ইসলামী ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপসহ পৃথক চারটি প্রতিষ্ঠানের নামে ৩৪ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার ঘটনায় অর্থপাচার হয়েছে কি না, সে বিষয়ে বিএফআইইউ, দুদক ও সিআইডিসহ সংশ্লিষ্টদের অনুসন্ধান করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই ঘটনার জন্য এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানকে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রবিবার (৪ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। অনুসন্ধান শেষে চার মাসের মধ্যে এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেওয়া জন্য বলা হয়েছে সংশ্লিষ্টদের।
এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ লোপাটের ঘটনায় কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং তাদের বিরুদ্ধে কেন যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
গত ২৯ নভেম্বর একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত হয় এস আলম গ্রুপ একাই ইসলামী ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার কোটি ঋণ নিয়েছে- এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনা হয়।
এর আগে ২৪ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ইসলামী ব্যাংকে ‘ভয়ংকর নভেম্বর’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের প্রথমাংশে বলা হয়, ব্যাংকের নথিপত্রে নাবিল গ্রেইন ক্রপস লিমিটেডের অফিসের ঠিকানা বনানীর বি ব্লকের ২৩ নম্বর সড়কের ৯ নম্বর বাড়ি। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক ভবন। ঋণ পাওয়া মার্টস বিজনেস লিমিটেডের ঠিকানা বনানীর ডি ব্লকের ১৭ নম্বর সড়কের ১৩ নম্বর বাড়ি। সেখানে গিয়ে মিলল রাজশাহীর নাবিল গ্রুপের অফিস। তবে মার্টস বিজনেস লাইন নামে তাদের কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। এভাবেই ভুয়া ঠিকানা ও কাগুজে দুই কোম্পানি খুলে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) থেকে দুই হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে একটি অসাধু চক্র।
সব মিলিয়ে বিভিন্ন উপায়ে ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। আটটি প্রতিষ্ঠানের নামে চলতি বছরেই এ অর্থ নেওয়া হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ তুলে নেওয়া হয় চলতি মাসের ১ থেকে ১৭ নভেম্বর সময়ে। যার পরিমাণ ২ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। এ জন্যই ব্যাংকটির কর্মকর্তারা চলতি মাসকে ‘ভয়ংকর নভেম্বর’ বলে অভিহিত করছেন।
একইভাবে বেসরকারি খাতের সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকেও ২ হাজার ৩২০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে কোম্পানিগুলো। ফলে এ তিন ব্যাংকের কাছে প্রতিষ্ঠানগুলোর সুদসহ দেনা বেড়ে হয়েছে সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। এমন সময়ে এসব অর্থ তুলে নেওয়া হয়, যখন ব্যাংক খাতে ডলার-সংকটের পর টাকার সংকট বড় আলোচনার বিষয়।
এবিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান বাংলাভিশনকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি পত্র-পত্রিকায় লেখা পড়েছি। এনিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তদন্ত করছে। কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।