সিরু বাঙালি -যুদ্ধকালীন গেরিলা কমান্ডার । মুক্তিযুদ্ধবিষয়ে গবেষক, লেখক ও গ্রন্থকার । একটাই সাফল্য, যুদ্ধ জয় ।
ছবির এই মানুষটিকে বাংলাদেশের তাবৎ মানুষ চেনেন নিজাম হাজারী হিসেবে। আমিও চিনি সে সেভাবে।
** আজ থেকে ঠিক ৩৫ বছর আগে “মুজিব রাণাঙ্গন”এর এই সাহসী যোদ্ধার সাথে আমার একটি ঐতিহাসিক সাক্ষাৎ ঘটেছিল চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় কারাগারে। ৩৫ বছর ধরে “অবিস্মরণীয়” সেই ঘটনাটি নিজের কাছে গোপন রেখেছিলাম আমি। এমন কী এই ঘটনার নেপৈথ্য চরিত্র, সদ্য বিদায়ী চসিক মেয়র আ.জ.ম. নাছির উদ্দিনকেও এই ঘটনা জানাইনি আমি। আজ মনে হলো, আর দেরি করা উচিৎ নয়।
** ১৯৮৫ সালে একটি অনাঙ্ক্ষিত ঘটনার জের ধরে চট্টগ্রাম কারাগারে ৩ দিনের জন্য হাজৎ খাটতে হয় আমাকে। কারাগারে নতুন আমদানি হাজতিদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আমিও দুর্ভাগে পড়লাম।
** বগলের তলায় একটি খাতা নিয়ে গেঞ্জি পড়া একলোক এসে আমাকে বলল, হাজতে আরাম-আয়েশে থাকতে হলে আমাকে টাকা দিতে হবে। নইলে কষ্ট পাবেন। লোকটি আমার পাশে বসে আমার বাড়ির নাম ঠিকানা জানতে চাইল। যাদের কাছে গিয়ে তার লোক টাকা নিয়ে আসবে। আমি লোকটার দিকে হতবাক হয়ে চেয়ে রইলাম। জবাবে কিছু বলব, এমন সময় ১৯/২০ বছর বয়সের শ্যামলা বরণ এক যুবক এগিয়ে এসে লোকটিকে সরিয়ে আমার সামনে বসল।
** আমি ভয় পেয়ে গেলাম। জেলখানায় চোর-ডাকাত, গুণ্ডা-পাণ্ডাদের উৎপাতের খবর আগে থেকেই জানা। যুবকটি আমার সামনে বসার পর খাতাঅলা লোকটা দাঁড়িয়ে গেল। বুঝলাম, কপালে আজ খারাবি আছে।
** যুবকটি খুব আদবের সাথে আমাকে সালাম দিল। বলল, বদ্দা আসসলামুআলাইকুম। আপনি এখানে কেন ?
** আমি ভয়েভয়ে বললাম, ভুল বোঝাবুঝির ফাঁদে পড়েছি। সামনের রবিবারে জামিন হবে বলেছে উকিল।
** এবার একটু সাহস করে তাকে বললাম, আপনাকে আমি চিনলাম না, ভাই। আপনি কে ?
** বদ্দা, আপনি আমাকে আপনি সম্বোধন করবেন না। আমি আপনার ছোটোভাই নিজাম হাজারী ? আমাকে তুমি বলবেন।
** কিন্তু আমি যে তোমাকে এখনো চিনতে পারলাম না, ভাই।
** বদ্দা, আমি আ.জ.ম নাছির ভাইয়ের কর্মী। কমার্স কলেজে পড়ি। নাছির ভাইয়ের বাসায় আপনাকে সবসময় দেখি। নাছির ভাইই বলেছেন, আপনি তাঁর ফুফাতো ভাই। ওই বাড়ির সবাই আপনাকে সিরু বদ্দা বলে। সে হিসেবে আমাদেরও বদ্দা।
** সমস্ত ভয় আমার দূর হয়ে গেল। বুকভরে নিশ্বাস ফেলে বললাম, তুমি জেলে কেন ? ** কদমতলী বি.আর.টি.সি মার্কেটে একটি মারামারির মামলায় গতকাল এসেছি। রবি-সোমবার জামিন হয়ে যাবে আশাকরি, বলল নিজাম।
** এর পরের ইতিহাস খুব সংক্ষিপ্ত। নিজাম হাজারীর বদৌলতে জেলখানার সবাই জেনে গিয়েছিল, আমি আ.জ.ম. নাছির উদ্দিনের বদ্দা। ব্যস, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে রবিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত হাজত খানায় আমি ছিলাম শাহেন শাহ্।
** নিজাম হাজারী ও আ.জ.ম. নাছির উদ্দিন। তোমরা দু’জনের জন্য ৩৫ বছর ধরে আমার জমানো অভিনন্দন ও স্যলুট গ্রহণ কর। দীর্ঘজীবী হও।