অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় টানা সাত দিনের যুদ্ধবিরতি শেষে গতকাল একদিনের ইসরাইলি পাশবিক বিমান হামলায় অন্তত ১৮৪ ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন।
২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে এসব ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন জানিয়ে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, এ সময়ে আরো ৫৮৯ জন গাজাবাসী আহত হয়েছেন।
হতাহতদের মধ্যে বহু নারী ও শিশু রয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের লাশ গ্রহণ ও দাফন এবং আহতদের চিকিৎসা সেবা দিতে গাজার হাসাপাতালগুলোকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। উপত্যকার বেশিরভাগ হাসপাতাল হয় ইসরাইলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অথবা জ্বালানীর অভাবে ঠিকমতো চিকিৎসা সেবা দিতে পারছে না।
গাজার ডক্টর্স উইথআউট বর্ডার্স জানিয়েছে, উত্তর গাজার আল-আওদা হাসপাতালে গতকাল (শুক্রবার) যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পরপরই হামলা চালায় ইসরাইলি সেনারা। এতে হাসপাতালটির একাংশের ক্ষতি হয়েছে। গতকাল হাসপাতালটিতে অন্তত ৫০ জন আহত ব্যক্তি ভর্তি হয়েছে।
ইসরাইলে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে হামাস ও জিহাদ আন্দোলন
গাজা উপত্যকার নিরীহ মানুষের ওপর ইসরাইলি বিমান হামলা ও ট্যাংকের গোলাবর্ষণের জবাবে ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিবসহ এই অবৈধ রাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে ঝাঁকে ঝাঁকে রকেট নিক্ষেপ করেছেন ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা। এসব রকেটের বেশ কিছু আয়রন ডোমের মাধ্যমে ধ্বংস করে দেয়া হলেও বেশ কিছু রকেট ইসরাইলে আঘাত হেনেছে।
ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস ও ইসলামি জিহাদ আন্দোলনসহ আরো কিছু প্রতিরোধ সংগঠনের যোদ্ধারা গাজা উপত্যকায় অনুপ্রবেশকারী ইসরাইলি সেনাদের লক্ষ্য করে মর্টারের শেল, ক্ষেপণাস্ত্র ও আত্মঘাতী ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় বহু ইসরাইলি সেনা হতাহত হলেও তাদের সংখ্যা প্রকাশ করেনি দখলদার সেনা কর্তৃপক্ষ।
লেবানন সীমান্তেও সংঘর্ষ শুরু
শুক্রবার গাজার স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় যুদ্ধবিরতি শেষ হয়ে গেলে লেবানন-ইসরাইল সীমান্তেও সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।
লেবাননের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা সীমান্তে মোতায়েন একদল ইহুদিবাদী সেনার ওপর গোলাবর্ষণ করার পর দক্ষিণ লেবাননে কামানের গোলাবর্ষণ করেছে ইসরাইলি বাহিনী। লেবাননের হুলা শহরে ওই গোলার আঘাতে এক মা ও তার ছেলে সন্তান নিহত হয়েছেন। একই হামলায় একজন হিজবুল্লাহ যোদ্ধাও নিহত হয়েছেন।
৪ ইসরাইলি বন্দির নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে তেল আবিব
ইহুদিবাদী ইসরাইলের সেনা মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি গাজায় আটক তাদের চার বন্দির নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ওই চারজনের পরিবারগুলোকে এ খবর জানানো হয়েছে। তবে হামাসের হাতে আটক এসব বন্দি কীভাবে এবং কবে নিহত হয়েছে তা হ্যাগারি জানাননি।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার হামাস ইসরাইলি হামলায় তাদের হাতে আটক এক ইসরাইলি নারী ও তার দুই সন্তান নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছিল। হামাস ওই তিন জনের লাশ হস্তান্তরও করতে চেয়েছিল কিন্তু তেল আবিব সে প্রস্তাবে রাজি হয়নি।
রাফাহ সীমান্ত খোলা রাখা নিয়ে পরস্পরবিরোধী খবর
হামাসের নেতৃত্বাধীন গাজা সরকারের গণমাধ্যম অধিদপ্তর তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে জানিয়েছে, গাজার সঙ্গে এই মুহূর্তে বহির্বিশ্বের যোগাযোগ রক্ষাকারী একমাত্র পথ মিশরের রাফাহ ক্রসিং আজ (শনিবার) খোলা থাকবে। গাজা কর্তৃপক্ষ এটি বন্ধ রাখবে বলে যে গুজব ছড়িয়েছিল ওই দপ্তর তা নাকচ করে দিয়েছে।
তবে ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, ইহুদিবাদী ইসরাইল তাদেরকে বলেছে, রাফাহ ক্রসিং পয়েন্ট তেল আবিব পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানীসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুর জন্য ২৩ লাখ গাজাবাসী রাফাহ ক্রসিংয়ের ওপর নির্ভরশীল। দীর্ঘ ৪৭ দিনের যুদ্ধের সময় বন্ধ থাকার পর গত সাত দিনের যুদ্ধবিরতিতে প্রতিদিন শত শত ট্রাক পণ্য গাজায় ঢুকেছে। কিন্তু গতকাল থেকে আবার ইসরাইলি বোমাবর্ষণ শুরু হওয়ার পর থেকে ক্রসিংটি বন্ধ রয়েছে।
এখনও যুদ্ধবিরতির চেষ্টা চলছে
গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধ বন্ধ করে আবার যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করার জন্য চেষ্টা চালানোর দাবি করেছে মিশর, কাতার ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ৭ অক্টোবর থেকে ৪৭ দিন যুদ্ধের পর গত ২৪ নভেম্বর প্রথম চারদিনের যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পরে ওই সাময়িক যুদ্ধবিরতি আরো তিনদিন বাড়ানো হয়। এটির মেয়াদ আরো বাড়ানোর বিষয়ে নিবিড় আলোচনা চলার মধ্যেই গতকাল (শুক্রবার) সকাল থেকে ইসরাইল বিমান হামলা শুরু করলে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যায়। এতে কাতার হতাশা প্রকাশ করে বলেছিল, যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চলতে থাকা অবস্থায় ইসরাইলের বিমান হামলা শুরু করা উচিত হয়নি। অবশ্য বিমান হামলার আগেই হামাস ইসরাইল অভিমুখে রকেট হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে তেল আবিব।#
পার্সটুডে