গাজার হাসপাতালে অব্যাহত ইযরায়েলি হামলায় অন্তত তিন নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বন্ধ হয়ে গেছে গাজার উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল, আল-শিফার চিকিৎসা ব্যবস্থা।
ইযরায়েলের সামরিক ট্যাঙ্ক ইতোমধ্যে ঘিরে রেখেছে গাজার হাসপাতালগুলো। হাসপাতাল থেকে সবাইকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেও সমরযানে চারপাশ ঘিরে রাখায় আতঙ্কে সময় পার করছেন সেখানে থাকা রোগী ও চিকিৎসাকর্মীরা।
আল-শিফা হাসপাতালের ডিরেক্টর সিএনএনকে জানান, এর আগেও স্বাস্থ্যসেবা দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো ইযরায়েলের হামলার শিকার হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই চলছিল রোগীদের চিকিৎসা। নতুন হামলায় ও শুক্রবার অবরুদ্ধ এলাকার হাসপাতালটি ঘিরে ইযরায়েলের সামরিক তৎপরতা সেখানে অবস্থানকারীদের জীবন বিপন্ন করে তুলেছে।
তিনি বলেছেন, পর্যাপ্ত চিকিৎসা পণ্যের অভাবে ইতোমধ্যে হাসপাতালের আইসিইউতে থাকা তিন নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।
হাসপাতালের বাইরে ইযরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে ভয়াবহ যুদ্ধে জড়িয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। দুই পক্ষের যুদ্ধে হাসপাতালে ব্যাপক ক্ষতির আশংকা করেছেন তিনি।
ইযরায়েলের ডিফেন্স ফোর্স হাসপাতালে হামলার বিষয়ে মন্তব্য না করলেও বেসামরিক নাগরিকদের বারবার ওয়াদি গাজার দক্ষিণে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলছে,হামাস বেসামরিক লোকেদের মধ্যে মিশে গেছে তাই হামাসকে প্রতিহত করতে যেখানে প্রয়োজন সেখানেই হামলা চালানো হবে।
তিন নবজাতকের মৃত্যুতে হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টর জেনারেল মুনির আল বুর্শ শনিবার বলেন, ‘শিফা হাসপাতালে থাকা ৩৬ নবজাতককে চিকিৎসকেরা বাধ্য হয়ে হাতের সাহায্যে তাদের কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দিচ্ছেন। শিশুদের নরম কম্বলে মুড়ে রাখা হয়েছে।’
বুর্শ বলেন, ‘হাসপাতালটি চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে হামাস ও ইযরায়েলি বাহিনী। আনুমানিক ৪০০ রোগী এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং বাস্তুচ্যুত অন্তত ২০ হাজার মানুষ হাসপাতালটির কমপ্লেক্সে আশ্রয় নিয়েছেন।’
হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কিদরা নিজেও শিফা হাসপাতালের কমপ্লেক্সে আটকে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন।
হামলা ও অবরোধের কারণে বন্ধ রয়েছে শিফা হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিট, শিশু বিভাগ।অকার্যকর হয়ে পড়েছে বিভিন্ন হাসপাতালের অক্সিজেন ডিভাইসগুলো।
প্যালেস্টাইনের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি সতর্ক করে এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘জ্বালানি সরবরাহ কমে যাওয়া এবং পর্যাপ্ত সাহায্য না আসায় গাজা সিটির আল-কুদস হাসপাতাল আগামী ৩ ঘন্টার ভেতরে বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এতে অন্তত ৫শ রোগী সেবা বঞ্চিত হবেন এবং আইসিইউতে থাকা রোগী ও ইনকিউবেটরে থাকা নবজাতকেরা প্রাণ হারাবে।’
রামাল্লার প্যালেস্টাইন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, চিকিৎসা সরঞ্জাম, পানি ও জ্বালানির অভাবে বৃহস্পতিবার থেকে গাজার ৩৫টি সচল হাসপাতালের ১৮টিতেই চিকিৎসা সেবা দেয়া বন্ধ হয়ে গেছে।
ইযরায়েলি বাহিনীর পক্ষ থেকে গাজাবাসীকে হাসপাতাল ত্যাগের নির্দেশের পর উত্তর গাজার আল নাসর হাসপাতাল ও আল রান্টিসি পেডিয়াট্রিক হাসপাতালের প্রধান মোস্তফা আল-কাহলুত বলেন, ‘রেড ক্রসকে আমাদেরকে সরিয়ে নেয়ায় সাহায্য করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু হাসপাতালের বাইরে ট্যাঙ্ক দিয়ে আমাদের ঘিরে ফেলা হয়েছে। আমরা যেতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বিদ্যুৎ নেই, রোগীদের জন্য অক্সিজেন, ওষুধ এমনকি পানিও নেই। আমরা জানি না আমাদের ভাগ্যে কি আছে।’
তিনি বলেছেন, উত্তর গাজায় ইযরায়েলি ট্যাংক মোতায়েনের পর অন্তত দুটি হাসপাতালে সেবা দেয়ার জন্য তাকে ডাকা হয়েছিল। ইযরায়েলি বাহিনী হাসপাতাল ঘিরে রাখায় তিনি হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার অপারগতার কথা জানান।
ফেসবুকে এক বিবৃতিতে আল আওদা হাসপাতাল জানায়, আল আওদা এবং ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের কাছাকাছি লক্ষ্য করে ইযরায়েলি বাহিনী হামলা চালালে অন্তত ১০ জন কর্মী আহত হয়েছেন। অবকাঠামোয় হামলা করার সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে নয়টি গাড়ি। এছাড়াও মেডিকস বলছে, তাদের হাসপাতাল কমপ্লেক্সে আর্টিলারি হামলা চালানো হয়েছে।
অন্য এক বিবৃতিতে প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি বলেছে, ইযরায়েলের স্থল অভিযান ও বিমান হামলায় হাসপাতালে থাকা তাদের একজন সেচ্ছাসেবক আহত হয়েছেন এবং দুটি অ্যাম্বুলেন্স হামলায় অকেজো হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত অ্যাম্বুলেন্স দুটির উইন্ডস্ক্রিনের কাচ পার্কিং লটে পড়ে আছে এমন ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করে তারা।