রাজধানীর কাছেই মুন্সীগঞ্জের ‘বিক্রমপুরে চালু হওয়া কর্ষণীয় আধুনিক রেস্তোরাঁ ‘প্রজেক্ট হিলশা’। এ যেন ইলিশের পেটের ভেতর বসেই ইলিশ খাওয়া।
ইলিশের আদলে তৈরি রেস্টুরেন্টটি চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভ্রমণ ও ভোজনপ্রিয়দের কাছে আগ্রহের জায়গা হয়ে উঠেছে। অনেকেরই মাওয়া ঘাটে যাওয়া হয় পদ্মা’র তাজা ইলিশ খেতে। মাওয়া ঘাটে যাওয়ার পথেই শিমুলিয়া ঘাটের কাছাকাছি গেলে এবার ইলিশ মাছের মতো দেখতে রেস্টুরেন্টটি চমকে দেবে আপনাকে। তবে এ চমকের মধ্যেই ইলিশ ভোজি প্রেমীদের গা গুলানো একটি চকম খবর হলো, টয়লেট করে সাবান ব্যবহার করেন না প্রজেক্ট হিলশার বাবুর্চি ও স্টাফরা! এমনকি বাবুর্চি ও স্টাফদের জন্য আলাদা ওয়াশরুমে দেখা মিলে নি কোন সাবানের চেহারা। এমনি দৃশ্য দেখা গেলো গত বুধবার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সরজমিন অভিযানে।
প্রজেক্ট হিলসা’ রেস্তোরাঁ ব্যতিক্রমী স্থাপত্য নকশার কারণে সবার নজরে আসলেও খাবারের মানের চেয়ে দাম বেশি, সার্ভিস চার্জ নিয়ে অসন্তোষসহ নানা অভিযোগ রয়েছে ‘প্রজেক্ট হিলসা’ রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে।
বুধবার (১৫ জুন) রেস্তোরাঁটিতে অভিযান চালিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তাদের অভিযানেও উঠে এসেছে রেস্তোরাঁটির গুরুতর অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার চিত্র।
জনাব শফিকুল ইসলাম পেশায় একজন হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী। পরিবার নিয়ে ইলিশ খেতে এসেছিলেন প্রজেক্ট হিলশাতে। অপরাজিত বাংলার প্রতিবেদকের সাথে আলাপচারিতায় তিনি জানান, “যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠা এ রেস্তোরাতে আসার জন্য ছেলে মেয়েরা অনেকদিন থেকেই বায়না ধরছিলো। সময় সুযোগ না থাকার কারনে আজকেই আসলাম। এসেই দেখি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান চলছে। এর মধ্যেই জানতে পারলাম বাবুর্চি ও স্টাফরা টয়লেট ব্যবহার করে সাবান ব্যবহার করেন না। অত্যন্ত অরুচিকর একটি তথ্য। এটা জানার পর আর রুচি হচ্ছে না এখানের কিছু খেতে। তাই প্রজেক্টের বাহিরটা ঘুরে ফিরে বাসায় ফিরে যাবো।”
জনাব শফিকুল ইসলামের স্ত্রী পেশায় ব্যাংকারজানান, “এমন একটি চমৎকার পরিবেশ ও সুন্দর নির্মান শৈল্যে তৈরী রেস্তোরার আভ্যন্তরীন ব্যবস্থা খুবই নাজুক। খাবারের দাম আকাশচুম্বি তা নাহয় বাদই দিলাম কিন্তু যারা খাবার রান্না করছেন এবং যারা কাস্টমারদের খাবার সার্ভ করছেন তারা মারাত্মক ধরনের অপষ্কিার। এমন কোভিড মহামারির সময় এটা খুবই দুঃজনক।”
এদিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অপরাজিত বাংলাকে জানান, রেস্তোরাঁটির বাবুর্চি ও কর্মচারীদের টয়লেটের পর সাবান ব্যবহার না করার প্রমাণসহ বেশকিছু ত্রুটি পাওয়া গেছে।
জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আসিফ আল আজাদ বলেন, ‘অভিযানে রেস্তোরাঁটিতে অতিথিদের টয়লেটে সাবানের ব্যবস্থা থাকলেও বাবুর্চি ও স্টাফদের টয়লেটে কোনো সাবান পাওয়া যায়নি। টয়লেটের পর বাবুর্চিরা সাবান ব্যবহার করছিলেন না। শুধু পানি দিয়েই হাত পরিষ্কার করছিলেন। কিচেন পরিষ্কার থাকলেও ফ্রিজে কাঁচামাছ-মাংসের সঙ্গে রান্না করা খাবারও মজুত রাখা হয়েছিল, যা ঠিক নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘রেস্তোরাঁটিতে বিএসটিআইয়ের অনুমোদনহীন বিপুল পরিমাণের সস ও নুডলসও পাওয়া গেছে। এসব পণ্যের ক্ষেত্রে অবশ্যই বিএসটিআইয়ের অনুমোদন লাগবে। এক-দেড় হাজার মানুষের জন্য রান্না করার মতো খাবার মজুত ছিল। অর্থাৎ, এসব খাবারের মধ্যে বিএসটিআইয়ের অনুমোদনহীন সস, নুডলস ছিল।’
রেস্তোরাঁটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে আসিফ আল আজাদ বলেন, ‘যেহেতু রেস্তোরাঁটি অল্প কিছু দিন আগে চালু হয়েছে, তাই আইনকানুন সম্পর্কে ভালোভাবে জানে না। তাদেরকে নিয়ম-কানুন জানানো হয়েছে। প্রথমবারের মতো তাদের সতর্ক করা হয়েছে। পরবর্তীতে নিয়ম অমান্য করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের বদৌলতে অল্পদিনেই পরিচিতি পেয়েছে ইলিশ মাছের আদলে নির্মিত ‘প্রজেক্ট হিলসা’ রেস্তোরাঁ। স্থাপনা নকশার কারণে রেস্তোরাঁটি আলোচনায় থাকলেও সমালোচনা-অভিযোগ যেন পিছু ছাড়ছে না।