রাসেল কবির মুরাদ, কলাপাড়া প্রতিনিধি: কলাপাড়ায় লালুয়া ইউপির প্রীতি হায়দার বে-সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা কিডনি রোগে আক্রান্ত রাবেয়া বেগম শিশু কন্যা ফারিয়ার জন্য আরো কিছুদিন বাঁচতে চায় ।
স্বামী আফসার উদ্দিন একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তাদের আছে সাত বছর
বয়সী একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান। স্বামী-সন্তান নিয়ে খুব সুখেই কাটছিলো রাবেয়ার সংসার। কিন্তু দু’টি কিডনি নষ্টের খবরে জীবনের সব সুখ কেড়ে নেয় রাবেয়ার।
ইতিমধ্যে চিকিৎসা ব্যয় মিটাতে গিয়ে সহায় সম্বল হারিয়ে নি:স্ব এ পরিবারটি থাকছে এখন অন্যের বরাদ্দ পাওয়া আবাসনে। নিজের জন্য নয় শিশু সন্তানের জন্য সবসময় চিন্তা করেন তিনি। দু’চোখের চাহনিতে শুধু বেঁচে থাকার আশা। নিজের জন্য না হলেও দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়ুয়া একমাত্র মেয়ে ফারিয়ার জন্য আরো
কিছুদিন বাঁচতে চান কিডনি রোগে আক্রান্ত রাবেয়া বেগম। সপ্তাহে দু’বার ডায়ালাইসিস করে এ পরিবারটি এখন নি:স্ব প্রায়।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে।
ফলে এই শিক্ষক দম্পতির আয়ের পথ হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেছে। বে-সরকারী শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান হলেও স্বামী আফসার উদ্দিন টিউশনি করিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যেই পরিবারের ভরনপোষণ করছিলেন। কিন্তু প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রাইভেট পড়ানোও বন্ধ।
রাবেয়া আক্তারের পিতা মো: রফিকুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান, লালুয়া ইউপির চৌধুরী পাড়া গ্রামে ১০লক্ষ টাকা ব্যয় করে আমি প্রীতি হায়দার বে-সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলাম। নদী ভাঙ্গনে বিদ্যালয়টি যথেষ্ঠ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে
বিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় আমার মেয়ে-জামাই বেকার হয়ে যায়। হঠাৎ করে আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিয়ে যাই।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জানতে পারি আমার মেয়ের দুটি কিডনি বিকল হয়ে গেছে।
এদিকে পায়রা বন্দরের ভূমি অধিগ্রহণের ফলে আমার ভিটা-মাটি সব নিয়ে যায়।
অধিগ্রহণে পাওয়া প্রায় পঁচিশ লক্ষ টাকা মেয়ের চিকিৎসায় ব্যায় করেছি। এখন আমার কাছে আর নগদ কোন অর্থ নেই। এই অবস্থায় মেয়েকে সপ্তাহে দুইবার ডায়ালাইসিস করার মতো টাকা জোগাড় করা আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই কোন সহৃদয় ব্যাক্তি অথবা সরকার যদি আমার অসহায় পরিবারের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়ায় তাহলে আমার মেয়েটা বেঁচে যেতো।
রাবেয়া আক্তারের স্বামী আফসার উদ্দিন এ প্রতিনিধিকে বলেন, শিক্ষক হিসেবে টিউশনি করিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে স্ত্রী মেয়েকে নিয়ে সুখেই ছিলাম। করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় টিউশনি নেই। স্ত্রীর অসুস্থতায় নিজের সহায়সম্বল হারিয়ে
দিন মজুরের কাজ করে মানুষের কাছে হাত পেতে সংসার চালাতে হয়। কোনদিন কাজ
পাই, কোন দিন পাইনা। ডায়ালাইসিস, ঔষধ কিনতে কষ্ট হয়। কেঁদে কেঁদে বলেন, একটা চৌকি কিনে অসুস্থ স্ত্রীকে শোয়াতে পারিনা। আমার মেয়েটি এতিম হয়ে যাবে ভাবতে খুব কষ্ট হচ্ছে। তার দুটি কিডনিই শতকরা নব্বই শতাংশের বেশি বিকল হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আমি সমাজের বিত্তবান শ্রেণির মানুষের কাছে
সাহায্য প্রার্থনা করছি।
কিডনি রোগী রাবেয়া আক্তার কষ্ট করে কান্নাভেজা কন্ঠে এ প্রতিবেদককে বলেন,
নিজেদেও সংসার চালানোর মতো কোন ব্যবস্থা নাই। ডায়ালাইসিস করে আমার বেঁচে থাকা লাগে। বিয়ের পর আমার স্বামীকে পাঁচ লক্ষ টাকা খরচ করে সৌদি আরব পাঠানো হয়েছিল। সমস্যার কারণে সেখান থেকে খালি হাতে চলে আসতে হয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম রাকিবুল আহসান
গনমাধ্যমকে জানায়, এটা একটি ব্যয়বহুল চিকিৎসা। এ চিকিৎসায় সে সর্বোচ্চ তারা খুইয়েছেন। ব্যক্তিগত তহবিল থেকে কিছু সাহায্য করার কথা জানান তিনি।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসানাত মো: শহীদুল হক সাংবাদিকদের জানান, আপনার মাধ্যমে মেয়েটির অসুস্থতার কথা জেনেছি। এ ধরনের অসহায় মানুষের পাশে কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসন সবসময় পাশে থেকেছে। রাবেয়ার ব্যাপারেও তার ব্যাতিক্রম হবেনা।
রাবেয়াকে সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা।
আফসার উদ্দিন, হিসাব নম্বর-
২০০১১২১০০০২৪৮০৭, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক, খেপুপাড়া শাখা, পটুয়াখালী।
অথবা, বিকাশ নম্বর ০১৭৩৪-৭৭৩৪৯৪।