নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা জিনিয়া জিন্নাতের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠেছে।
এ প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান তাপসি রাবেয়া আমাদের প্রতিনিধিকে জানান,
“কোন রেজুলেশন ছাড়াই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চেকবইয়ে স্বাক্ষর করতে বলেন।
রেজুলেশন ছাড়া চেক বইয়ে সই করতে অস্বীকৃতি
জানালে সরকারী প্রোগ্রাম কৃষিমেলায় দাওয়াত করা হয়নি আমাকে।”
এখবর শুনে স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রধান অতিথি
হয়েও কৃষি মেলায় উপস্থিত থাকেননি বলে জানান তাপসি। উপস্থিত থাকেননি উপজেলা চেয়ারম্যানও।
উপজেলা চেয়ারম্যান আরো জানান,
রেজুুলেশনে ছাড়া ১৫ লাখ টাকার চেকে সই না
দেয়ার কারণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে ছাড়াই নিয়ম বহিভূতভাবে একাই সভা সমাবেশ করছেন।
এতে করে সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা তার উপর চরম অসন্তুষ্ট।
তাঁর নানা অনিয়ম, কর্মচারীদের সাথে দুর্ব্যবহারে অতিষ্ঠ উপজেলা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
এছাড়াও মহাসড়ক থেকে শিবপুর পৌরসভার নাম
করে চাঁদা তোলাও বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ আছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মহাসিন নাজির বলেন, “উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ক্ষমতা অনেক বেশী।
উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ মারা যাওয়ার
পর তিনি এখন আর কাউকেই গ্রাহ্য করেন না।
উপজেলা আইন শৃংখলা সভাসহ কোন সভায় কাউকে সম্মান দেওয়া বা কথা বলার সুযোগ না
দিয়ে কাগজে কলমে নিজেই সভাশেষ করে দেন।”
তাঁর বিরুদ্ধে সরকারী গাড়ীর অপব্যবহার,
সহকর্মীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ
এবং সরকারী বিধি নিষেধ ভঙ্গের একাধিক অভিযোগ আছে।
তাঁর নানা অনিয়মের খবর অতি সম্প্রতি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার পর তাকে
জেলা প্রশাসক কার্যালয় ডেকে এনে সতর্ক করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।
এরপরও থেমে নেই তাঁর এসব অনিয়ম।
সরকারী প্রোগ্রামে উপজেলা চেয়ারম্যান ও
উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে পাশ কাটিয়ে নিজের স্বামীকে উপস্থিত রাখার অভিযোগও রয়েছে এই ইউএনও’র বিরুদ্ধে।
তাঁর স্বামী কোন সরকারী চাকুরীজীবি না হলেও
যত্রতত্র ইউএনও’র সরকারী গাড়ি ব্যবহার করে থাকেন।
অফিস সময়ে গাড়ী নিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় তাকে।
জানা যায়, গত ঈদুল আযহার আগের দিন রাত সাড়ে তিনটায় ছোনপাড়া কাঞ্চন আঞ্চলিক সড়কের
মাঝামাঝি স্থানে দুর্ঘটনায় পতিত হয় ইউএনও’র সরকারী কাজে ব্যবহৃত গাড়িটি।
তখন গাড়িতে ইউএনও’র অনুপস্থিতিতে ইউএনও’র
স্বামী ও ইউএনও’র নিরাপত্তারক্ষী গানম্যান ছিলেন।
দুর্ঘটনায় গাড়ির সামনের বাম্পার ও ডানদিকে বডি
ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফগ ও ইন্টিকেটর লাইট ভেংগে যায়।
তখন নিয়মবহির্ভূত ভাবে ট্রাক থেকে ১০ হাজার
টাকা জরিমানাও আদায় করে ইউএনও’র স্বামী।
তখনকার গাড়ির চালক মাইন উদ্দিন আমাদের
প্রতিনিধিকে বলেন, “ঐদিন প্রচন্ড জ্যামের মধ্যে দাঁড়ানো আমাদের গাড়িটিকে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাক ডানদিকে লাগিয়ে দেয়।
পরে ট্রাক থেকে দশ হাজার টাকার জরিমানা নিতে শুনেছি।”
