সুজন মোল্লা, বানারীপাড়া থেকে
বরিশালের বানারীাড়া উপজেলার ৫নং সলিয়াবাকপুর ইউনিয়ন পরিয়দ থেকে সরকারে থাকা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার জন্য নিজেকে আগাম প্রার্থী ঘোষনা করেছেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. আনিচুর রহমান মিলন।
২০২১’র মার্চে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের গুঞ্জনে ইতোমধ্যে বানারীপাড়া উপজেলার ৮ ইউনিয়নে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান-মেম্বর প্রার্থীদের আগাম তৎপরতও শুরু হয়ে গেছে। চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নৌকা প্রতিক পেতে আগেভাগেই লবিং-তদবির ও দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।
প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে অন্তত ৮/১০ জন করে প্রার্থীর তৎপরতা রয়েছে। তবে এদের মধ্যে সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী মো. আনিছুর রহমান মিলন নিজেকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে ঘোষনা দিয়ে নেমে পড়েছেন নির্বাচনী মাঠে। তিনি ৫নং সলিয়াবাকপুর ইউনিয়ন থেকে সরকারি দল আওয়ামী লীগের নৌকার টিকিট নিয়ে নির্বাচন করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে ঘুরছেন মানুষের দুয়ারে দুয়ারে।
বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও তিনি ওই ইউনিয়নে নৌকার মনোয়ন চেয়ে না পেলেও দলীয় প্রার্থীর প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে তার পক্ষে নিরলসভাবে কাজ করে বিজয়ী করতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন । তিনি জনপ্রতিনিধি না হলেও জনগনের দুঃখ-দূর্দশায় সব সময় পাশে থেকে তাদের জন্য অকৃপনভাবে কাজ করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় দেশে কোভিড-১৯ প্রাণঘাতি নভেল করোনাকাল শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি এলাকার সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন।
করোনার সময় ইউনিয়নের ৫৬৫ পরিবারের মাঝে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য উপহার দেয়া ছাড়াও ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আযহায় ঈদ সামগ্রী উপহার এবং রমজান মাসে তাদের মাঝে ইফতার সামগ্রী উপহার দিয়েছেন ।
আনিছুর রহমান মিলনের সম্পর্কে জানতে কথা হয় তার ইউনিয়নের নানা বয়সের শ্রেণী পেশার মানুষের সঙ্গে । তারা জানান, মিলন ত্যাগী, পরীক্ষিত ও নির্যাতীত আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। তিনি ১৯৭৯ সালে ৬ষ্ট শ্রেণীতে অধ্যয়নরত অবস্থায় তার পরিবারের সকল সদস্যদের স্বাধীনতার স্ব-পক্ষের শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতি অবস্থান দেখে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি মাথায় উঁচিয়ে জয়বাংলা শ্লোগানে গ্রামের মেঠোপথে ঘুরে ওই সময়ে সবার নজর কাড়েন। ছোট বেলা থেকেই তিনি আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে ফেলায় তার পরিবার থেকে উৎসাহ যোগানো হতো। এরই ফলশ্রতিতে ১৯৮২ সালে সলিয়াবাকপুর ফজলুল হক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৮৪ সালে চাখার সরকারি ফজলুল হক ডিগ্রী কলেজ শাখার ছাত্রলীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও ১৯৮৫ সালে যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন। সংগঠনের প্রতি তার আনুগত্য,সাংগঠনিক দূরদর্শিতা ও দক্ষতা দেখে ওই বছরই বানারীপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে তাকে যুগ্ম-সম্পাদক মনোনীত করা হয়। ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী মো. শহিদুল্লাহর নির্বাচন করতে গিয়ে তৎকালীন জাতীয় পার্টির ক্যাডারদের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন তিনি। তারপরেও মাঠে থেকে নির্বাচন করেছেন তিনি। ১৯৮৮ সালে এরশাদ সরকারের এক পক্ষীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিহত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে গিয়ে হামলা-মামলার শিকার হন । ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানে ঢাকার রাজপথে থেকে এরশাদ সরকার বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে জিরো পয়েন্টে (বর্তমান শহীদ নূর হোসেন চত্ত্বর) পুলিশের রাবার বুলেটের আঘাতে আহত হন। পরে পথচারীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে তাকে ভর্তি করান। কিছুদিন পরে কিছুটা সুস্থ্য হবার পরে পুনরায় আন্দোলন সংগ্রামে সামিল হন তিনি। ১৯৯১ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার গঠন করার পরে তিনি আর নিজ গ্রাম সলিয়াবাকপুরে আসতে পারেননি। ওই সময়ে অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে ঢাকায় থেকে যান মুজিব অন্তঃপ্রাণ এই নেতা। এর মধ্যেই ১৯৯৩ সালে বরিশাল-ল-কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহবায়কের পদে মনোনীত হন। ওই সময়েই তিনি বরিশাল বিএম কলেজের ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে সরকার বিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যান। ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতার স্ব-পক্ষের শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে এলাকায় ফেরেন তিনি। ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ পরিবারের ১১জন পরীক্ষিত সন্তানদের নিয়ে বানারীপাড়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। পরে সর্বসম্মতিক্রমে আনিচুর রহমানকে আহবায়ক করে জেলায় কমিটি জমা দিলে সেই কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়। আহবায়ক কমিটির মেয়াদ শেষেই আনিছুর রহমান মিলনকে সভাপতি করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের কমিটির অনুমোদন করে জেলা কমিটি। এর ৬ মাসের মাথাই পৌরসভা ও উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করেন তিনি।
২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বিএনপি-জামায়াতের ক্যাডারদের হাতে সলিয়াবাকপুর বাজারে বসে নির্মম নির্যাতনের শিকার হন মিলন। ওই সময়ে তাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়। যার কারনে এখনও তিনি শারিরীকভাবে অসুস্থ। নির্বাচনের পরে পিতা-মাতা, স্ত্রী ও সন্তান রেখে বসতবাড়ি ছেড়ে দেশ ত্যাগ করতে হয় তাকে। ওই সময়ে রাজনৈতিক মিথ্যা মামলায় আসামীও করা হয় তাকে। এতো কিছুর পরেও আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে এসে মনে এতোটুকু ব্যথা অনূভব করেননি তিনি। তবে কষ্ট পেয়েছেন ২০০৩ সালের ১৯ মে তার পিতা মেছের উদ্দিন আহম্মেদের মৃত্যুর পরে যখন তার জানাজা ও দাফনে অংশ গ্রহন করতে পারেননি । এটা যে কতো বড় কষ্টের যন্ত্রনার তা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন আনিছুর রহমান মিলন । শেষ বারের মতো পিতার মুখখানি ও শেষ বিদায়ের খাটিয়া না ধরার যন্ত্রনা তাকে এখনও কুড়ে কুড়ে খায়। যতদিন পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত সরকারে ছিলো ততদিন তিনি পিতার কবরটিও দেখতে আসতে পারেননি।
১/১১ সময় সেনা সমর্থীত সরকার দেশরতœ জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করার পরে তাঁর মুক্তি এবং আওয়ামী লীগ ঘোষিত সকল কর্মসূচিতে সরব ছিলেন তিনি। পরে ২০০৮,২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করেছেন স্বার্থহীন’ভাবে। আওয়ামী লীগ পরিবারের একজন সদস্য হয়ে আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সলিয়াবাকপুর ইউনিয়ন থেকে স্বাধীন পতাকা,স্বাধীন মানচিত্র অর্জনকারীদল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হতে চান মো. আনিছুর রহমান মিলন।
দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিজয়ী হতে পারলে সলিয়াবাকপুরকে সন্ত্রাস,দুর্নীতি,মাদক ও বাল্য বিয়েমুক্ত উন্নত এক আলোকিত ইউনিয়নে রূপান্তর করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি সবার দোয়া,আর্শীবাদ ও সমর্থন কামনা করেছেন।