ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল বিভাগের (সিটিটিসি) একটি টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে সিলেটে নব্য (জে,এম,বি,)র পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর বুধবার (১২ আগস্ট) বেলা ১২টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশের বিশেষ এই ইউনিটের প্রধান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার, মো. মনিরুল ইসলাম বলেন “নব্য জেএমবির এসব সদস্যরা কম্পিউটার শেখার আড়ালে সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল।”
সিলেট থেকে গ্রেপ্তার কৃতরা হলেন – শেখ সুলতান মোহাম্মদ নাইমুজ্জামান (২৬), সায়েম মির্জা (২৪), রুবেল আহমেদ (২৮), সানাউল ইসলাম সাদিক (২৮)ও আব্দুর রহিম জুয়েল (৩০)।
সিটিটিসি সূত্র জানায়, গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদে সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানতে পেরেছেন যে, তারা (জেএমবি) এখন একজন ব্যক্তিকে দিয়ে একটি হামলার পরিকল্পনা করছে। আগে যেকোনও হামলায় একাধিক জঙ্গি সদস্য অংশ নিতো। গ্রেফতার হওয়া নাইমুজ্জামান অনলাইনে রিক্রুট করা সদস্যদের মধ্যে যারা সামরিক শাখায় কাজ করতে ও সরাসরি হামলা করতে আগ্রহী, তাদেরকে আলাদা করতো। এরপর অনলাইনে প্রত্যেকের কাছে বোমা তৈরির একটি ম্যানুয়াল পাঠানো হয়। সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে নারায়ণগঞ্জের একটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে কয়েকজন জঙ্গিকে গ্রেফতার ও বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক এবং বোমা তৈরির ম্যানুয়ালসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে ওই আস্তানার মাস্টারমাইন্ড জামাল উদ্দিন নামে আরেক জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র জামালই বোমা তৈরির ওই ম্যানুয়াল তৈরি করেছিলেন।
ওই ম্যানুয়ালটি নাইমুজ্জামান সংগঠনের সামরিক শাখার সদস্যদের কাছে পাঠাতো। যারা যারা ম্যানুয়াল দেখে বোমা তৈরি করতে পারতো, তাদেরকে হামলা চালানোর জন্য নির্দেশ দিতো। কিন্তু ম্যানুয়াল দেখে শক্তিশালী বোমা তৈরি করতে না পারায়, সে সামরিক শাখার সদস্যদের তিন মাসের একটি প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য সিলেটে একটি বাসা ভাড়া নিয়েছিল।’
সিটিটিসি সূত্র বলছে, নাইমুজ্জামানের নির্দেশে ঢাকার পল্টনে যে জঙ্গি সদস্য হামলা করেছিল, তাকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে নাইমুজ্জামান জানিয়েছে— সেই ঢাকার ওই তরুণকে অনলাইনে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। এছাড়া নাইমুজ্জামানের সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া সানাউল ইসলাম সাদিককেও সে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দেয়। শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিক নিজেই একটি বোমা তৈরি করে গত ২৩ জুলাই শাহজালালের মাজারে তা বিস্ফোরণ ঘটাতে যায়। কিন্তু সেখানে পুলিশ দেখে সে ভেতরে প্রবেশ না করে বাইরে থেকেই বোমাটি নিক্ষেপ করে। কিন্তু ‘কাঁচা হাতে’ তৈরি বোমাটি সেখানে বিস্ফোরিত হয়নি। এছাড়া গত ৩১ জুলাই নওগাঁর সাপাহার এলাকার একটি হিন্দু মন্দিরে জঙ্গিরা বোমা হামলা করে। আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস ওই হামলার দায়ও স্বীকার করেছিল। জিজ্ঞাসাবাদে নাইমুজ্জামান জানিয়েছে, নওগাঁয় হামলার পরিকল্পনাও তার ছিল। সে নওগাঁয় অবস্থানকারী তাদের সামরিক শাখার এক সদস্যের কাছে বোমা তৈরির ম্যানুয়াল পাঠিয়ে অনলাইনে নির্দেশনা দিয়ে বোমাটি তৈরি করায়।
সিটিটিসির সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার অহিদুজ্জামান নূর বলেন, ‘গ্রেফতার হওয়া পাঁচ জঙ্গিকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে তাদের সহযোগীদের ধরতে গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে।’