ইউএনও’র গাড়ি চালক আরো জানান, “ইউএনও ম্যাডাম গাড়িতে না থাকলেও ওনার স্বামী ও
ইউএনও ম্যাডামের গানম্যান তখন গাড়িতে ছিলেন।
তখন গানম্যান ইউএনও ম্যাডামের স্বামীকে ইউএনও
হিসেবে পরিচয় দেন ট্রাক ড্রাইভারকে।”
চালক মাইন উদ্দিনের কাছ থেকে আরও জানা যায়,
জরিমানা আদায়ের পর গাড়িটিকে কোন রকম ভাবে চালিয়ে শিবপুরে নিয়ে আসার সময় চালক
মাইন উদ্দিন ইউএনও’র স্বামীকে জানান, কাজ না করে এই গাড়ী আর চালানো যাবেনা।
জরিমানা আদায় করেও গাড়ির কাজ না করানোর
কারণে তিন চারদিন পর নিরাপত্তাজনিত কারণে রেখে তিনি গাড়ী চালাতে অস্বীকার করেন।
এরপর থেকে এখন পৌর সভার রোলার ড্রাইভার
কামাল হোসেন ইউএনও’র গাড়ী চালায় বলে জানা গেছে।
ঠুনকো অভিযোগে ইউএনও’র গাড়ী চালক রুবেলকে গত ৭ মাস যাবৎ ধরে শোকজ করে
রেখেছেন ইউএনও জিনিয়া জিন্নাত।
এরপরই রুবেলের পরিবর্তে মাষ্টার রুলে কাজ করা চালক মাইন উদ্দিনকে দিয়ে গাড়ি চালানো শুরু করা হয়।
এখন মাইন উদ্দিনকে অব্যাহতি দিয়ে পৌরসভার
রুলার ড্রাইভার কামালকে দিয়ে গাড়ী চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।
ইউএনও’র বর্তমান চালক কামাল হোসেনও
মোবাইলে ইউএনওর গাড়ি দূর্ঘটনার কথা স্বীকার করেন।
চালক কামাল জানায়, শুনেছি দূর্ঘটনার পর ট্রাক
ড্রাইভারের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
অথচ গাড়ী আগের মতই আছে।
এখনো গাড়ির কোন মেরামত কাজ করানো হয়নি।
কামাল আরো জানান, “জীবনের তাগীদে রিস্ক নিয়েই ইউএনও এবং তার স্বামীর রাতে দিনে
দু’জনের ডিউটিই করতে হয়।
প্রায় প্রতি সপ্তাহে রাতে দুই তিন দিন ইউএনও’র
স্বামীকে নিয়ে ঢাকার ধানমন্ডিতে আসতে যেতে হয়।
সেখানে তাঁর অফিস রয়েছে বলেও জানান চালকরা।
এই অফিসের সামনেই নিদ্রাহীন রাত্রিযাপন করতে হয় তাদেরকে।”
এদিকে ৭ মাস যাবৎ বেতনভাতা না পেয়ে মানবেতর
জীবন যাপন করছেন ইউএনও’র আরেক চালক রুবেল।
তার বিরুদ্ধে ইউএনওর লিখিত অভিযোগ, সে নাকি বেয়াদবী করেছে।
এমন অভিযোগের লিখিত জবাব দিলেও গত ৭ মাস
যাবৎ বেতনভাতা পায়না বলে জানিয়েছেন গাড়ী চালক রুবেল।
এসব বিষয়ে জানার জন্য শিবপুর উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তা জিনিয়া জান্নাত এর সরকারী মোবাইল নম্বরে ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
পরে এসএমএস দিলেও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।
এব্যপারে জেলা প্রশাসনের দুই জন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা জানান, ইউএনও গাড়িতে না থাকলে গানম্যান থাকার কোন সুযোগ নেই।
এছাড়া ইউএনও গাড়ি নিয়ে তাঁর জুরিডেকশনের
বাইরে গেলে অবশ্যই জেলা প্রশাসককে অবহিত করতে হবে।
ইউএনও’র স্বামী ইউএনও’র গাড়ি ও দেহরক্ষী নিয়ে বাইরে কোথাও যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।
যদি গিয়ে থাকেন এবং দুর্ঘটনায় পতিত হয় এ
বিষয়টি তাদের এখনো জানা নেই।
বিষয়টি শুনার পর তারা তা খতিয়ে দেখবেন বলে
জানান অপরাজিতবাংলার প্রতিনিধিকে।
এদিকে এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সম্পর্কে
স্থানীয় সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঞা মোহনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,
বিষয়গুলো খুবই দুঃখজনক।
খুব শিঘ্রই বিষয়গুলো আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও
জেলা প্রশাসককে অবহিত করবো এবং দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করবো।