রাজধানীর গুলশানে বিলাসবহুল একটি ফ্ল্যাটে মোসারাত জাহান মুনিয়ার মৃত্যু রহস্য এখনও উদ্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। গত তিনদিনে পুলিশ জব্দকৃত আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সিসিটিভি ফুটেজ ওই ভবনের এবং এর আশপাশের বিভিন্ন সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ নেয়া হয়েছে। ফুটেজ বিশ্লেষণ করে মুনিয়ার ফ্ল্যাটে সায়েম সোবহান আনভীরের যাতায়াতের তথ্য পাওয়া গেছে। আদালতের অনুমতি নিয়ে আমরা এসব ফুটেজ সাক্ষ্য হিসেবে নেব। ইতোমধ্যে এ ঘটনায় ফ্ল্যাটের মালিক, তার মেয়ের জামাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এছাড়া মামলার সাক্ষ্য হিসেবে বাড়ির ম্যানেজার, সিকিউরিটি গার্ড ও গৃহকর্মীদের আদালতের মাধ্যমে অথবা ১৬১ ধারায় জবানবন্দী নেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এসব সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পর সায়েম সোবহান আনভীরকে গ্রেফতার করা হতে পারে।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, মুনিয়ার মৃত্যু ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য নানা বিষয় সামনে রেখেই তদন্ত করা হচ্ছে। ওই ফ্ল্যাটের সিসিটিভি ফুটেজ এবং এর আশপাশের বিভিন্ন সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ নেয়া হয়েছে। এসব ফুটেজ বিশ্লেষণ করে মুনিয়ার ফ্ল্যাটে সায়েম সোবহান আনভীরের যাতায়াতের তথ্য পেয়েছি। এমনকি ভিকটিমের দুটি মোবাইল ফোন সিজ করা হয়েছে। সেটি নিয়ে বিশেষজ্ঞ দল কাজ করছে। আদালতের অনুমতি নিয়ে আমরা এসব ফুটেজ ও ভিকটিমের মোবাইল কললিস্ট সাক্ষ্য হিসেবে নেয়া হবে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে এ ঘটনায় ফ্ল্যাটের মালিক, তার মেয়ের জামাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ভবনের ম্যানেজারকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এছাড়া সিকিউরিটি গার্ড ও গৃহকর্মীদের আদালতের মাধ্যমে অথবা ১৬১ ধারায় জবানবন্দী নেয়া হবে।
তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, ঘটনাস্থলের বিভিন্ন আলামত, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট, সিসিটিভি ফুটেজ এবং অন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো আরও বিশ্লেষণ করার পর জানা যাবে মুনিয়ার মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য। ঘটনার পর মঙ্গলবার নিহত মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহানা বাদী হয়ে আত্মহত্যার ‘প্ররোচনার’ অভিযোগে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। পাশাপাশি আদালতের মাধ্যমে অভিযুক্ত আনভীরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গুলশানের ফ্ল্যাট থেকে জব্দকৃত দুটি স্মার্টফোনে আনভীরের সঙ্গে মুনিয়ার অসংখ্য ছবি ছিল। অধিকাংশ ছবিতে মুনিয়া এবং আনভীরকে হাতে হাত রেখে এবং কাঁধে হাত দিয়ে দাঁড়ানো অবস্থায় ছিল। মুনিয়ার মোবাইলে ফোনে বাংলালিংক অপারেটরের একটি নম্বরের অসংখ্য কল রেকর্ড। ওই নম্বরটি এমডি আনভীরের বলে নিশ্চিত করেছেন বসুন্ধরা গ্রুপের একাধিক কর্মকর্তা। মুনিয়ার মোবাইল কল রেকর্ডের কয়েকটিতে আনভীরের সঙ্গে মুনিয়ার স্বাভাবিক কথাবার্তা শোনা গেছে। আবার কয়েকটিতে মুনিয়াকে আবেগী আর আনভীরকে আক্রমণাত্মক কথাবার্তা বলতে শোনা গেছে। তবে ২৪ থেকে ২৬ এপ্রিলের কথোপকথনের সবগুলোতেই তাদের মধ্যে ঝগড়াবিবাদ চলছিল। এমনকি ফোন রেকর্ডে আনভীরের ওই নম্বর থেকে মুনিয়াকে শেষ করে ফেলব বলে হুমকি দেয়া হয়। সেই রেকর্ডে মুনিয়াকে কান্নাকাটি করে বার বার কিছু জানি না, কিছু জানি না বলে দাবি করতে শোনা যায় বলে তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান। এদিকে মুনিয়ার ফোনে ডাউনলোড করা একটি এ্যাপে মুনিয়া ও আনভীরের নম্বরে চ্যাটের তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এই এ্যাপে দেখা যায়, মুনিয়া প্রতিদিনই আনভীরের নম্বরে বিভিন্ন ধরনের মেসেজ এবং ছবি দিতেন। এসব মেসেজে ফ্ল্যাটে একা থাকা মুনিয়া কখন কী করতেন, সারাদিন কীভাবে কাটত, ফোনে সারাদিন কার সঙ্গে কী কথা হয়েছে ইত্যাদি লেখা ছিল। এছাড়া মুনিয়া কোথাও ঘুরতে গেলে বা কেনাকাটা করতে গেলেও তার ছবি ও মেসেজ এই এ্যাপে দেয়া হতো। তবে এই এ্যাপে সপ্তাহে ২-১ বার আনভীরের নম্বর থেকে প্রতিউত্তর আসত। তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানায়, মুনিয়ার জব্দকৃত ৬টি ডায়েরি সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসেবে নেয়ার জন্য কাজ শুরু করেছে। গত ২ বছরের লেখা ডায়েরিগুলোতে বেশ কয়েকটি অংশে আনভীরের নাম ও তার সঙ্গে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া এবং প্রেমের দিনগুলোর বিষয়ে লেখা ছিল। ডায়েরির লেখাগুলোর শেষের দিকে মুনিয়া লিখেছেন ‘জীবনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।’
পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, মোবাইল ও ডায়েরির লেখাগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। ঘটনার শিকার নারী হতাশাগ্রস্ত ও মারাত্মক মনোকষ্টে ছিলেন। ডায়েরির পাতায় পাতায় মানসিক বিপর্যস্ততার প্রমাণ আছে। মানসিক বিপর্যয়ের মুখেই তাকে হয়তো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। সম্পর্কের সামাজিক স্বীকৃতি, দাম্পত্য জীবন নিয়ে তার প্রত্যাশা, প্রতিবন্ধকতা, তাদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব ও পারিবারিক সমস্যার কথা লিখে গেছেন ভুক্তভোগী নারী। এই মামলা প্রতিষ্ঠায় ডায়েরি আদালতে জরুরী হবে। এজন্য মামলা হয়েছে দণ্ডবিধি ৩০৬ ধারায়। আত্মহত্যায় প্ররোচনা ও অভিপ্রায় এখন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সে জন্য সাক্ষ্য সংগ্রহ জরুরী। পুলিশ এই ঘটনায় যাবতীয় তথ্য ও সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করছে। ডিসি সুদীপ কুমার জানান, সব ধরনের তথ্য-প্রমাণ হাতে পেলেই আসামির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি জানান, যেহেতু মামলাটি বহুল আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর মামলা, ভুক্তভোগীকে ন্যায়বিচার দিতে সবাই মিলে চেষ্টা করে যাচ্ছি। নিহত মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান জানান, ডায়েরিতে অনেক ছবি আঁকা ছিল। সেই সঙ্গে অনেক কিছু লেখা ছিল। সকল ডকুমেন্ট পুলিশের হেফাজতে আছে।
মঙ্গলবার (মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় সায়েম সোবহান আনভীরের বিদেশযাত্রার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত। তবে সোমবার মুনিয়ার মৃত্যুর পর থেকেই গুঞ্জন উঠেছে আনভীর দেশে আছে। নাকি দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আনভীরের কাছে বাংলাদেশ এবং স্লোভাকিয়ার দুই দেশের পাসপোর্ট রয়েছে। তার কোনটিই ব্যবহার করে তিনি অন্য দেশে যাননি। মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা গুলশানের ডিসি সুদীপ চক্রবর্তী জানান, ইমিগ্রেশন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী আনভীর বিমানবন্দর দিয়ে দেশত্যাগ করেননি। তাহলে তিনি বাংলাদেশে আছেন। তবে দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে আনভীর যাতে সীমান্ত দিয়ে অবৈধ-পথে ভারতে পা রাখতে না পারেন, সেজন্য সীমান্ত এলাকার থানাগুলোকে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গুলশানের যে ফ্ল্যাটে মুনিয়া থাকতেন সেটির এবং আশপাশের কিছু সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। ফুটেজে কি আছে। তা নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা