অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের ভেতর জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুলে বিমান হামলা চালিয়েছে মানবতার শত্রু ইহুদিবাদী ইসরাইল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা জানিয়েছেন, ওই পাশবিক হামলায় অন্তত ২৭ ফিলিস্তিনি শহীদ এবং বিপুল সংখ্যক মানুষ আহত হয়েছেন।
গাজা উপত্যকার অন্যান্য স্থান থেকে প্রাণভয়ে সাধারণ ফিলিস্তিনিরা বিভিন্ন হাসপাতাল প্রাঙ্গণের পাশাপাশি জাতিসংঘ পরিচালিত স্কুলগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন। যেসব স্থানে বেসামরিক নাগরিক রয়েছে সেসব স্থানের তালিকা ও ঠিকানা তেল আবিবকে জানিয়েছে জাতিসংঘ। কিন্তু তারপরও বর্বর ইসরাইলি সেনারা এখন বিমান হামলা থেকে কোনো স্থানকেই নিরাপদ রাখছে না।
দখলদার সেনারা এমন সময় এ হামলা চালাল যখন ৪৩ জন ইহুদি রাবাই একটি ধর্মীয় ফতোয়া জারি করে যুদ্ধবাজ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তরে পাঠিয়েছে। ওই ফতোয়ায় বলা হয়েছে, অবরুদ্ধ গাজার ফিলিস্তিনি হাসপাতালগুলোতে বোমাবর্ষণ করতে ইহুদি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কোনো বাধা নেই। রাবাইদের স্বাক্ষরিত ওই ফতোয়ার বরাত দিয়ে ইসরাইলের চ্যানেল-১৪ এই তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইহুদি রাবাইদের ধর্মীয় ফতোয়া ইসরাইলি মন্ত্রিসভা এবং সেনা ইউনিটগুলোকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের যোদ্ধারা গাজার শিফা হাসপাতালকে নিজেদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার পাশাপাশি অন্যান্য হাসপাতাল থেকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামলা চালাচ্ছে বলে এর আগে দাবি করেছেন ইহুদিবাদী সেনা মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি। শিফা হাসপাতালে বোমাবর্ষণ করা হবে কিনা জানতে চাইলে হ্যাগারি বলেন, সব অপশনই টেবিলে রয়েছে।
গাজা উপত্যকার সবচেয়ে বড় চিকিৎসা কেন্দ্র শিফা হাসপাতালে হাজার হাজার আহত রোগীর সেবাদান করা হচ্ছে। এছাড়া, ইসরাইলি হামলা থেকে প্রাণে বাঁচতে সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন অন্তত ১৫ হাজার বেসামরিক নাগরিক যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
এর আগে ইহুদিবাদী সেনারা গত ১৮ অক্টোবর গাজার আল-আহলি আরব হাসপাতালে ভয়াবহ বিমান হামলা চালায়। ওই হামলায় কমপক্ষে ৫০০ ফিলিস্তিনি নিহত হন।
এদিকে গাজার তুর্কি-ফিলিস্তিন মৈত্রী হাসপাতালের পরিচালক সুভি স্কেইক বলেছেন, তার হাসপাতালের জ্বালানী শেষ হয়ে গেছে এবং এটি এখন কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। গাজার একমাত্র ক্যান্সার বিশেষায়িত চিকিৎসা কেন্দ্র তুর্কি-ফিলিস্তিন মৈত্রী হাসপাতাল। ইসরাইলি হামলায় গাজায় বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় জেনারেটর ব্যবহার করে সেখানকার হাসপাতালগুলো চলছিল। কিন্তু উপত্যকায় জ্বালানী সরবরাহ করার অনুমতি দিতে অস্বীকার করেছে ইহুদিবাদী ইসরাইল। এ কারণে মিশর সরকার তার রাফাহ ক্রসিং দিয়ে গাজা উপত্যকায় জ্বালানী প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।
ইসরাইলি দৈনিক টাইমস অব ইসরাইল জানিয়েছে, গাজা উপত্যকায় মানবিক সাহায্য নিয়ে যেসব ট্রাক প্রবেশ করছে সেগুলো রাফাহ ক্রসিং দিয়ে উপত্যকায় প্রবেশ করার আগে ইসরাইলে পাঠানো হচ্ছে। ইহুদিবাদী পরিদর্শকরা সেগুলো পরীক্ষা করে সবুজ সংকেত দেয়ার পরই কেবল ট্রাকগুলো গাজায় প্রবেশ করার অনুমতি পাচ্ছে। গতকাল (শুক্রবার) মানবিক ত্রাণের একটি ট্রাকে হামাস পরিচালিত ভূগর্ভস্থ টানেলগুলোর জন্য অক্সিজেন বক্স খুঁজে পায় ইসরাইলি পরিদর্শকরা। তারা সেসব বক্স নামিয়ে রেখে ট্রাকটিকে গাজায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। মিশর কর্তৃপক্ষ ইসরাইলি পরিদর্শকদের নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে।