বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ এর দ্বিতীয় প্রবাহ ক্রমেই ভয়াবহতার দিকে এগুচ্ছে। আসন্ন শীতের কারনে ভাইরাসটির ভয়াবহতা কোথায় গিয়ে থামবে তা নিয়ে ইতিমধ্যে সংশয় প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
এদিকে আজবাদে কাল বড়দিন উদযাপনকে সামনে রেখে বিভিন্ন দেশ বেশ সাবধানতামূলক অবস্থানে যাচ্ছে।
বিবিসি ও সিএনএন থেকে প্রাপ্ত সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আবার কঠোর বিধিনিষেধের দিকে যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। বড়দিন সামনে রেখে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ নতুন করে এই বিধিনিষেধ আরোপ করছে। এদিকে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, করোনার দ্বিতীয় দফা ঢেউ আগের চেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
বিজ্ঞানীদের সতর্কবাণীর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা তাদের দেশে বিভিন্ন সতর্কতামূলক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
কোভিড-১৯ এ বিশ্বের অন্যতম ক্ষতিগ্রস্থ দেশ যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন করোনার নতুন সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরার চেষ্টায় বিধিনিষেধ শিথিল করার পরিবর্তে এটি আরও কড়াকড়ি করার ঘোষণা দিয়েছেন। বড়দিনের উৎসব উদ্যাপন ও লোকজনের মেলামেশার ক্ষেত্রে নিয়মকানুন কঠোরভাবে মানতে বলেছেন তিনি।
ইউরোপে করোনায় মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি যুক্তরাজ্যে। দেশটিতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ২০ লাখের বেশি মানুষ। মারা গেছেন ৬৭ হাজারের বেশি লোক। বড়দিন সামনে রেখে পরিস্থিতি যাতে আরও খারাপ না হয়, সে লক্ষ্যে আজ রোববার প্রধানমন্ত্রী বরিস দেশকে প্রায় লকডাউন পরিস্থিতিতে নিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, লন্ডন ছাড়াও ইংল্যান্ডের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করেছে। এসব স্থানে চার স্তরের বিধিনিষেধ কার্যকর করা হবে, যা লকডাউনের পর্যায়ে পড়বে।
আজ তড়িঘড়ি করে ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে বরিস বলেন, ‘এই ভাইরাস নতুন রূপে ছড়িয়ে পড়ছে। দৃশ্যত মনে হচ্ছে, এটি আরও সহজে ছড়াচ্ছে এবং প্রথম ধাপের চেয়ে ৭০ শতাংশ বেশি মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে।’
এর আগের দিন গতকাল ইংল্যান্ডের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা অধ্যাপক ক্রিস হুইটি সতর্ক করে দেন, ‘কোভিড-১৯–এর যে নতুন রূপ দেখা যাচ্ছে, তাতে এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে আগের চেয়ে দ্রুত গতিতে। ঠিক এই মুহূর্তে ভাইরাসটি খুবই দ্রুত ছড়াচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে পরিকল্পনামাফিক বড়দিনের উৎসব আমরা উদ্যাপন করতে পারব না।’
তিনি আরও বলেন, “কোভিড-১৯–এর যে নতুন রূপ দেখা যাচ্ছে, তাতে এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে আগের চেয়ে দ্রুত গতিতে। ঠিক এই মুহূর্তে ভাইরাসটি খুবই দ্রুত ছড়াচ্ছে।”
ইউরোপের অন্যতম শীতপ্রধান দেশ স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসের নেতারাও নানা পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
সংক্রমণ আবার বাড়তে থাকায় অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য সিডনিতে নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এই বিধিনিষেধের আওতায় ঘরোয়া সমাবেশে ১০ জনের বেশি মানুষ একত্র হতে পারবেন না। বড় কোনো অনুষ্ঠানে ৩০০–এর বেশি মানুষ অংশ নিতে পারবেন না। ঝুঁকি এড়াতে লোকজনকে বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের না হতে বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জনসন বলেন, চার স্তরের বিধিনিষেধ যেসব স্থানে থাকছে, সেখানে বড়দিনের উৎসবে অবাধে মেলামেশার কোনো সুযোগ নেই। তবে অপেক্ষাকৃত কম স্তরের সতর্কতায় থাকা স্থানগুলোয় লোকজন শুধু বড়দিনে এমন মেলামেশার সুযোগ পাবেন।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন সে দেশের জনগনকে বড়দিন উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশ্যে এক বিবৃতিতে বলেন, “আপনাদের সাবধানতা আপনার পরিবারের নিরাপত্তা, আপনার পরিবার নিরাপদ থাকলে নিরাপদ থাকবে পুরো রাষ্ট্র। আমাদের কড়াকগি আরোপ আপনাদের সহযোগিতার জন্য। আপনান পরিবার ও দেশকে নিরাপদ রাখার জন্য।”
করোনার প্রথম ধাপে মৃত্যুপুরির আরেক দেশ ইতালি। বলতে গেলে ইতালির পুরো দেশকে গ্রাস করেছিলো এ কোভিড-১৯। ১ম ধাপের মৃত্যুর বিভীষিকাকে মাথায় রেখে দেশটির কর্তৃপক্ষ বড়দিনকে সাবধানে রেখে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে।
একই পথে হাঁটছেন কানাডাসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানরাও।
এদিকে ওয়েলসের ফার্স্ট মিনিস্টার মার্ক ড্রেকফোর্ড ও স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজিওনও গতকাল তাঁদের বক্তব্যে মানুষের চলাচল ও গণপরিবহন নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।
এ ছাড়া, নানা বিধিনিষেধ আরোপের কথা জানিয়েছে বেলজিয়াম, বুলগেরিয়া, সাইপ্রাস, ক্রোয়েশিয়া, চেক রিপাবলিক, ডেনমার্কসহ আরও কিছু দেশ।