মুখ খুলছে না। তবে একটি সূত্র জানায়, চলতি মাসের প্রথমভাগে ওই ফ্ল্যাটে বসুন্ধরার এমডি আনভিরের যাওয়ার প্রমাণ আছে। মামলার বাদী মুনিয়ার বোন নুসরাত দাবি করেন, পুলিশ যে ফুটেজ নিয়ে গেছে সেখানে আনভীরের যাতায়াত করার ছবি আছে। এ বিষয়ে মুনিয়া তাকে আগেই জানিয়েছেন। এছাড়া বাসা থেকে অনেক তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। তিনি জানান, আসামিকে গ্রেফতার ও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার বোনের মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের ভিক্ষা চাইছি। আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, কিন্তু সরকার থেকে কখনও কিছু নেইনি। আমার এতিম বোনটার সঙ্গে এই অবস্থা হয়েছে। এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান মঙ্গলবার রাতে ফেসবুক লাইভে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। তিনি জানান মুনিয়া ঘটনার দিন ফোন করে বলছিল, ‘আপু তোমরা কখন আসবা, আমার অনেক বিপদ। মঙ্গলবার মুনিয়ার কুমিল্লায় চলে আসার কথা ছিল। কিন্তু তার আগের দিনেই বিপদের কথা ফোনে জানতে পারি। এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে নুসরাত জাহান বলেন, আমরা যখন গুলশানের ফ্ল্যাটে ছুটে যাই, দেখি ভেতর থেকে দরজা বন্ধ। ওই সময় ফোনও বন্ধ ছিল মুনিয়ার। পরে দরজা ভাঙ্গার চেষ্টা করি আমরা। দরজা ভাঙ্গতে গিয়ে এতো জোরে শব্দ হচ্ছে অথচ ভেতর থেকে কোন শব্দ হচ্ছিল না। নুসরাত জাহানের ভাষায়, এ সময় আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। দরজা ভেঙ্গেই দেখি ঝুলন্ত অবস্থায় মুনিয়া। পা দুটি বিছানায়, হালকা বাঁকানো ছিল। বিছানা একদম পরিপাটি ছিল। মনে হচ্ছিল কেউ সেট করে রেখে দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে। মুনিয়ার সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয়েছিল, উত্তরে নুসরাত জাহান জানান, সোমবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ মুনিয়ার সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয়। নুসরাত জাহান জানান, তার বোনকে বিয়ের আশ্বাস দিয়েছিল অভিযুক্ত শিল্পপতি সায়েম সোবহান আনভীর। কিন্তু বিষয়টা গোপন রাখতে হবে এ শর্ত দেয়া হয়েছিল মুনিয়াকে। এমনকি বিয়ের পরও বিষয়টি গোপন রাখার কথা ছিল। মুনিয়ার বোন জানান, মুনিয়াকে আমি তিনমাস বয়স থেকে লালন-পালন করেছি। সে আমার সন্তান। আমার বোনটারে ফুঁসলিয়ে নিয়ে গেছে। আমি রাখতে পারি নাই। সে বলেছিল আমার বোনকে বিয়ে করবে এবং বাইরে সেটেলড করবে। কিন্তু সে বেইমানি করেছে। গত কিছুদিন ধরে মুনিয়ার মন খারাপ ছিল। গুলশানের ফ্ল্যাটের বিষয়ে নুসরাত জাহান বলেন, ফ্ল্যাটের বিষয়টি আমরা জানতাম। আমরা মুনিয়াকে নিষেধও করেছি। কিন্তু মুনিয়া সরল মনে সব বিশ্বাস করেছে। ওই শিল্পপতির প্রতি সে বিশ্বাসই কাল হলো এখন। মামলার বাদী নুসরাত জাহান জনকণ্ঠকে জানান, এটি আত্মহত্যা নয়, হত্যাকাণ্ড। এর সুষ্ঠু তদন্ত চান তিনি।
কুমিল্লার মনোহরপুরের উজির দীঘির দক্ষিণপাড় এলাকার বাসিন্দা মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি সফিকুর রহমানের মেয়ে মোসারাত জাহান মুনিয়া রাজধানীর মিরপুর ক্যান্ট. পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। এবার এ প্রতিষ্ঠান থেকে তার এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল। এর আগে সে কুমিল্লা নগরীর বাদুরতলা এলাকার ওয়াইডব্লিউসিএ নামক একটি স্কুল থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে। পরে সে নগরীর নজরুল এ্যাভিনিউ এলাকার মডার্ন হাইস্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে। সর্বশেষ রাজধানীর মিরপুর মনিপুরী স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পাস করে। পরিবারে এক ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সে সবার কনিষ্ঠ।
কলেজছাত্রী মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার পর বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীর কোথায় অবস্থান করছেন তা মিডিয়ার মাধ্যমে দেশবাসীকে জানাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার বরাবর একটি আবেদন করা হয়েছে। বৃৃহস্পতিবার সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী এস এম জুলফিকার আলী জুনু এ আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়েছে, যথাবিহিত সম্মানপূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, সম্প্রতি দেশের আলোচিত বিষয় হচ্ছে গুলশানের একটি ফ্ল্যাটে মুনিয়া নামের একটি মেয়ের আত্মহত্যার মামলা। যেই মামলায় আত্মহত্যার প্ররোচনাকারী হিসেবে দেশের স্বনামধন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরকে আসামি করা হয়েছে। কিন্তু জনমনে প্রশ্ন, মামলা দায়েরের ৩ দিন অতিবাহিত হলেও কেন এই মামলার অন্যতম আসামি সায়েম সোবহান আনভীরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না? নাকি সায়েম সোবহান আনভীর দেশত্যাগ করেছেন? দেশের অভ্যন্তরে থাকলে কেন পুলিশ কর্তৃক উন্নত তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আসামি গ্রেফতার করা হচ্ছে না? ‘জনমনে এও প্রশ্ন রয়েছে, দেশের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী বলে পুলিশ গ্রেফতারে অনীহা প্রকাশ করছে। যা দেশের সাধারণ মানুষের আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অশনি সঙ্কেত। আবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ পুলিশ একটি পেশাদার সুশৃঙ্খল বাহিনী। এই বাহিনীর প্রতি দেশের সাধারণ মানুষ ও আমাদের আস্থা রয়েছে। পুলিশ কমিশনার আপনার কাছে আকুল আবেদন, আত্মহত্যায় প্ররোচনার আসামি বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর দেশে আছে নাকি বিদেশে পালিয়ে গেছে এর একটি সুস্পষ্ট বক্তব্য দেশ ও জাতির কাছে জানান। দেশে থাকলে তাকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না এবং উন্নত তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আসামি গ্রেফতার না করা কেন পুলিশের দায়িত্ব পালনে নিষ্ক্রিয়তা হিসেবে গণ্য হবেনা- তা আপনাদের অবস্থান ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে জাতিকে মিডিয়ার মাধ্যমে জানানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সোমবার রাতে গুলশান দুই নম্বর এ্যাভিনিউয়ের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর প্লটের বি/৩ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়। এদিকে ঘটনার পর সিআইডি ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ঘটনার পর সোমবার রাত দেড়টার দিকে গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান।
পরে পুলিশ ওই ভবনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও মুনিয়ার ব্যবহৃত ডিজিটাল ডিভাইসগুলো জব্দ করেছে। এ ঘটনায় মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া বাদী হয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, সায়েম সোবহানের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল মুনিয়ার। মাসে এক লাখ টাকা ভাড়ার ওই ফ্ল্যাটে মুনিয়াকে রেখেছিল সায়েম সোবহান। সে নিয়মিত ওই বাসায় যাতায়াত করতো। তারা স্বামী-স্ত্রীর মতো করে থাকতো। মুনিয়ার বোন অভিযোগ করেছেন, তার বোনকে বিয়ের কথা বলে ওই ফ্ল্যাটে রেখেছিল আনভীর। একটি ছবি ফেসবুকে দেয়াকে কেন্দ্র করে সায়েম সোবহান তার বোনের ওপর ক্ষিপ্ত হয়। তাদের মনে হচ্ছে, মুনিয়া আত্মহত্যা করেনি। তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। এর বিচার চান তারা।
