প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্পের তার দেশের জনগনকে নতুন নতুন চমক দিতে জুড়ি নেই। করোনা মহামারিতে যখন ইউরোপ আমেরিকা সহ তাবৎ দুনিয়ায় লাখে লাখে মানুষ মরছিলো তখনও মহামারি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়া এবং করোনা ‘তেমন কোনো ভাইরাস নয়’ বলে এক সময় দাবি করা ডোনাল্ড ট্রাম্প কিনা এখন বলেছেন, তিনি ভাইরাসটি সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। এখন সবাইকে তিনি সেটা জানাতে চান।
বিশ্বে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পই একমাত্র রাষ্ট্র প্রধান যিনি এই রোগের অন্যতম প্রধান প্রত্যাখ্যানকারী ছিলেন। যদিও পরে তিনি তার অবস্থান পরিবর্তন করেছিলেন, তবুও বিশেষজ্ঞদের সুপারিশের বিপরীতে ট্রাম্প প্রকাশ্য ইভেন্টগুলিতে ফেস মাস্ক পরেননি।
২রা অক্টোবর, করোনায় আক্রান্ত হয়ে ওয়াশিংটনের একটি সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সমর্থকদের চমকে দিলেন। তার অসুস্থতার কথা শুনে যেসব কর্মী-সমর্থক হাসপাতালের সামনে জড়ো হয়েছিলেন তিনি ৪ অক্টোবর কিছুক্ষণের জন্য হাসপাতাল ছেড়ে তাঁর সমর্থকদের স্বাগত জানাতে একটি সংক্ষিপ্ত অফ রোড সফরে গিয়েছিলেন। তিনি তাঁর নিরাপত্তা রক্ষীদের নিয়ে গাড়িবহর নিয়ে তাদের দেখা দিয়েছেন।
বিবিসির এক অনলাইন প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়ে বলা হচ্ছে, চমকে দিতে সফর করবেন টুইটারে এমন ঘোষণা দেয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই গাড়ির ভেতর মাস্ক পরে হাসপাতালের বাইরে তার গাড়িবহরকে চক্কর দিতে দেখা যায়।
কোট-টাই ছাড়া একটি জ্যাকেট পড়ে দেয়া এক টুইট বার্তায় তিনি জানান, “আমি কোভিড সম্পর্কে অনেক কিছু শিখেছি। আমি সত্যিই এটা শিখেছি স্কুলে গিয়ে। এটাই আসল স্কুল। এটি বই পড়ার স্কুল নয়। আমার এটা হয়েছে এবং আমি বুঝতে পেরেছি। এটি একটি খুব মজার বিষয়, আমি আপনাদেরকে এটা সম্পর্কে জানাবো।”
হাসপাতাল থেকে বের হয়ে গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার বিষয়টিকে চিকিৎসকরা নিরাপদ হিসেবে জানানোর পর ট্রাম্প হাসপাতাল ছাড়েন বলেন নিশ্চিত করেছেন হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা।
তবে ট্রাম্পের সমালোচকরা প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্পের এধরনের কর্মকান্ডকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও দায়িত্বহীন বলে সমালোচনা করেছেন। সমালোচকরা বলেছেন, “তিনি তাঁর এধরনের কান্ডজ্ঞানহীনতার কারনে তাঁর আশপাশের সবাইকে বিপদে ফেলছেন। তিনি তাঁর প্রহরীদের বিপদগ্রস্থ করেছেন”।
হোয়াইট হাউজ চিকিৎসক ডাঃ শন কনলি বলেছেন, ট্রাম্পকে ২ অক্টোবর শুক্রবার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল, কারণ প্রেসিডেন্টের শরীরে রোগটি দ্রুত বেড়ে যাচ্ছিলো এবং রক্তের অক্সিজেনের মাত্রা হ্রাস পেয়েছিল। হাসপাতালে ভর্তির পর দিনও একই রকম পরিস্থিতি ছিল, তবে তার জীবন বিপন্ন হয়নি। মার্কিন রাষ্ট্রপতির স্টেরয়েড দিয়ে চিকিত্সা করা হচ্ছে এবং তার স্বাস্থ্যের উন্নতি হচ্ছে।
ডাঃ শন কনলি আরও বলেন, “আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হওয়ার পর দুইবার প্রেসিডেন্টের দেহে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গিয়েছিল এবং তাঁকে স্টেরয়েড ওষুধ ডেক্সামেথাসন দেয়া হচ্ছে।”
ট্রাম্পের অপর একজন ডাক্তার ব্রায়ান গারিবলদী জানিয়েছেন, “সোমবার নাগাদ প্রেসিডেন্ট ট্র্যাম্প হাসপাতালের ডাক্তারদের পরামর্শে হাসপাতাল থেকে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসবেন এবং তিনি তাঁর স্বাভাবিক কাজ কর্ম চালিয়ে যেতে পারবেন। তবে তাঁকে তাঁর চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।”
তবে প্রেসিডেন্ট ও তাঁ স্ত্রীর দেহে করোনা সংক্রমন দেখা দেবার পর ওইদিন থেকে এরপর হোয়াইট হাউসে তার অনেক মিত্রের দেহে ভাইরাসটির সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এতে আসন্ন মার্কিন নির্বাচন নিয়ে অচলাবস্থা তৈরী হচ্ছে। আগামী ৩ নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন।
উল্লেখ্য যে, ট্রাম্প তার রাজনৈতিক বিরোধীদের আক্রমণ করতে কোভিড -১৯ ব্যবহার করেছিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট কোভিড -১৯ এই ভাইরাসটির উৎস হিসাবে বিবেচিত চিনের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসাবেও কাজ করেছেন।