী মেরে ফেলাসহ ডা. ফয়সলের অন্যান্য অপকর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনিকে এ হত্যার হুমকি দেয়ার মতো লোমহর্ষক অডিও রেকর্ড ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
গত ১ ফেব্রুয়ারি (২০২০) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক নারী চিকিৎসককে ডেকে নিয়ে হুমকি দিয়েছিলেন ডাঃ ফয়সল ইকবাল চৌধুরী। এ ঘটনায় ওই নারী চিকিৎসক নিজের নিরাপত্তা চেয়ে চমেক হাসপাতালের পরিচালক বরাবর আবেদন জানিয়েও বিচার পাননি।
এরও আগে নগরীর ইউএসটিসি’র প্রতিষ্ঠাতা ও জাতীয় অধ্যাপক নূরুল ইসলামের মেয়ে ডা. নীনা ইসলামকে অবরুদ্ধ করার অভিযোগ উঠে ডা. ফয়সাল ইকবালের বিরুদ্ধে। ডা. নীনাকে গালাগাল অপমান-অপদস্ত করে তিন কোটি টাকার কাজ হাতিয়ে নেওয়ার খবর গণমাধ্যমে উঠে আসে।
২০১৮ সালে শিশু রাইফা হত্যার ঘটনায় বেসরকারি হাসপাতালে কথায় কথায় মানুষ জিম্মিকারী উল্লেখ করে ডা. ফয়সল ইকবালের চিকিৎসা সনদ বাতিল করারও কথা উঠেছিল নগরবাসীর এক মানববন্ধন থেকে।
এছাড়াও ফয়সাল ইকবালের বিরুদ্ধে এক গৃহবধু হুমকি ধামকি দেওয়ার অভিযোগ নগরীতে আলোচনা জন্ম দিয়েছিল। দেলোয়ারা বেগম নামের ঐ গৃহবধূ অভিযোগ করে করেছিল- ডা. ফয়সাল ইকবাল বিএমএ ভবনে ডেকে নিয়ে গেয়ে দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য তাকে চাপ দেন এবং ঐ নারীকে বলেছিল, “চমেক হাসপাতালের ত্রিপল মার্ডার মামলার আসামী আমি। মামলা না তুললে পরিণতি খারাপ হবে বলেও হুমকি দেন বলেও ডা. ফয়সল ইকবালের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেন।”
অবৈধভাবে গড়ে তোলা তার কোটি কোটি টাকার সম্পদ দুদকের সামনে এসেছে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয় যে, চট্টগ্রাম নগরীর মেহেদীবাগে তিনি যে ফ্ল্যাটে বসবাস করেন, সেটি দুই কোটি টাকায় কেনা। নগরীর সৈয়দ শাহ রোডে ছয়তলা ভবন নির্মাণ করছেন তিনি। রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় নিজ গ্রামে ১০৬ একর পাহাড়ি ভূমিতে গড়ে তুলেছেন আমবাগান ও মাছচাষ প্রকল্প। নগরীর দক্ষিণ খুলশী সিটি করপোরেশন আবাসিক এলাকায় ফয়সলকে সাবেক মেয়র বিনা টেন্ডারে নামমাত্র মূল্যে একটি প্লট বরাদ্দ দেন। এর সঙ্গে লাগোয়া আরেকটি প্লট তিনি বিএনপির তোতনের কাছ থেকে কিনে নেন। এর বাজারমূল্য বর্তমানে চার কোটি টাকা। এসব আয় বহির্ভূত সম্পদের মালিক তিনি কিভাবে হলেন তার খোঁজেও নেমেছেন দুদক।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে সাধারণ ডাক্তার ও চিকিৎসা নিতে আসা রোগী এবং তাদের স্বজনদের কাছে আতংকের নাম ডা. ফয়সল ইকবাল চৌধুরী। তিনি চমেক হাসপাতালের ডাক্তার না হয়েও সেখানে সদর্পে ছড়ি ঘোরান। চমেক হাসপাতালের নিয়োগ-বদলি, ঠিকাদারি থেকে শুরু করে সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন ডা. ফয়সল। তার সবুজ সংকেত না মিললে যেমন কেউ এখানে যোগদান করতে পারেন না, তেমনি চমেক হাসপাতালে কোনো ডাক্তার তার বিরাগভাজন হলে তাকে দ্রুত বদলির শিকার হতে হয়।’- এমনই অভিযোগ উঠেছে চমেক হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে।