মহানবী (সাঃ) কে নিয়ে ফ্রান্সের ইতিহাস বিষয়ের এক শিক্ষকের “মত প্রকাশের স্বাধীনতা” ক্লাশে শিক্ষার্থীর সামনে ব্যাঙ্গ চিত্র প্রদর্শন এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে এক ১৮ বছরের চেনেন মুসলিম যুবক কর্তৃক শিরচ্ছেদে স্যামুয়েট প্যাট নামে ঐ ইতিহাস শিক্ষকে হত্যা পরবর্তি সময়ে ফ্রান্স সরকার ক্রমেই মুসলমানদের উপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছেন।
ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি এমানুয়েল মাক্রোঁ ২রা অক্টোবর দেওয়া ভাষণে ইসলামিক সন্ত্রাসবাদের উপর লাগাম লাগানোর ঘোষণা করেছিলেন। এমানুয়েল মাক্রোঁ নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী মসজিদের ফান্ডিং আর অন্যান্য ধার্মিক সংগঠন গুলোর উপর কড়া নজর রাখার কথা বলেছিলেন। এমানুয়েল মাক্রোঁর এই পরিকল্পনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী গেরাল্ড ডারমেনিন রবিবার একটি নয়া বিলের তথ্য দিয়েছেন। এর সাথে সাথে উনি বলেছেন যে, ফ্রান্স কট্টর ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াই করা শুরু করে দিয়েছে।
ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রোখার জন্য একটি নতুন বিলের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, যদি কেউ বিপরীত লিঙ্গের ডাক্তারের থেকে চিকিৎসা করার জন্য অস্বীকার করে, তাহলে তাঁর পাঁচ বছরের জেল হবে অথবা ৭৫ হাজার ইউরোর জরিমানা হবে। তিনি বলেন, এই নিয়ম সরকারি কর্মকর্তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করা ব্যক্তিদের উপরেও প্রযোজ্য হবে। এভাবেই, যদি কেউ মহিলা টিচারের কাছে পড়তে অস্বীকার করে তাহলে তাঁর বিরুদ্ধেও অ্যাকশন নেওয়া হবে।
যদিও, এখনও পর্যন্ত এই বিল নিয়ে সঠিক তথ্য সামনে আসেনি। কিন্তু এখন থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এই নিয়ে বিরোধিতা শুরু হয়ে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ লন্ডনের ফরাসি ও ইউরোপীয় রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফিলিপ মার্লেয়ার বলেন, মাক্রোঁর ফ্রান্স ধীরে ধীরে স্বৈরাচারী শাসনের দিকে এগোচ্ছে। এক প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিকও বিপরীত লিঙ্গের ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা না করলে জরিমানা এবং সাজার নিয়ম নিয়ে কটাক্ষ করেছেন।
ফরাসী সরকার ডিসেম্বরে বিচ্ছিন্নতাবাদ প্রতিরোধের জন্য একটি বিল আনবে। মাক্রোঁ নিজের ভাষণে বলেছিলেন যে, ইসলাম ধর্মের কারণে গোটা বিশ্ব সঙ্কটে আছে। মাক্রোঁর এই কথায় পর গোটা মুসলিম বিশ্ব ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের উপর ক্ষেপে উঠে।
এর আগে ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার নিজের একটি ভাষনে মুসলমানদের হালাল মাংস বিক্রয়ের বিষয়ে বিতর্কিত কথা বলেন। উনি মঙ্গলবার একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, “বাজারে একটি সম্প্রদায়ের জন্য হালাল মাংসের আলাদা দোকান দেখে আমি আশ্চর্য হই। উনি বলেন, এরকম কাজ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাহস আরও বাড়িয়ে তোলে আর তাঁদের কট্টরতার দিকে ঠেলে দেয়।”
মন্ত্রী বলেছিলেন, “আমি হালাল মাংসের দোকান গুলোকে প্রয়োজনের থেকে বেশি বুঝি। আমি গ্রাহকদের সমালোচনা করছি না, এটা বিক্রেতার ভুল। আমি জানি হালাল মাংস সুপারমার্কেটে বিক্রি হয়, কিন্তু এর জন্য আলাদা করে দোকান কেনও? মুসলিমদের জন্য আলাদা দোকান, বাকিদের জন্য আলাদা দোকান … এরকম সব আলাদা আলাদা কেনও?”
শুধু তাই নয়, তিনি সংখ্যালঘুদের জন্য বানানো পোশাক নিয়েও আপত্তি জাহির করেন। তিনি বলেন, “এরকম পোশাক কোম্পানি গুলোই দেশে সংখ্যালঘুদের আলাদা পরিচয় বানানোর কাজ করে চলেছে।”